ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ভুতুড়ে সিলেট নগর

আব্দুল্লাহ আল নোমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২৩:৪৬, ১৭ নভেম্বর ২০২০   আপডেট: ০৯:১৮, ১৮ নভেম্বর ২০২০
ভুতুড়ে সিলেট নগর

সিলেট শহরের কুমারগাঁওয়ে বিদ্যুতের ১৩৩/৩২ গ্রিড উপকেন্দ্রে অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে বিদ্যুতহীন হয়ে পড়েছে সিলেট শহর ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকা।

রাতের বেলায়ও বিদ্যুত সরবরাহ স্বাভাবিক না হওয়াতে এসব এলাকা অন্ধকারে ডুবে রয়েছে।

এদিকে ঘটনার তদন্তে চার সদস্যের কমিটি গঠন করেছে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিডেট (পিজিসিবি)। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (ট্রান্সমিশন ২)-এর প্রধান প্রকৌশলী সাইফুল হককে আহ্বায়ক করে গঠিত এ কমিটিকে আগামী তিনদিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বি এম মিজানুর রহমান, মোহাম্মদ ফয়জুল কবির ও পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (শ্রীমঙ্গল) নির্বাহী প্রকৌশলী আব্বাস উদ্দিন।

পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক মো. মাসুম আলম বকসী সংবাদমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বাংলাদেশ পাওয়ার গ্রিড সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিকল্প উপায়ে ইতোমধ্যে সুনামগঞ্জ জেলা বিদ্যুত সরবরাহ স্বাভাবিক করা হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের কারণে বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া সিলেটের এলাকাগুলোতে ২৪ ঘণ্টার ভেতরে সরবরাহ দিতে দ্রুত কাজ চলছে।

এদিকে দীর্ঘ সময় ধরে বিদ্যুত না থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন জনসাধারণ। ইতোমধ্যে পানির সংকট দেখা দিয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। শেষ হয়ে এসেছে ব্যাকআপ লাইট কিংবা পাওয়ার ব্যাংকের চার্জও। চাহিদা বেড়ে যাওয়াতে বেশি টাকা দিয়েও দোকানে মিলছে না মোমবাতি।

বিদ্যুতহীন থাকার কারণে শহরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোও বন্ধ হয়েছে আগে। আর সড়ক বাতি বন্ধ থাকায় পুরো নগরে ভূতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে।

নগরের কালিবাড়ী এলাকার বাসিন্দা কানন চন্দ বলেন, ‘দুপুর থেকে বিদ্যুত নেই। তার বাসার পানি শেষ হয়েছে সন্ধ্যায়।  দীর্ঘ সময় ধরে রেফ্রিজারেটরও বন্ধ রয়েছে; ফলে নষ্ট হচ্ছে মাছ, মাংসসহ পচনশীল দ্রব্যসামগ্রী। এছাড়া রাত সাড়ে ৮টার পর থেকে তাদের ঘরে কোন আলো জ্বলছে না বলেও জানান তিনি।’

দাঁড়িয়াপাড়ার বাসিন্দা এইচ এম শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘পুরো এলাকা অন্ধকার। তার বাসায় পানি নেই। মোমবাতিও শেষ হয়ে গেছে। মোবাইল ফোনের চার্জও প্রায় শেষ হয়ে আসছে। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় তারা অন্ধকারেই রাত কাটাচ্ছেন বলেও জানালেন।’

হাওয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা ইমরান বলেন, ‘তাদের বাসায় জেনারেটরের মাধ্যমে বিকল্প ব্যবস্থা চালু ছিল। তবে দীর্ঘক্ষণ জেনারেটর চালানো সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে এখন তারা পুরোটাই অন্ধকারে বসে আছেন। আর মেইন লাইনে বিদ্যুত না থাকায় পানি উঠানো সম্ভব হয়নি ট্যাংকিতে।’

মদনীবাগ এলাকার বাসিন্দা শরীফ এহসানুল হক বলেন, ‘তাদের ঘরের সব ব্যাকআপ লাইট বন্ধ হয়ে গেছে। মোমবাতিও শেষ; পাড়ার দোকানেও মোমবাতি পাননি। শেষ ভরসা মোবাইল ফোনের চার্জও শেষ হয়ে আসতেছে। এ কারণে সবাই অন্ধকারের মধ্যেই ঘরে বসে রয়েছেন।’

সিলেট ট্যুরিজম ক্লাবের সভাপতি ও সিলেট বাংলা টি শপের সত্ত্বাধিকারী হুমায়ুন কবির লিটন বলেন, ‘শেখঘাট জিতু মিয়া পয়েন্ট এলাকায় তার টি শপের অবস্থান। প্রতিদিন রাত ১০টা পর্যন্ত সেখানে লোকজনের সমাগম থাকে। তবে আজ সাতটার পর থেকে পুরো এলাকা অন্ধকার। সড়ক বাতিও জ্বলছে না। এ কারণে তিনি ৮টার দিকে দোকান বন্ধ করে চলে এসেছেন।

মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাংলাদেশ পাওয়ার গ্রিড ১৩২/৩৩ কেভি এর কুমারগাঁও বিদ্যুতকেন্দ্রে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ৫টি ইউনিট চেষ্টা চালিয়ে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুনে দুটি ট্রান্সফরমার পুড়ে যায়।

এরপর থেকে সিলেট শহর ও আশাপাশের এলাকা এবং সুনামগঞ্জে বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ হয়ে পড়ে। অবশ্য সন্ধ্যা ৭টার দিকে সুনামগঞ্জ জেলায় বিদ্যুত সরবরাহ সচল হয়।

বাংলাদেশ পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি (পিজিসিবি) সিলেটের ইনচার্জ মোস্তাকিম বিল্লাহ জানান, সন্ধ্যার পর সুনামগঞ্জ ও ছাতকে বিকল্প ব্যবস্থায় ফেঞ্চুগঞ্জ গ্রিড উপকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। সিলেট নগর ও আশপাশের এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ কখন স্বাভাবিক হবে, এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে দুইদিনের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত সকল এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ দেয়ার চেষ্টা করা হবে।’

নোমান/নাসিম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়