ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

কুষ্টিয়ার যে যুদ্ধে নিহত হয়েছিল ৬০ পাকসেনা

কাঞ্চন কুমার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৫৯, ২৬ নভেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৫:০৭, ২৬ নভেম্বর ২০২০
কুষ্টিয়ার যে যুদ্ধে নিহত হয়েছিল ৬০ পাকসেনা

ই-৯ এর গ্রুপ কমান্ডার আফতাব উদ্দিন খান

মুক্তিযুদ্ধকালে কুষ্টিয়ার শেরপুরে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধের কথা আজো ভুলতে পারেনি এই জেলার মানুষ। এ যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে নিহত হয়েছিল ৬০জন পাকসেনা।

দিনটি ছিল ১৯৭১ সালের ২৬ নভেম্বর।  কুষ্টিয়ায় সর্ববৃহৎ এই গেরিলা যুদ্ধটি সংঘটিত হয়েছিল দৌলতপুর উপজেলার পিয়ারপুর ইউনিয়নের শেরপুর মাঠে। এ যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন তৎকালীন কুষ্টিয়া ই-৯ এর গ্রুপ কমান্ডার আফতাব উদ্দিন খান ও ডেপুটি কমান্ডার জলিলুর রহমান।

২৫ নভেম্বর রাতে ই-৯ এর গ্রুপ কমান্ডার আফতাব উদ্দিন খান প্রায় ১শ’ জন সুসজ্জিত মুক্তিবাহিনীর দল নিয়ে শেরপুরে সেনপাড়ায় অবস্থান করেন। পাকবাহিনীরা বিষয়টি আঁচ করতে পেরে মধ্যরাতে শেরপুরে আগুন ধরিয়ে বেপরোয়া গুলি বর্ষণ করতে থাকে। মুক্তিবাহিনী পাকবাহিনীর অবস্থান জানতে পেরে মিরপুর ও দৌলতপুর থানার মধ্যবর্তী স্থান সাগরখালী নদীর তীরে তাদের অবস্থান দ্রুত সুদৃঢ় করেন। রাত ৩টা থেকে  পাকবাহিনীর মোকাবেলার জন্য অগ্রসর হতে থাকেন।

২৬ নভেম্বর ভোর ৫টায় উভয় পক্ষ পরস্পর মুখোমুখি হয়ে ৬ ঘন্টা ব্যাপী তুমুল যুদ্ধের পর পাকবাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়।  এ যুদ্ধে ৬০ জন পাক সৈনা নিহত হয়। অপরদিকে শেরপুর গ্রামের মৃত হাজী মেহের আলীর ছেলে হাবিবুর রহমান নামে এক মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।

এ ছাড়াও একই গ্রামের মৃত পঁচা বিশ্বাসের ছেলে হিরা ও মৃত আবুল হোসেন বিশ্বাসের ছেলে আজিজুল নামের দুই মুক্তিযোদ্ধা, মঈন উদ্দিন, আব্দুল জব্বার, আব্দুর রশিদ ও হায়দার আলীসহ ২০ জন আহত হন।

কুষ্টিয়া জেলায় সংঘটিত সর্ববৃহৎ এ গেরিলা যুদ্ধে হানাদার বাহিনীর পরাজয়ে দৌলতপুর ও মিরপুর থানার বিরাট এলাকায় মুক্তি বাহিনীর অবস্থান আরো সুদৃঢ় হয়। এর ফলে মুজিব বাহিনীর কমান্ডার নাজমুল করিম সুফি, গ্রুপ কমান্ডার হাবিবুর রহমান ও ইদ্রিস আলীর সহযোগিতায় পাহাড়পুর পুরাতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মুক্তিবাহিনীর একটি শক্তিশালী ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। কুষ্টিয়ার সাব সেক্টর কমান্ডার তৎকালীন লে. খন্দকার নুরুন্নবী এই ক্যাম্প সরেজমিনে পরিদর্শন করে অনুমোদন প্রদান করেন। শেরপুর যুদ্ধের পরে এলাকায় প্রচার ছিল সংশ্লিষ্ট এলাকায় ১ হাজার মুক্তিযোদ্ধা অবস্থান করছেন।

৭ ডিসেম্বর ভোরে আফতাব উদ্দিন খানের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী আমলাকে মুক্ত করেন এবং ওই দিন সন্ধ্যার পর আফতাব উদ্দিন খানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা সুলতানপুর গ্রামের জিকে ক্যানালের পশ্চিম পাশে অবস্থান নেন। তৎকালীন মিরপুর থানা কাউন্সিল বর্তমান উপজেলা পরিষদ ভবন এলাকায় ভারী অস্ত্রে সজ্জিত ২৫০ জন পাকবাহিনীর একটি শক্তিশালী ঘাঁটি ছিলো। পাকবাহিনীর এ ঘাঁটি হতে মুক্তিবাহিনীর অবস্থান ছিল খুব কাছে।  পাকবাহিনী বিষয়টি জানতে পেরে ভয়ে রাতের আঁধারে পালিয়ে যেতে থাকে।  যাওয়ার সময় মিরপুর থানার (পুলিশ ফাঁড়ি) সমস্ত কাগজ পত্র পুড়িয়ে দেয়।  যার ফলে ৮ ডিসেম্বর ভোরে ই-৯ এর গ্রুপ কমান্ডার আফতাব উদ্দিন খান ১৭০ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে মিরপুর থানায় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা গান স্যালুটের মাধ্যমে উত্তোলন করেন।

এরপর ৬৫ জন পাকহানাদার বাহিনীর দোসর ও রাজাকার পাহাড়পুর মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পে আত্মসমর্পণ করেন।  এ ভাবেই কুষ্টিয়া জেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয় সুচিত হয়।

কুষ্টিয়া/টিপু

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়