ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

তিন ফসলি জমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়

জাহিদুল হক চন্দন, মানিকগঞ্জ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৪৫, ২০ নভেম্বর ২০২০   আপডেট: ০৯:৫৬, ২০ নভেম্বর ২০২০
তিন ফসলি জমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়

রাজধানীর পাশের জেলা মানিকগঞ্জে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ইটভাটার সংখ্যা। কমছে আবাদি জমি। তিন ফসলি জমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়। যত্রতত্র গড়ে উঠছে ইটভাটা। তবে এসব বিষয়ে প্রশাসন অনেকটা নীরব ভূমিকা পালক করছে।

মানিকগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে, মানিকগঞ্জের সাতটি উপজেলায় ইটভাটার মোট সংখ্যা ১৪৭টি। এর মধ্যে ১৯টি ইটভাটার পরিবেশগত ছাড়পত্র নেই।

সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, তিন ফসলি জমি থেকে জমির উপরিভাগের তিন ফুট মাটি ‘টপ সয়েল’ চলে যাচ্ছে ইটভাটায়। নানা কৌশলে কৃষকের কাছ থেকে এসব মাটি কিনে নিচ্ছে এলাকার অসাধু মাটি ব্যবসায়ীরা। অনেকের জমির ওপর দিয়ে রাস্তা তৈরি করে ভাটায় নেওয়া হচ্ছে এসব মাটি। ফলে ওইসব জামির আবাদও বন্ধ রয়েছে। এতে করে কমছে কৃষি জমির পরিমাণ।

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার হিজলাইন এলাকার মাটি ব্যবসায়ী লুৎফর রহমান বলেন, ‘স্থানীয় কৃষক মান্নানের কাছ থেকে ৮০ শতাংশ জমি থেকে মাটি কিনেছি। সেই জমির মাটি স্থানীয় ভাটায় দিচ্ছি। ওই জমি থেকে আট ফুট মাটি বা আরও গভীর পরিমাণে গর্ত করে মাটি নেওয়া হবে বলে কৃষকের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে।’

এসব বিষয়ে কৃষক মান্নানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে মাটি বিক্রির বিষয়ে কৃষি বা মৎস্য অধিদপ্তর থেকে তিনি কোনো অনুমতি নেননি বলে জানান।

মান্নানের কৃষি জমির পাশের কৃষকেরা জানান, মান্নানের কৃষি জমি থেকে মাটি বিক্রি করায় তাদের আবাদি জমি নিয়ে তারাও বিপাকে রয়েছেন। এছাড়া জমির মাটি নেওয়ার জন্য বড় বড় ট্রাক চলাচলের জন্য অন্যের জমির উপর দিয়ে অস্থায়ীভাবে রাস্তাও নির্মাণ করা হয়েছে। এতে করেও অনেক কৃষি জমির ক্ষতি হচ্ছে। কেউ প্রতিবাদ করলেই মাটি ব্যবসায়ীদের রোষানলে পড়ে হামলা-মামলার শিকার হতে হয়। এ কারণে সবাই নীরবে সবকিছু সহ্য করছে।

জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি বশির রেজা বলেন, ‘করোনা এবং বন্যার কারণে ভাটা ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত। অনেক ভাটায় এখনও পানি নিষ্কাসন না হওয়ায় ইট বানানোর কার্যক্রমও শুরু হয়নি। মানিকগঞ্জের এসব ভাটায় কর্মরত রয়েছে কয়েক হাজার অস্থায়ী শ্রমিক। তবে ফসলি জমির মাটি ইটভাটায় যাওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই।’

ইটভাটার বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশবাদী সংগঠনের কর্মী অ‌্যাডভোকেট দীপক কুমার ঘোষ বলেন, ‘ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় পরিবেশের ওপর বিরুপ প্রভাব পড়ে। ভাটার এক কিলোমিটারের মধ্যে ফলজ গাছ বাড়তে পারে না। এ কারণে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এছাড়াও ভাটার আশপাশের জমি থেকে টপ সয়েল সংগ্রহ করে ইট প্রস্তুত করা হয়। এতে করে ফসলি জমির আবাদ নষ্ট হয়ে খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হয়। এসব পরিবেশ বিনষ্টকারী ইটভাটা বন্ধ করে আধুনিক পদ্ধতির ইটভাটা নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করছি।’

মানিকগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নূর আলম বলেন, ‘মানিকগঞ্জ জেলায় মোট ১৪৭টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে অবৈধ তালিকায় রয়েছে ১৯টি ইটভাটা। এসব ইটভাটার বিষয়ে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক এসএম ফেরদৌস বলেন, ‘কৃষি জমির মাটি বিক্রি ও ভাটায় পাঠানো বন্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মরর্তাদের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এছাড়া চিঠির মাধ্যমে ভাটা মালিকদেরকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে।’

মানিকগঞ্জ/সনি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়