ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

সীতাকুণ্ড পৌরনির্বাচন: মাঠে আ. লীগের ৭ প্রার্থী, নীরব বিএনপি

রেজাউল করিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:১৪, ২৭ নভেম্বর ২০২০   আপডেট: ০৯:৩৪, ২৭ নভেম্বর ২০২০
সীতাকুণ্ড পৌরনির্বাচন: মাঠে আ. লীগের ৭ প্রার্থী, নীরব বিএনপি

আগামী ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড পৌরসভার নির্বাচন। গত রোববার নির্বাচন কমিশন পৌর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর দলীয় ব্যানারে তৎপড়তা শুরু করেছেন সাম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা।

সীতাকুণ্ড পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হতে দলীয় মনোনয়ন লাভে এরই মধ্যে মাঠে নেমে পড়েছেন আওয়ামী লীগের ৭ নেতা। পক্ষান্তরে, এখনো অনেকটা নিরব রয়েছেন বিএনপি নেতা-কর্মীরা। সীতুকুণ্ড পৌর নির্বাচনকে ঘিরে অনুসন্ধান এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে ভোটের প্রস্তুতির নানান চিত্র উঠে এসেছেন।

৩৪ হাজার ভোটার অধ্যুষিত সীতাকুণ্ড পৌরসভার সর্বশেষ ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে মেয়র পদে বিজয়ী হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আলহাজ্ব বদিউল আলম। ঠিক পাঁচ বছর পর আগামী ২৮ ডিসেম্বর আবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এই পৌরসভায়।

এবারের নির্বাচনের বর্তমান মেয়র বদিউল আলমসহ ৭ প্রার্থী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন লাভের জন্য মাঠে নেমেছেন। এই মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন— পৌরসভার বর্তমান কাউন্সিলর মাইমুন উদ্দিন মামুন, কাউন্সিলর সফিউল আলম চৌধুরী মুরাদ, কাউন্সিলর জুলফিকার আলী শামীম, সীতাকুণ্ড উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য গোলাম রব্বানী, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মোহাম্মদ ইউসুফ,  উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জাহেদ চৌধুরী ফারুক, পৌর যুবলীগের সভাপতি শাহ কামাল চৌধুরী।

পক্ষান্তরে, এখনো মনোনয়ন বা নির্বাচন নিয়ে কোনো তৎপড়তা নেই বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে। দলীয়ভাবে বিএনপি পৌর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কি-না তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে নেতাদের মধ্যে।

আওয়ামী লীগের অন্যতম মনোনয়ন প্রত্যাশী বর্তমান পৌর মেয়র আলহাজ্ব বদিউল আলম জানান, তিনি গত পাঁচ বছর অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে পৌর মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পৌরসভার প্রতিটি প্রান্তে সরকারের উন্নয়ন বরাদ্দকে কাজে লাগিয়ে সর্বোচ্চ নিষ্ঠার সঙ্গে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছেন। আগামী নির্বাচনের জন্যও মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন পুনরায় দলীয় মনোনয়ন পেলে তিনি জনগণের ভোট পেয়ে বিজয়ী হবেন এবং পৌরসভার জনগনের সেবা উন্নয়নে নিজেকে উৎসর্গ করবেন।

মেয়র পদে আওয়ামী লীগের অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী উত্তর জেলা আ. লীগের সদস্য গোলাম রব্বানী জানান, তিনি এবার নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুত।

রব্বানি বলেন, ‘গতবারও দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলাম। তখন আর্থিকভাবে প্রস্তুতি না থাকায় আমি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছি। এবার আমি সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েই মাঠে নেমেছি। দল তার ত্যাগের কথা বিবেচনা করে এবার মেয়র পদে তাকে মনোনয়ন দিবে বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।’

মনোনয়ন প্রত্যাশী বর্তমান পৌর কাউন্সিলর মাইমুন উদ্দিন মামুন জানান, তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে পর পর দুইবার সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এবার তিনি মেয়র পদে মনোনয়ন চাইবেন। দল তাকে মনোনয়ন দিলে জনগণের ভালোবাসা নিয়ে বিজয়ী হয়ে জনগণের সেবায় আরো বেশি নিজেকে নিয়োজিত করতে পারবেন বলে জানান।

একইভাবে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করেন বর্তমান কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র জুলফিকার আলী শামীম। তিনি জানান, কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র হিসেবে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করার পর এবং তিনি মেয়র পদে নির্বাচন করতে আগ্রহী।

এদিকে, পৌর নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ব্যাপক তৎপড়তা থাকলে উল্টো চিত্র বিএনপিতে। এই দলের কোনো নেতা-কর্মীর মধ্যে নির্বাচন নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য নেই। গত পৌর নির্বাচনে বিএনপি’র প্রার্থী আবুল মনসুর জানান, দল মনোনয়ন দিলে তিনি এই বছরও মেয়র পদে নির্বাচনে প্রার্থী হবেন। তবে বিএনপি এই নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবে কি-না সে ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কেন্দ্রীয়ভাবে দলীয় সিদ্ধান্তের পরই বিএনপি প্রার্থীরা নির্বাচন নিয়ে মাঠে নামবে। এখন বিএনপি নেতাকর্মীরা নিরব থেকে দলীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করছেন বলে জানান আবুল মনসুর। 
আবুল মনসুর ছাড়াও সীতাকুণ্ড পৌর বিএনপির সভাপতি ইউসুফ নিজামী, বর্তমান পৌর কাউন্সিলর ও পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ. কে.এম সামসুদ্দিন আজাদ এবং পৌর বিএনপি নেতা আলমগীর ইমরান নিজেদেরকে মনোনয়ন প্রত্যাশী উল্লেখ করে বলেন, দল নির্বাচনে অংশ নিলে এবং মনোনয়ন পেলে মেয়র পদে প্রার্থী হবেন।

এদিকে, তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের মধ্যেও ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। গত পাঁচবছরে পাওয়া না পাওয়ার হিসেব কষছেন অনেক ভোটার। পক্ষান্তরে সাম্ভাব্য প্রার্থীরাও এখন থেকেই ভোটারদের কাছাকাছি থাকার চেষ্ঠা করছেন।

সীতাকুণ্ড পৌর এলাকার ভোটার এবং স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সাইফুল নবী রাইজিংবিডিকে জানান, প্রার্থীরা এখন থেকেই তাদের মনযোগ আকর্ষণের চেষ্ঠা করছেন। ভোটার হিসেবে সাম্ভাব্য প্রার্থীদের সমিহ পাচ্ছেন। কারা নির্বাচনে প্রার্থী হবেন তা দলীয় মনোনয়নের ওপর নির্ভর করছে। ভোটার হিসেবে একজন যোগ্য এবং দুর্নীতিমুক্ত প্রার্থী মনোনয়ন লাভ করুক সেই প্রত্যাশা করেন এই ভোটার।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মোহাম্মদ ইউসুফ জানান, সীতাকুণ্ড চট্টগ্রামের একটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভা। কিন্তু গত পাঁচ বছওে এখানে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হয়নি। জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে পৌরবাসী মুক্ত হতে পারছেন না। রাস্তাঘাটের কোন উন্নয়ন নেই। স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী আন্দোলনে অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন বলে উল্লেখ করে এই নেতা বলেন, ‘দলীয় মনোনয়ন নিয়ে পৌরসভার উন্নয়নেও অবদান রাখতে চাই।’ তাই মেয়র পদে মনোনয়ন চাইবেন বলেন জানান ইউসুফ।

উল্লেখ্য, সীতাকুণ্ড পৌরসভা স্থাপিত হয় ১৯৯৮ সালের ১ এপ্রিল। এর আয়তন ২৮.৯১ বর্গ কিলোমিটার। ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এই পৌরসভার জনসংখ্যা প্রায় ৬৩ হাজার এবং ভোটার সংখ্যা ৩৪ হাজার।

চট্টগ্রাম/বুলাকী

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়