ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

যেন কালই নির্বাচন

মো. মামুন চৌধুরী, হবিগঞ্জ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৫৪, ২১ নভেম্বর ২০২০  
যেন কালই নির্বাচন

হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থীরা ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছেন। এমন প্রচারণা দেখে মনে হবে যেন কালই নির্বাচন। প্রায় দুই মাস ধরে মেয়র ও কাউন্সিল পদে সম্ভাব্য প্রার্থীরা নানাভাবে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এখানে ভোটাররা পূর্বের চেয়ে অনেক সচেতন। তারা প্রকাশ্যে মুখ খুলে কিছু বলছেন না। চায়ের দোকানেও নেই তেমন কোন আলোচনা।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভোটার বলেন, ভোট এসেছে। আবার চলে যাবে। এখানে কারো পক্ষে কথা বলে বিপদে পড়ে লাভ নেই। অপর পক্ষ আমার উপর ক্ষেপে থাকবে। পরে সারা জীবনের জন্য অন্য প্রার্থীর কাছে শত্রু হয়ে থাকতে হবে।

ভোটের সময় মাত্র দুই তিন মাস। এ সময়টা ভালোই যাবে। ভোট শেষ হলে দেখা যাবে প্রার্থীদের আসল রুপ। কে কাকে ভোট দিলেন। এ হিসেবটা কাল হয়ে দাঁড়াবে। তাই যে প্রার্থী আসছেন তাকেই বলছি ভোট দিব। কিন্তু কাকে ভোট দিব এখনও ঠিক করিনি। তবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সবার মধ্যে যোগ্য প্রার্থীকেই ভোট দিতে হবে। আবার বুঝতে হবে এ যোগ্য প্রার্থী কি জয়ী হবেন। না কালো টাকার কাছে অযোগ্য প্রার্থীই জয়ী হয়ে যান। এমনটা দেখলে অযোগ্য প্রার্থীকেই ভোট দিবো। কারণ, ভোটটা নষ্ট করে লাভ নেই।

না প্রকাশ না করে এক রিক্সাচালক বলেন, এ স্থানের নাম শায়েস্তাগঞ্জ। এখানে কথা বলার আগে হিসাব করতে হয়। তাই সাংবাদিকের কাছে কথা বলে মিডিয়ায় প্রকাশ হওয়ার আগে বলছি সাক্ষাৎকার দিলেও নাম দিবেন না। পরে মহাবিপদ হতে পারে। ভোটের আগেই টাকার খেলা শুরু হয়েছে। এখানে যার টাকা সঠিক স্থানে পৌঁছাবে তারই এগিয়ে থাকার সম্ভাবনা।

তিনি বলেন, কয়েক শ্রেণির ভোটার রয়েছেন। অনেকে টাকা নিয়ে ভোট দিবেন। আবার অনেকে টাকা নিবেন না। ভোট দিবেন যোগ্য প্রার্থীকে। অনেক ভোটার আছেন সব প্রার্থীর থেকেই টাকা নিবেন। ভোটের বেলায় তার পছন্দের প্রার্থীকেই ভোট দিবেন।

এক প্রবীণ ভোটার বলেন, শায়েস্তাগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন থেকেই ভোট এলেই টাকা বিলানো হতো। সে সময়ে ভোটার প্রতি ৩০ থেকে ৫০ টাকা দিতেন জনৈক প্রার্থীরা। এখন রেড বেড়েছে। তাই এবার মনে হয় ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ভোটার প্রতি দেওয়া হবে। কিছু লোক ভোট হলেই নিত্য রোজগার ছেড়ে প্রার্থীদের কাছে কাছে গিয়ে মিথ্যা কথা বলে টাকা হাতিয়ে নেয়। বর্তমানে এটা শুরু হয়েছে। চলবে রেজাল্ট হওয়ার আগ পর্যন্ত।

যদিও ১৯৯৮ সালে শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার যাত্রা শুরু। এ পৌরসভা গঠন করার পর একটি উপ-নির্বাচন ও ৪টি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রেজ্জাক রাজা মিয়া, দ্বিতীয় নির্বাচনে জাপা নেতা বিশিষ্ট মুরুব্বী আলহাজ্ব জাহির আহমেদ ময়না মিয়া, উপ ও তৃতীয় পৌর নির্বাচনে বিএনপি নেতা এমএফ আহমেদ অলি, চতুর্থ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতা মো. ছালেক মিয়া মেয়র নির্বাচিত হন।

সর্বশেষ ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ হিসেবে চলতি বছরের ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। আর ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার আভাস পাওয়াও যাচ্ছে।

শায়েস্তাগঞ্জ, হবিগঞ্জ, নবীগঞ্জ, চুনারুঘাট, মাধবপুর, আজমিরীগঞ্জ নিয়ে জেলায় মোট ৬টি পৌরসভা রয়েছে। এর মধ্যে ৫টিতে ভোট হয়ে আসছে। মামলার জন্য আজমিরীগঞ্জ পৌরসভায় নির্বাচন স্থগিত আছে। প্রশাসকের মাধ্যমে চলছে কার্যক্রম।

এখানে বাকি ৪টি পৌরসভায় নির্বাচনী আমেজ তেমন একটা না থাকলেও শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভায় আগাম নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হয়েছে। অনেকে বলে থাকেন শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভায় আলাদিনের চেরাগ (প্রদীপ) রয়েছে। এ প্রদীপের আলোকিত হওয়া গেলে আর পিছনে তাকাতে হয় না।

মামুন/আমিনুল

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়