ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ধামরাইয়ে নির্ভার বিএনপি, আ.লীগে বিভক্তির আভাস

আরিফুল ইসলাম সাব্বির, সাভার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৫৭, ২৭ নভেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৪:৩৪, ২৭ নভেম্বর ২০২০
ধামরাইয়ে নির্ভার বিএনপি, আ.লীগে বিভক্তির আভাস

২৮ ডিসেম্বর পৌর নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর রাজধানীর উপকণ্ঠে ধামরাইয়ে শুরু হয়েছে ভোটের আমেজ। নির্বাচনে কে কে প্রার্থী হচ্ছেন এ আলোচনায় জমে উঠেছে পৌর শহরের অলি-গলি, হাট-বাজার। তর্কে-বিতর্কে নিজের প্রার্থীর পক্ষে যুক্তি তুলে ধরছেন সচেতন ভোটাররা। নির্বাচনকে সামনে রেখে দলগুলোতেও শুরু হয়েছে জোর আলোচনা। এরইমধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে প্রায় অর্ধডজন নেতা প্রার্থী হতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।

নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন সভা সমাবেশে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা।  এজন্য সবাই দলীয় হাইকমান্ডের সঙ্গে লবিং চালাচ্ছেন বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র। এসবের কারণে দলে নেতাদের মধ্যে কিছুটা দূরত্বও তৈরি হয়েছে বলে জানা গেছে। ২০১৫ সালের নির্বাচনের সময়েও এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। সেসময় অল্প ভোটের ব্যবধানে বিএনপির প্রার্থীকে হারায় ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী। 

বিএনপিতে বেশ কয়েকজন প্রার্থীর নাম শোনা গেলেও শেষ পর্যন্ত ধামরাইয়ের প্রথম মেয়র নাজিম উদ্দিন মঞ্জুই মনোনয়ন পেতে পারেন বলে জানা গেছে। গতবার হেরে গেলেও সুষ্ঠু ভোট হলে মঞ্জুই আবারও জিতবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন বিএনপি নেতারা। একারণে নির্বাচনের প্রাক্কালে আওয়ামী লীগে বিভক্তির আভাস বইলেও নির্ভার রয়েছেন বিএনপি নেতারা। 

পৌর আওয়ামী লীগের সূত্র জানায়, আসন্ন পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মেয়র প্রার্থী হতে চান ৫ নেতা। এরা হলেন, ধামরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সাকু, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান মেয়র গোলাম কবির মোল্লা, পৌর আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক (বর্তমান ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর) সাহেব আলী, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবুল কাশেম রতন, ধামরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও বিএসটিআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক দেওয়ান আফসার উদ্দিন জিন্নাহ।

অপরদিকে বিএনপি থেকে পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পৌর বিএনপির সভাপতি দেওয়ান নাজিম উদ্দিন মঞ্জু ও ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান অভি ও ধামরাই পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আতিকুর রহমান আতিক, ধামরাই উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি আনোয়ার জাহিদ তালুকদার মেয়র পদে মনোনয়নের জন্য কেন্দ্রে দৌড়াচ্ছেন।

পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নির্বাচনপূর্ব আমেজ। গেল কয়েকমাস ধরেই সভা-সমাবেশে ভোটারদের কাছে নিজেদের প্রার্থিতার কথা জানাচ্ছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। ফেস্টুন-প্ল্যাকার্ড ও বিলবোর্ডসহ এলাকায় নিজের শো-ডাউনও করেছেন অনেকেই। প্রার্থীদের বিভক্তিতে দ্বন্দ্বে পড়েছেন দলের সমর্থকরা। তবে যাই হোক শেষ পর্যন্ত যেই মনোনয়ন পান না কেন বাকিরা তার পক্ষে কাজ করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান রাইজিংবিডিকে বলেন, আমাদের সাংগঠনিকভাবে প্রার্থীদের তালিকা পাঠানো হবে। সে অনুযায়ী দলনেত্রী যাকে নির্ধারণ করে দেবেন তিনিই প্রার্থী হবেন। বাকিরা তার সঙ্গেই কাজ করবেন।

তিনি বলেন, আমাদের সংগঠন ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। নির্বাচনেও সেই ধারা বজায় রাখা হবে। কেউ যদি তার ব্যত্যয় করে তার বিরুদ্ধে আগের মতো দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী রয়েছে স্বীকার করে সংসদ সদস‌্য বেনজির আহম্মেদ রাইজিংবিডিকে বলেন, বড় দলে এরকম হবে। বহু প্রার্থীও হবেন। তবে দলের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে কাজ করতে হবে।  দলের বাইরে কেউ কিছু ভাবলে তাদের জন্যে ভালো হবে না।

ক্ষমতাসীন দলে দ্বিধা থাকলেও কিছুটা নির্ভার বিএনপি। ধামরাই পৌরসভার প্রথম ও সবচেয়ে বেশি সময় মেয়র থাকা দেওয়ান নাজিম উদ্দিন মঞ্জুই শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন পেতে পারেন বলে জানা গেছে। জোট সরকারের আমলে পৌরসভার প্রথম নির্বাচনে দলীয় সমর্থন নিয়ে মাত্র ১ হাজার ৩৬৮ ভোট বেশী পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। পরের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে দ্বিগুন ভোটে পরাজিত করেন তিনি। বয়োবৃদ্ধ এ নেতাকে দলের কাজ-কর্মে না পাওয়া গেলেও তার চেয়ে যোগ্য ব্যক্তি বা বিকল্প প্রার্থী বিএনপিতে নেই।  এজন্যে তিনিই ফের মনোনয়ন পেতে পারেন বলে জানা গেছে। তবে মঞ্জুর নামে মামলা থাকায় সুযোগ নিতে পারেন বিএনপির আরেক মেয়র প্রার্থী ছাত্রনেতা নাজমুল হাসান অভি।

ধামরাই উপজেলা বিএনপির সভাপতি তমিজ উদ্দিন রাইজিংবিডিকে বলেন, আমরা একটা উল্টো সময়ে আছি। নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু হবে তা নিয়ে দ্বিধা আছে। তবে আমরা একত্র হয়ে নির্বাচন করবো। আমাদের যিনি আগে মেয়র প্রার্থী ছিলেন তিনি মাত্র একশো ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন। তাকে হারানো হয়েছিল। এবারো আমাদের যেই প্রার্থী হোক তিনি বিজয়ী হবেন বলে আমরা আশাবাদী। 

ধামরাইকে ১৯৯৯ সালে পৌরসভায় উন্নীত করা হয়। ৬ দশমিক ৯৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ পৌরসভার ৯ ওয়ার্ডে বর্তমান ভোটার ৪১ হাজার ১৭৯ জন (চলমান প্রক্রিয়ায়)।  প্রথম ধাপে যে কয়টি পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে তার মধ্যে ধামরাইও রয়েছে। গত ২২ নভেম্বর ধামরাই পৌরসভার নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। এতে মনোনয়ন দাখিলের সময় ১ ডিসেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাই ৩ ডিসেম্বর, প্রত্যাহার ১০ ডিসেম্বর ও ভোটগ্রহণ হবে ২৮ ডিসেম্বর।

সাব্বির/এসএম

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়