ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

পাবনায় অবৈধভাবে চলছে ২২৮ ইটভাটা

শাহীন রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:১৬, ২০ নভেম্বর ২০২০   আপডেট: ১০:২০, ২০ নভেম্বর ২০২০
পাবনায় অবৈধভাবে চলছে ২২৮ ইটভাটা

পাবনায় ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে অধিকাংশ ইটভাটা

পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই পাবনায় চলছে ২২৮ ইটভাটা। কয়লার পরিবর্তে পোড়ানো হচ্ছে বিভিন্ন গাছের কাঠ। ইট প্রস্তুত করতে ব্যবহৃত হচ্ছে ফসলি জমির মাটি। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফসলি জমি, দূষিত হচ্ছে পরিবেশ, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।

পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, পাবনা জেলায় মোট ২৯০ ইটভাটার মধ্যে অনুমোদন নিয়ে চলছে মাত্র ৬২টি। আর ২২৮ ইটভাটাই অবৈধ। নেই জেলা প্রশাসনের লাইসেন্স বা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। এজন্য প্রশাসন আর পরিবেশ অধিদপ্তরের নজরদারীর অভাবকে দূষছেন পরিবেশবাদীরা। তবে ইটভাটা মালিকরা বলছেন, লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেও তারা পাননি।

২০১৩ সালের ইটভাটার আইনে বলা আছে, ইটভাটার এক কিলোমিটারের মধ্যে কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান থাকতে পারবে না। ফসলি জমি বা আবাসিক এলাকায় ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। কিন্তু আইন না মেনেই গড়ে উঠেছে ইটভাটা। কয়লার পরিবর্তে অবাধে পোড়ানো হচ্ছে বিভিন্ন গাছের কাঠ। ইট প্রস্তুত করতে ব্যবহৃত হচ্ছে ফসলি জমির মাটি। ঠিক নেই চিমনির উচ্চতাও। ২০১৩ সালের আইন অনুযায়ী ১২০ ফিট উচ্চতা নির্ধারণ ছিল ইটভাটার চিমনির। বর্তমানে ৮০ ফিট উচ্চতার চিমনি হলেও ছাড়পত্র দেওয়া হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার নয়টি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ইটভাটা রয়েছে সদর উপজেলার বাংলাবাজার, বাজিতপুর, হিমাইতপুর, চর বাঙ্গাবাড়ি এলাকায়। এছাড়া, চাটমোহর মহেষপুর, ধুলাউড়ি, চরসেন গ্রাম, গুনাইগাছা, ঈশ্বরদী উপজেলার লক্ষীকুণ্ডা, সুজানগর উপজেলার কামালপুর, বেড়া উপজেলার আমিনপুরে ফসলি জমি নষ্ট করে গড়ে উঠেছে অনেক ইটভাটা। চিমনির উচ্চতাও মানা হয়নি বেশিরভাগ ইটভাটায়। কালো ধোঁয়ায় দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে চরমভাবে।

চাটমোহর উপজেলার ধূলাউড়ি গ্রামের বাসিন্দা কৃষক আবুল কালাম জানান, ভাটার কারণে পরিবেশ খারাপ হয়ে যাচ্ছে। গাছ গাছালি পুড়ে নষ্ট হচ্ছে। ফসল উৎপাদনও অনেক কমে গেছে। এসব দেখার কেউ নেই।

চাটমোহরের সিটিবি ইটভাটার মালিক আব্দুল খালেক বলেন, ‘অনুমতি নিয়ে তো কাজ করা হয়। সেভাবেই করছি।’ পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র আছে কি না, লাইসেন্স পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি ফোন কেটে দেন।

পাবনা জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি মো. সেলিম হোসেন জানান, যারা এখনও লাইসেন্স করেনি সেই সব অবৈধ ইটভাটাগুলোর মালিকদের সমিতির পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে। অনেকেই আবেদন করেছেন, অনেকেই বিষয়টিকে অবহেলা করছেন। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও লাইসেন্স না পেলে ওই সব ভাটা মালিকদের সদস্যপদ বাতিল করা হবে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের পাবনা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. নাজমুল হোসাইন বলেন, ‘অবৈধ ইটভাটায় অভিযান চালাতে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দের অভাব রয়েছে। প্রতিটি অভিযান চালাতে অন্তত ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। আমাদের সে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ নেই। এছাড়া, লোকবল ও পরিবহন সংকট আছে। পাবনা কার্যালয়ে ৭টি পদের মধ্যে কর্মরত মাত্র দুই জন। শুন্য রয়েছে ৫টি পদ। দেড় বছর আগে পাবনায় পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যালয় স্থাপন করা হয়। এরমধ্যে গত এক বছরে পাবনায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ১৯টি অবৈধ ইটভাটা গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।’

পাবনার জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ জানান, অনুমোদনহীন ইটভাটা বন্ধে মাঝে মধ্যেই অভিযান পরিচালনা করা হয়। জরিমানা আদায় বা অবৈধ ইটভাটা গুড়িয়ে দেওয়া হয়। কিছু ইটভাটা অনুমোদন নবায়ন করেনি। সেগুলো নবায়ন করতে বলা হয়েছে। তারা নবায়ন না করলে ব্যবস্থা নেয়াও হবে।

পরিবেশবিদ এস এম মিজানুর রহমান বলেন, জেলার অবৈধ ইটভাটার সংখ্যা দেখলেই বোঝা যায় কতটা দায়সারা প্রশাসন। এসব অবৈধ ইটভাটা এখনও চলছে কীভাবে সেটাই প্রশ্ন। প্রশাসন আর পরিবেশ অধিদপ্তরের উদাসীনতা এর অন্যতম কারণ। অবৈধ এসব ইটভাটার জন্য ফসল, গাছপালার ক্ষতিসহ পরিবেশ দূষণ হচ্ছে চরমভাবে।

পাবনা/ইভা 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়