তেরশ্রী ঐতিহাসিক গণহত্যা দিবস আজ
মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
মানিকগঞ্জের ঘিওরের তেরশ্রী ঐতিহাসিক গণহত্যা দিবস আজ। ১৯৭১ সালের ২২ নভেম্বর পাক হানাদার ও তাদের দোসররা তেরশ্রী গ্রামের জমিদার সিদ্ধেশ্বরী প্রসাদ রায় চৌধুরীসহ ৪৩ জনকে গুলি করে এবং বেয়নেটের আঘাতে নির্মমভাবে হত্যা করে।
রোববার (২২ নভেম্বর) তেরশ্রীতে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধকালে নিহত এই শহীদদের স্মরণ করা হয়েছে। সকালে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, কালোব্যাজ ধারণের মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শুরু হয়।
পরে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড, উপজেলা আওয়ামী লীগ, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড, জাসদ, তেরশ্রী ডিগ্রি কলেজ, তেরশ্রী কালী নারায়ণ ইনস্টিটিউশন, পয়লা ইউপি, তেরশ্রী বাজার ব্যবসায়ী সমিতি, কমিউনিস্ট পার্টি, মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মলীগ ঘিওর ইলিভেন ব্রাদার্সসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে স্মৃতিস্তম্ভে পুস্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আইরিন আক্তারের সভাপতিত্বে এ সময় বক্তব্য রাখেন- জেলা প্রশাসক এস এম ফেরদৌস, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. আব্দুস সালাম পিপি, জেলা মুক্তিযোদ্ধা ডেপুটি কমান্ডার মো. মমিন উদ্দিন খান, ঘিওর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হাবিবুর রহমান হাবিব, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. ইকরামুল ইসলাম খবির, যুগ্ম সম্পাদক মো. আতোয়ার রহমান, পয়লা ইউপি চেয়ারম্যান মো. হারুন অর রশীদ, ভাইস চেয়ারম্যান ইসতিয়াক আহম্মেদ শামীম, প্রয়াত জমিদার সিদ্ধেশ্বরী প্রসাদ রায় চৌধুরীর পুত্র সমেশ্বর রায় প্রসাদ চৌধুরী প্রমুখ। সঞ্চালনায় ছিলেন মেয়র মো. শাহজাহান।
জানা গেছে, তেরশ্রী গ্রামের মানুষগুলো ছিল সংস্কৃতিমনা। বাম রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু ছিল তেরশ্রী গ্রাম। এখানে মুক্তিযোদ্ধাদের আনাগোনা ছিল বেশি। একারণে পাক হানাদার বাহিনীর দোসররা টার্গেট করে এই গ্রামটিকে। গোপনে শিক্ষানুরাগী, মুক্তিযোদ্ধা, ভাষাসৈনিক, রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবীদের তালিকা প্রস্তুত করে। ১৯৭১ সালের ২২ নভেম্বর ভোরের সূর্য ওঠার মুহূর্তেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও দেশীয় রাজাকার ঘিরে ফেলে তেরশ্রী গ্রামের সেনপাড়ার কালি মন্দিরটি। কনকনে শীতের সকালে অনেকেই ঘুম থেকে ওঠেনি, ঠিক সেই মুহূর্তে পাকিস্তানি সেনারা অতর্কিত হামলা চালায় গ্রামটিতে। ঘরে ঘরে জ্বালিয়ে দেয় আগুন। ঘর থেকে বের হওয়ার সুযোগ দেয়নি গ্রামবাসীকে। বৃষ্টির মতো গুলি ছুড়তে থাকে নিরীহ গ্রামবাসীর ওপর। তাদের চিৎকারে পুরো এলাকা কম্পিত হয়ে ওঠে। মাত্র ৬ ঘণ্টার অপারেশনে ঘাতকরা একের পর এক বেয়নেট চার্জ ও গুলি করে ৪৩ জন গ্রামবাসীকে হত্যা করে। বেলা ১২টার মধ্যে হত্যাযজ্ঞ শেষ করে হানাদাররা ঘিওর সদরে চলে যায়। এ সময় পুরো এলাকা রক্তে ভেসে যায়।
চন্দন/টিপু
আরো পড়ুন