ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

যে গ্রামে ভোর হয় পাখির কিচিরমিচিরে

শামীম কাদির  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:২৯, ১৬ নভেম্বর ২০২০   আপডেট: ১২:০৩, ১৬ নভেম্বর ২০২০

পাখির গ্রাম কানাইপুকুর। এই গ্রামে ভোর হয় পাখির কিচিরমিচির শব্দে। প্রতিটি সন্ধ‌্যাও নামে পাখির এমন কলতানে। দূর থেকে দেখলে মনে হয়, গ্রামের গাছে গাছে যেন থোকায় থোকায় পাখিফুল ফুটে আছে।

বলছিলাম জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলা শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে আলমপুর ইউনিয়নের কানাইপুকুর গ্রামের কথা। সরেজমিনে এই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়,  গ্রামের আব্দুস সামাদ মণ্ডল ও সোবহান মণ্ডলের পুকুরের শতাধিক গাছে শামুক খৈলসহ ছয় প্রজাতির হাজার হাজার পাখি বাসা বেঁধে আছে। প্রতিদিন পড়ন্ত বিকেলে পাখিগুলো এসে আশ্রয় নেয় মণ্ডল পুকুরের গাছগুলোতে।

শামুখ খৈল,শামুক ভাঙা, হাইতোলা মুখ এসব নামে পরিচিত পাখিগুলো। গ্রামের পার্শ্ববর্তী খাল বিল আর ফসলের মাঠ থেকে পোকা মাকড় ও শামুক ঝিনুক খেয়ে জীবন বাঁচে পাখিগুলোর। নিরাপদ আশ্রয় পেয়ে বাসা বেঁধে প্রজনন থেকে শুরু করে ডিম, বাচ্চা, প্রাপ্ত বয়স্ককাল সবকিছু এখানেই তারা সম্পন্ন করে। ফলে দিন দিন  বৃদ্ধি পাচ্ছে এদের সংখ্যাও।

প্রকৃতির অপরূপ খেয়ালে এখানে এক যুগ ধরে বাসা বেঁধে আছে এসব শামুক খৈল পাখি। সারাক্ষণ চলে ওদের ডানা ঝাপটানো। কেউ বা উড়ে যাচ্ছে খাবার সংগ্রহ করতে। আবার কেউ খাবার মুখে করে নিয়ে এসে তুলে দিচ্ছে বাচ্চার মুখে। সারাদিন চলে তাদের এমন কর্মযজ্ঞ। সন্ধ্যায় পুরো পুকুর মুখরিত হয়ে ওঠে পাখির কল কাকলিতে। নির্বিঘ্নে রাত কাটিয়ে ভোর হলেই উড়ে যায়। দিনশেষে আবারও তারা নীড়ে ফিরে আসে।

শামুকখৈল পাখি দেখতে আসা বগুড়া শহরের কাপড় ব্যবসায়ী এরফান আলী বলেন, ‘এমন সুন্দর দৃশ্য বর্তমান সময়ে পাওয়া বড় কঠিন। সকাল ও সন্ধ্যায় হাজারও পাখির কলকাকলিতে মুখরিত এই শব্দ খুবই আনন্দদায়ক। আমার খুব ভালো লাগছে।’

পুকুরের মালিক আব্দুস সামাদ ও তার ছোট ভাই সোবহান বলেন, ‘পাখিগুলোকে আমরা আগলে রেখেছি। গাছের ফলমূল আমাদের আর হয় না। পুকুরে মাছও ভালো হয় না। কারণ পুকুরের চারদিকে গাছ-গাছড়ায় জঙ্গল হয়ে গেছে। এরপরও পাখিগুলোর প্রতি মায়া আর ভালোবাসার কারণে আমরা ওদের কিছু বলি না। মনেহয় যেন ওরা আমাদের পরিবারেরই সদস‌্য।’

কানাইপুকুর গ্রামের কলেজ পড়ুয়া আল আমিন বলেন,  ‘পাখি সব করে রব— কবিতার এ লাইনের বাস্তবচিত্র দেখা যায় এখানে। প্রতিদিন বিকেল হলেই ওই পুকুরের প্রায় শতাধিক গাছে শামুকখৈল ছাড়াও নানা জাতের অসংখ্য পাখি এসে আশ্রয় নেয়।  আমাদের খুব ভালো লাগে ওদের। কী  যেন মায়া আছে এসব পাখির মধ‌্যে।’

ক্ষেতলাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ.এফ.এম আবু সুফিয়ান বলেন, ‘পাখিগুলোকে যাতে কেউ না মারে, সেদিকে খেয়াল রাখতে আমরা এর মধ্যেই এলাকার সচেতন মহলকে অনুরোধ করেছি। এগুলো আমাদের দেশের সম্পদ। এগুলো সকলের চেষ্টায় সংরক্ষণ করতে হবে।’

প্রশাসনের পাশাপাশি উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে শুধু নিরাপত্তা নয়, পাখি কলোনির সার্বিক দেখভাল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রশাসনের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। 

জয়পুরহাট/বুলাকী

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়