প্রতিবেশীর দেয়ালে ‘অবরুদ্ধ’ বৃদ্ধা!
মোসলেম উদ্দিন || রাইজিংবিডি.কম
দেয়াল টপকে এভাবে বৃদ্ধাকে নিজের বাড়িতে আসা-যাওয়া করতে হয়
দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার কাটলা গ্রামের বৃদ্ধা জবেদা বিবির ঘরের সামনে দেয়াল তুলেছেন প্রতিবেশী শাহনাজ পারভিন। এই দেয়ালের কারণে দীর্ঘ ২ মাস ধরে বৃদ্ধা ও তার পরিবারের সদস্যরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। তাদের স্বাভাবিক আসা-যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে গেছে। উপজেলা প্রশাসনের স্মরণাপন্ন হয়েও কোনো প্রতিকার মেলেনি বলে অভিযোগ করেছেন বৃদ্ধার ছেলে। এদিকে, দেয়াল তুলে বৃদ্ধার চলাচলের পথ বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ স্বীকার করেছেন শাহনাজ পারভিন। আর উপজেলা প্রশাসন বলছে, দ্রুত সমস্যার সমাধান করে দেওয়া হবে।
শুক্রবার (২০ নভেম্বর) দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, ষাটোর্ধ্ব জবেদা বিবির বাড়ির মূল গেটের সামনে শাহানাজ বেগম ইটের দেয়াল তুলেছেন। এর ফলে দেয়াল টপকে বাড়িতে আসা-যাওয়া করতে হয় জবেদা বিবি ও তার পরিবারের সদস্যদের।
জবেদা বিবি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘এতদিন স্বাভাবিকভাবে চলাচল করেছি। বাড়ির মূল গেটের সামনে শাহনাজ পারভিন ৪ ফুট উঁচু দেয়াল তোলায় আসা-যাওয়া করতে পারি না। দেয়াল টপকে চলাচল করতে গিয়ে বেশ কয়েকবার দুর্ঘটনায় পড়েছি।’
জবেদা বিবির ছেলে নাসির উদ্দিন বলেন, ‘শাহনাজ পারভিন তার লোকজন নিয়ে রাতারাতি বাড়ির সামনে দেয়াল তুলে আমাদের অবরুদ্ধ করে রেখেছেন। অথচ এই জায়গা তার বাবা প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমানের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকায় কিনেছি। ওই দলিলে শাহনাজ পারভিনের স্বাক্ষরও আছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই বিষয়ে উপজেলা চেয়াম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি। দীর্ঘ প্রায় দুই মাস ধরে তারা নতুন-নতুন তারিখ দিয়ে বিচারের নামে কালক্ষেপণ করছেন। কিন্তু কোনো বিচার করছেন না।’
স্থানীয় বাসিন্দা বকুল হোসেন, মোখলেছার রহমান ও মমিনুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘ভূমি অফিস নির্মাণের সময় সাধারণের চলাচলের জন্য অফিসের পেছন দিকে সরকারিভাবে রাস্তা ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু শাহানাজ পারভিন দেয়াল তুলে এই বৃদ্ধার পরিবারকে অবরুদ্ধ করে ফেলেছেন। এখন এই পরিবারের সদস্যরা বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না, ঢুকতেও পারছে না। অবিলম্বে বৃদ্ধা ও তার পরিবারের সদস্যদের চলাচলের পথ খুলে দেওয়ার জন্য তারা প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিরামপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ইসহাক আলী মণ্ডল ওরফে চেংগিস খাঁ বলেন, ‘আইন সবার জন্য সমান। বৃদ্ধার পরিবারের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা অমানবিক-অন্যায়। মুক্তিযোদ্ধার কন্যা হয়ে শাহনাজ পারভিন যে কাজটি করেছেন, তা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যও লজ্জার।’ দ্রুত বৃদ্ধার পরিবারের চলাচলের রাস্তা বের করে দেওয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি দাবি জানান এই মুক্তিযোদ্ধা।
বৃদ্ধার বাড়ির সামনে দেয়াল তোলার কাজটি অমানবিক হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন শাহনাজ পারভিন। তবে, রাইজিংবিডিকে তিনি বলেন, ‘সেখানে দেয়াল তুলে আমার স্কুটি রাখার ঘর তৈরি করেছি। আমার জায়গা কাউকে ব্যহার করতে দেবো না।’
শাহনাজ পারভিন এ-ও বলেন, ‘আমার বাবা প্রতিবেশী নাসির উদ্দিনের কাছে ২৫ হাজার টাকায় এই জায়গা বিক্রি করেছেন।’
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিরামপুর উপজেলা চেয়াম্যান খায়রুল আলম রাজু বলেন, ‘বৃদ্ধার বাড়ির সামনে দেয়াল তুলে তার চলাচলের পথ বন্ধ করে অমানবিক কাজ করেছেন শাহনাজ।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই সমস্যার সমাধান করতে কিছুটা দেরি হচ্ছে। উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে।’ এই বিরোধ দ্রুত মীমাংসা করে বৃদ্ধার চলাচলের পথ খুলে দেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।
দিনাজপুর/এনই
আরো পড়ুন