ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

হবিগঞ্জে শীত বাড়ছে, গরম কাপড় বেচাকেনা সরগরম

মো. মামুন চৌধুরী, হবিগঞ্জ  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০৪, ১৩ নভেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৩:১২, ১৩ নভেম্বর ২০২০
হবিগঞ্জে শীত বাড়ছে, গরম কাপড় বেচাকেনা সরগরম

জেলা শহরের পুরনো বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দোকানে চলছে শীতবস্ত্র কেনাবেচা (ছবি: রাইজিংবিডি)

পাহাড়ে শীতের তীব্রতা বেড়েই চলেছে। শীতবস্ত্রের অভাবে পাহাড়িদের মাঝে দেখা দিয়েছে দুর্ভোগ। এদিকে, হবিগঞ্জে শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গরম কাপড় বিক্রির ধুম পড়েছে। 

পাহাড়ে জেঁকে বসেছে শীত: কার্তিক শেষ হতে চলেছে। সেই সঙ্গে হবিগঞ্জে পাহাড়ে শীতের তীব্রতা বেড়েই চলেছে। 

জানা গেছে, জেলার বিশাল এলাকাজুড়ে রয়েছে পাহাড়। শত শত বছর ধরে পাহাড়ে বসবাস করে আসছেন নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায় ও চা-শ্রমিক এবং ছিন্নমূল লোকজন। পাহাড়ি বাসিন্দারা পতিত জমিতে লেবু, কাঁঠাল, সবজি, কমলা, মাল্টাসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করে অর্থ উপার্জন করেন। আর পাহাড়ের চা বাগানের বাসিন্দারা চা-পাতা উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত থেকে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

পরিবেশপ্রেমিক ও বিরামচর যুবকল্যাণ সংঘের সাধারণ সম্পাদক আব্বাস উদ্দিন তালুকদার বলেন, গ্রামগঞ্জে শীতের প্রকোপ যেমন, তার চেয়ে পাহাড়ে বেশিা শীত থাকায় পাহাড়িদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এতে করে তারা ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হন। পাহাড়িরা এখন শীতবস্ত্রের অপেক্ষায়।  দ্রুত তাদের চাই শীতবস্ত্র।

একইভাবে জেলায় পাহাড়কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা চা-বাগানে দরিদ্র শ্রমিকরাও শীত নিবারণে শীতবস্ত্র কামনা করছেন। কিন্তু তারাও সময়মত শীতবস্ত্র পাচ্ছেন না। 

জেলার চুনারুঘাট উপজেলার কালেঙ্গা পাহাড়ের কৃষ্ণছড়া পুঞ্জির হেডম্যান উমেশ খাড়িয়া ও কালিয়াবাড়ি পুঞ্জির হেডম্যান বিনয় দেববর্মা বলেন, পাহাড়ে শীত বেড়ে চলেছে। এ অবস্থায় শীতবস্ত্রের খুবই অভাব। এ কারণে শিশু, নারী ও বয়স্করা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

তারা জানান, কালিয়াবাড়ি ছাড়াও চুনারুঘাট, বাহুবল ও মাধবপুর উপজেলার পাহাড়ি এলাকার বিভিন্ন স্থানে রয়েছে নৃ-গোষ্ঠী পুঞ্জি। এসব পুঞ্জিতেও বসবাসকারী দরিদ্রদের জন্য শীতবস্ত্র প্রয়োজন।

দেউন্দি বাগানের বাসিন্দা চা শ্রমিক ভাসানী চৌহান ও কমলা গোয়ালা বলেন, প্রচণ্ড শীত। এ কারণে শরীরটা ভালো না। এই শীতে সকালে কাজে যেতে হচ্ছে। এর মধ্যে আবার শীতবস্ত্র নেই। আমার মতো অনেক শ্রমিকের শীতবস্ত্রের অভাব রয়েছে। 

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন জেলা শাখার সভাপতি হারুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন, শীত শুরু হয়েছে। শহরে শীতের তীব্রতা তেমন না থাকলেও পাহাড়ে শীতের তীব্রতা বেড়েই চলেছে। তাদের কাছে দ্রুত শীতবস্ত্র পৌঁছাতে হবে। শুধু সরকারিভাবে নয় সামাজিক সংগঠন ও ব্যক্তি উদ্যোগে শীতবস্ত্র নিয়ে দরিদ্রদের পাশে দাঁড়াতে হবে।

শীতবস্ত্রের অপেক্ষায় হবিগঞ্জে পাহাড়ে শিশুরা

হবিগঞ্জ শহরের বাসিন্দা শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) আজীবন সদস্য ড. জহিরুল হক শাকিল বলেন, বর্তমানে করোনাভাইরাসের প্রভাব আছে। এ সময় গরম কাপড় প্রয়োজন। সময়মত শীতবস্ত্র পাহাড়িদের কাছে পৌঁছাতে হবে। 

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, সরকারিভাবে দরিদ্র শীতার্ত লোকজনের মাঝে শীতবস্ত্র দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।  বরাদ্দ সাপেক্ষে দ্রুত শীতবস্ত্র পৌঁছানো হবে। 

গরম কাপড় বেচাকেনা সরগরম

হবিগঞ্জে শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গরম কাপড় বিক্রি শুরু হয়েছে। জেলা শহরের পুরনো বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গড়ে ওঠা পুরনো কাপড়ের মার্কেটে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের লোকজন শীতবস্ত্র কিনছেন। বিত্তবানরা যাচ্ছেন বিপণী বিতান ও মার্কেটগুলোতে। এছাড়া উপজেলা শহরের বিভিন্ন হাট বাজারে গরম কাপড় বিক্রির ধুম লেগেছে। 

জেলা শহরে আজমিরীগঞ্জ থেকে শীতবস্ত্র ক্রয় করতে আসা সুজন মিয়া বলেন, শীত শুরু হয়েছে। করোনাভাইরাস আছে। তাই শরীরে ঠান্ডা লাগানো যাবে না।  শীতের শুরুতেই গরম কাপড় কিনছি।  

জেলা শহরের পুরনো কাপড়ের মার্কেটে ভিংরাজ মিয়া বলেন, ৫০০ টাকায় ৩টি শীতের কাপড় কিনেছি। দেউন্দি চা বাগানের বাসিন্দা প্রতীক থিয়েটার সভাপতি সুনীল বিশ্বাস বলেন, বাগানে শীত জেঁকে বসেছে। 

বিক্রেতারা ফজলু মিয়া বলেন, শীতের কাপড় বিক্রি শুরু হয়েছে। তবে পুরোদমে বিক্রি শুরু হতে আরও ১৫ দিন লেগে যাবে। 

হবিগঞ্জ/সাইফ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়