ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

অ‌্যাসাইনমেন্টের নামে ‘পীড়ন’, বিপাকে অভিভাবকরা

কাওছার আহমেদ, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:০৩, ১৩ নভেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৭:০৫, ১৩ নভেম্বর ২০২০
অ‌্যাসাইনমেন্টের নামে ‘পীড়ন’, বিপাকে অভিভাবকরা

টাঙ্গাইলে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অ্যাসাইন্টমেন্টের জন্য টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। অভিভাবকরা বলছেন, তাদের জিম্মি করে টাকা আদায় করা হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সরকারি নীতিমালার তোয়াক্কা করছে না। পরীক্ষার ফি-মাসিক বেতনের পাশাপাশি অ্যাসাইন্টমেন্টেরও টাকা নিলেও প্রতিষ্ঠানগুলো কোনো রশিদ দিচ্ছে না।  ফলে, করোনাকালে টাকার চাপ দেওয়ায় তাদের ‘নিপীড়ন’ হয়ে উঠেছে এই অ‌্যাসাইনমেন্ট। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টাঙ্গাইলে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫০৪।  এরমধ‌্যে কালিহাতী উপজেলার রামপুর উচ্চ বিদ্যালয়, বাসাইল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, বাসাইল শহীদ ক্যাডেট অ‌্যাকাডেমি অ্যাসাইন্টমেন্টের জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে।  অ‌্যাসাইনমেন্টের জন‌্য টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শহরের পুলিশ লাইন্স আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, বিবেকানন্দ হাইস্কুল অ‌্যান্ড কলেজ, টাঙ্গাইল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, শহীদ মিজানুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়, শহীদ জাহাঙ্গীর উচ্চ বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধেও। এই অভিযোগের বাইরে নেই ধরেরবাড়ী মুসলিম হাইস্কুল অ‌্যান্ড কলেজ, গালা আহসান উল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়, ছোট বাসালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, রসুলপুর বাছিরন নেছা উচ্চ বিদ্যালয়, কাবিলাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়, গোপালপুর হোমল্যান্ড স্কুল অ‌্যান্ড কলেজ, দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়।   

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, অ্যাসাইনমেন্টের জন্য শিক্ষার্থী প্রতি ২০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে।  এছাড়া, মাসিক বেতন ও পরীক্ষার ফি বাবত নেওয়া হয়েছে আরও দেড় হাজার টাকা। 

আশিকুর রহমান নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘শিক্ষকরা অ্যাসাইনমেন্টের টাকা, পরীক্ষার ফি ও মাসিক বেতন নিচ্ছেন। জানতে চাইলে শিক্ষকরা অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার অজুহাত দেন।  তবে, গ্রাম অঞ্চলের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরই পরিবারে স্মার্ট ফোন নেই। তাই তারা অনলাইনে ক্লাসও করতে পারেনি।’ তাই টাকা ফেরতের দাবি জানান তিনি। 

রামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. কামরুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘শিক্ষক সমিতি থেকে নির্দেশনা পাওয়ার পর টাকা নেওয়া হয়েছে। টাকা স্কুল ফান্ডে জমা করা হবে।’

বাসাইল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির একাধিক ছাত্রী জানায়, শিক্ষার্থী প্রতি অ্যাসাইনমেন্টের ২০০ টাকা এবং পরীক্ষার ফি ও মাসিক বেতন দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে।  শিক্ষকরা চাপ দিয়ে এই টাকা আদায় করছেন। 

এই বিষয়ে বাসাইল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক কামরুজ্জামান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোনো ধরনের টাকা নেওয়া হচ্ছে না।’

অভিভাবকদের অভিযোগ, অ্যাসাইনমেন্ট, পরীক্ষার ফি ও মাসিক বেতনসহ শিক্ষার্থী প্রতি চার থেকে ৬ হাজার টাকা নিচ্ছে বাসাইল শহীদ ক্যাডেট অ‌্যাকাডেমি। টাকা দিতে দেরি হলে ফোন করে তাগিদ দিচ্ছেন শিক্ষকরা।’

অভিযোগের বিষয়ে শহীদ ক্যাডেট অ‌্যাকাডেমির পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘শিক্ষার্থী প্রতি অ্যাসাইনমেন্ট, মাসিক বেতন ও পরীক্ষা ফি বাবদ সাড়ে তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে।’ তবে সাংবাদিকের পরিচয় পেয়ে তিনি বলেন, ‘কোনো টাকা নেওয়া হচ্ছে না।’

পুলিশ লাইন্স উচ্চ বিদ্যালয়ের অভিভাবক মো. লাভু মিয়া বলেন, ‘স্কুল বন্ধ থাকলেও শিক্ষকরা নানা কৌশলে অভিভাবকদের কাছ থেকে জিম্মি করে টাকা আদায় করছে।  ৯ম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর কাছ ৬ হাজার টাকা দিয়েছি।  টাকা না দিতে চাইলে তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন।’ 

পুলিশ লাইন্স আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল কাদের বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১২ মাসের টাকা আদায় করা হচ্ছে।’
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি টাঙ্গাইল জেলা শাখার সভাপতি শামীম আল মামুন জুয়েল বলেন, ‘বিভিন্ন বিদ্যালয়ে অর্ধেক মাসের বেতন নেওয়া হচ্ছে। সেই বিষয় জানি। তবে, পরীক্ষার ফি ও অ্যাসাইনমেন্টের কোনো টাকা নেওয়া হচ্ছে কি না, জানি না।’

বাসাইল উপজেলা শিক্ষা অফিসার বাবুল হাসান বলেন, ‘বিদ্যালয়গুলোকে অ্যাসাইনমেন্টের টাকা, পরীক্ষার ফি ও মাসিক বেতন না নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।  কেউ যদি নিয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো। তারা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।’

টাঙ্গাইল জেলা শিক্ষা অফিসার লায়লা খানম বলেন, ‘করোনার মধ্যে পরীক্ষার ফি, অ্যাসাইমেন্ট ও মাসিক বেতন নেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। কেউ যদি নিয়ে থাকেন, তাহলে ঠিক করছেন না।’ লিখিত অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।

/এনই

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়