ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

চট্টগ্রামে ৩ শতাধিক ইটভাটায় কাঠ পোড়ানোর মহা আয়োজন 

রেজাউল করিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৫৯, ২০ নভেম্বর ২০২০   আপডেট: ১০:০৬, ২০ নভেম্বর ২০২০
চট্টগ্রামে ৩ শতাধিক ইটভাটায় কাঠ পোড়ানোর মহা আয়োজন 

চট্টগ্রাম জেলার উত্তর ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় ৩ শতাধিক ইটভাটায় কাঠ পোড়ানোর মহা আয়োজন শুরু হয়েছে। শীত মৌসুমের শুরুতে ভাটাগুলোতে ইট তৈরির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।

কোনো কোনো ইট ভাটায় ইট তৈরির কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। এখনো আগুন দেওয়া হয়নি চিমনিতে, ফলে কাঠ পোড়ানো শুরু হয়নি। তবে সরকারি-বেসরকারি বনের কাঠ সংগ্রহ করে ভাটাগুলোতে অবৈধ কাঠের মজুদ গড়ে তোলা হচ্ছে। প্রতিদিন শত শত মিনি ট্রাক, জিপ এবং অন্যান্য বাহনে কাঠ যাচ্ছে ভাটাগুলোতে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, চট্টগ্রাম জেলার উপজেলাগুলোতে ইটভাটার সংখ্যা প্রায় ৪১০টি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ইটভাটা রয়েছে উত্তর চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলায়। এই উপজেলায় ভাটার সংখ্যা প্রায় ১৫০টি।

পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এই উপজেলায় ইটভাটা আছে ৯৬টি। তবে এর মধ্যে প্রশাসনের অনুমতি রয়েছে হাতেগোনা কয়েকটি ইটভাটার। ৯৮ শতাংশ ইটভাটা চলছে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে। শীত মৌসুমে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলাকে ইটভাটার শহর হিসেবেই আখ্যা দিয়ে থাকেন স্থানীয়রা। রাঙ্গুনিয়ার পর সবচেয়ে বেশি ৮০টি ইটভাটা রয়েছে রাউজান উপজেলায়। এরপর ফটিকছড়ি উপজেলায় রয়েছে ৫০টির বেশি ইটভাটা।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের হিসেব মতে, উপজেলার সাতকানিয়ায় ৩৮টি, হাটহাজারীতে ৩৯টি, চন্দনাইশে ৩১টি, লোহাগাড়ায় ১৫টি, আনোয়ারায় ৩টি, বাঁশখালীতে ২টি, সন্ধীপে ৪টি, মিরসরাইয়ে ৮টি, সীতাকুণ্ডে ২টি, বোয়ালখালীতে ৭টি ও পটিয়া উপজেলা ৩টি ইটভাটা রয়েছে যেগুলোর কোনো অনুমোদন নেই প্রশাসনের। রাঙ্গুনিয়া, রাউজান, ফটিকছড়ি, সাতকানিয়া, হাটহাজারী এবং লোহাগাড়া উপজেলার অধিকাংশ ইটভাটা তৈরি হয়েছে পাহাড় কেটে এবং কৃষি জমি ধ্বংস করে। আর এসব ইট ভাটাতে ইট তৈরি হয় বনের কাঠ পুড়িয়ে।

চলতি ইটভাটার মৌসুমে স্থানীয় বনবিভাগকে ম্যানেজ করে ইট ভাটায় কাঠ পোড়ানোর যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে ভাটা মালিকরা। উত্তর ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের ৪ শতাধিক ইটভাটায় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে লাখ লাখ ঘনফুট কাঠ পুড়িয়েই ইট তৈরি হয় বলে স্বীকার করেছে ইট ভাটার মালিকরাও।

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ইটভাটাসমূহের মালিক সমিতির অন্যতম নেতা কামাল চৌধুরী রাইজিংবিডিকে জানান, রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় ইটভাটার সংখ্যা প্রায় দেড় শতাধিক। তবে করোনার মধ্যে অনেক ইটভাটা বন্ধ হয়ে গেছে। উপজেলার রাজানগর ইউনিয়ন, দক্ষিণ রাজানগর এবং ইসলামপুর ইউনিয়নে ইটভাটা আছে ১১৬টি। বাকি ইটভাটাগুলো উপজেলার কোদালা, সরফভাটা, হোসনাবাদসহ কয়েকটি ইউনিয়নে অবস্থিত। এসব ইট ভাটার অধিকাংশেরই অনুমোদন না থাকার কথা স্বীকার করে এই নেতা জানান, বন বিভাগ এবং স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই তাদের ইটভাটা চালাতে হয়। সরকারি বন এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন বনাঞ্চল থেকে কাঠ সংগ্রহ করেই কাঠ পোড়ানো হয় বলে জানান কামাল চৌধুরী।

ফটিকছড়ি উপজেলার ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি ইসমাইল হোসেন রাইজিংবিডিকে জানান, বন বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ইট ভাটায় কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরি করা হয়। এই বিষয়গুলো ওপেন সিক্রেট।

এ প্রসঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক নুরুল্লাহ নুরী জানান, একটি ইটভাটা নির্মাণ এবং ইট পোড়ানোর জন্য কমপক্ষে ৪টি সংস্থার অনুমোদন নিতে হয়। এগুলো হলো পরিবেশ অধিদফতর, জেলা প্রশাসন, বিএসটিআই ও স্থানীয় ভূমি অফিস। তবে চট্টগ্রাম অঞ্চলে অধিকাংশ ইটভাটা এসব সংস্থার বৈধ অনুমোদন ছাড়াই চলছে বলে স্বীকার করে এই কর্মকর্তা জানান, পরিবেশ অধিদপ্তর অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে প্রায় প্রতিদিনই অভিযান পরিচালনা করছে। জরিমানা করছে। অবৈধ ইটভাটা ও কাঠ পোড়ানোর বিরুদ্ধে চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান পরিবেশ অধিদপ্তরের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগীয় কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক শাহ চৌধুরী জানান, ইট ভাটায় অবৈধ কাঠ পোড়ানোর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে বন বিভাগ। এই বিভাগের প্রতিটি রেঞ্জ এবং বিট কর্মকর্তাদের কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ইটভাটায় যে কোন ধরনের কাঠ পরিবহন ঠেকিয়ে কাঠসমূহ আটক/জব্দ করে বন আইনে মামলা দায়ের করতে। এছাড়া সরকারি বনাঞ্চল থেকে কেউ যাতে একটি গাছও কাটতে না পারে সে ব্যাপারে সচেষ্ঠ রয়েছে বন বিভাগের প্রতিটি কর্মী।

চট্টগ্রাম/বুলাকী

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়