ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

হাসিমনগরে নারী শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে যে স্কুল

মো. মামুন চৌধুরী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৪৫, ২০ নভেম্বর ২০২০   আপডেট: ০৯:৪৮, ২০ নভেম্বর ২০২০
হাসিমনগরে নারী শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে যে স্কুল

হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা হাসিমনগর। এখানে নারী শিক্ষার অবস্থা ছিল খুবই নাজুক। উপজেলা থেকে ১০-১২ কিলোমিটার দূরের এই গ্রামটি এখন নারী শিক্ষার আলোয় আলোকিত।

আর এই আলো ছড়াচ্ছে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। নারী শিক্ষার দুরাবস্থা দূর করতে এগিয়ে আসেন স্থানীয় সমাজসেবক এমএ হাসিম মহালদার। নারী শিক্ষায় তার প্রতিষ্ঠিত স্কুলটি এখন সরকারি হয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর অল্প দিনেই গ্রামের ঘরে ঘরে সুশিক্ষার বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে স্কুলটি। 

২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত স্কুলটি নিয়ে গর্বিত প্রতিষ্ঠাতা ও জমিদাতা এমএ হাসিম মহালদার বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকে ভালবাসি। তাদের স্মৃতিকে অম্লান করে রাখতে প্রথমে স্বেচ্ছায় নিজের ৪৬ শতক জমি দান করি। পরে আরো ৬ শতক জমির প্রয়োজন হয়। তাৎক্ষণিক নিজ বসত ভিটা থেকে আরো ৬ শতক জমিও দিয়ে দেই। 

তিনি বলেন, মোট ৫০ শতক জমিতে পুরোদমে শুরু হয় স্কুলের পাঠদান। একই সঙ্গে একটি চক্র স্কুলের কার্যক্রমে বাধা হয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। এখানে আমি আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে স্কুলের কার্যক্রমকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করি। আমার সে চেষ্টা ও স্বপ্ন আজ সফল। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে দেশের অন্যান্য স্কুলের সঙ্গে স্কুলটিকেও সরকারিকরণ করা হয়েছে। হাসিমনগরের মেয়েরা এখন সরকারি স্কুলে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে।

বর্তমানে স্কুলে প্রায় ৩৫০ জন নারী শিক্ষার্থীর মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছেন ১৪ জন শিক্ষক। রয়েছেন ৫জন কর্মচারী।

হাসিম মহালদার বলেন, শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতি এগিয়ে যেতে পারে না। তাই নিজের জমিটুকু দান করে এ স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছি।  সেই সঙ্গে স্কুলে আসতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দিচ্ছি। এ স্কুলটি হওয়ায় গ্রামের শত শত শিক্ষার্থী উপকৃত হয়েছে।  আশা করছি একদিন এ বিদ্যালয়টি দেশজুড়ে সুনাম অর্জন করবে। 

এ স্কুলের শিক্ষার্থী মুন্নী আক্তার ও সাবিনা আক্তার জানালেন, এ স্কুলটি প্রতিষ্ঠা হওয়ায় তাদের শিক্ষার জন্য বহুদূর যেতে হয়নি।  গ্রামে বসে লেখাপড়া করা সম্ভব হচ্ছে। 

এই গ্রামেরই শিক্ষার্থীদের অভিভাবক শামছুল হক ও তাজুল ইসলাম- তারাও একই মন্তব্য করলেন, সন্তানদের শিক্ষা নিয়ে চিন্তা করতে হচ্ছে না। বাড়ির পাশেই সরকারি স্কুল আছে, সন্তানরা নিরাপদে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারছে।

শিক্ষানুরাগী সমাজসেবক সোহেল আহম্মদ কুটি বলেন, ইচ্ছায়ই উপায় বের হয়। যার প্রমাণ এমএ হাসিম মহালদার। সাদা মনের  মানুষ বলেই তিনি নিজের প্রায় সবটুকু জমি দান করে স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন। অল্প দিনেই এ স্কুলটি দ্রুত এগিয়েছে। স্কুলও সরকারি হয়েছে। সমাজে এ ধরণের সাদা মনের মানুষের প্রয়োজন। 

স্কুলের প্রধান শিক্ষক তৌহিদুল আলম বলেন, গ্রামের মধ্যে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি হওয়ায় তৃণমূল লোকজনের সন্তানদের জন্য বিরাট উপকার হয়েছে। এখানে শিক্ষা গ্রহণ করে শিশুরা এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের সাধ্যমতে পাঠদান করাচ্ছি। দিন দিন শিক্ষার্থী সংখ্যা বাড়ছে। গ্রাম শিক্ষার আলোয় আলোকিত হচ্ছে।

হবিগঞ্জ/টিপু

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়