ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

পৌরনির্বাচন: সিরাজগঞ্জে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মাঠে

অদিত্য রাসেল, সিরাজগঞ্জ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:২৬, ২৭ নভেম্বর ২০২০  
পৌরনির্বাচন: সিরাজগঞ্জে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মাঠে

সিরাজগঞ্জের ৭ পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলরদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ডিসেম্বরে। শাহজাদপুর পৌরসভার তফসিল ঘোষণা হয়েছে। আগামী ২৮ ডিসেম্বর নির্বাচন হবে। নির্বাচন উপলক্ষে পৌর এলাকায় নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রচারণায় ব্যস্ত। অনেকেই ভোটারদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়, উঠান বৈঠক ও কর্মী সমাবেশসহ নিজের ছবি সম্মিলিত লিফলেট নিয়ে ব্যাপক গণসংযোগ করছেন। সমর্থন আদায়ে দিচ্ছেন বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি। 

ক্ষমতাশীনরা কেন্দ্রীয় ও জেলার নেতাদের সঙ্গে লবিংয়ের পাশাপাশি এলাকায় চালাচ্ছেন গণসংযোগ। বসে নেই বর্তমান মেয়ররাও। তারা নিজেদের বিগত বছরের অর্জনের ফিরিস্তি তুলে ধরে আগামী নির্বাচনে সমর্থন চাচ্ছেন ভোটারদের কাছে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রতিযোগিতা চলায় নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে নেতাকর্মীদের মধ্যে তত উৎসাহ বাড়ছে। 

সিরাজগঞ্জ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবুল হোসেন বলেন, জেলায় ৭টি পৌরসভার মধ্যে শাহজাদপুর পৌরসভা বাদে বাকি ৬টি পৌরসভায় সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর। বর্তমান মেয়রদের মেয়াদের পাঁচ বছর শেষ হতে যাওয়ায় এসব পৌরসভায় আগামী ডিসেম্বরে ভোটের কথা রয়েছে। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ পৌরসভা: 

এই পৌরসভায় নাগরিকদের নিরাপত্তাসহ মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত একটি নানন্দিক পৌরসভা গড়ে তুলতে মনোনয়ন প্রত্যাশী মেয়র প্রার্থীরা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছেন পৌরবাসীদের। প্রতিশ্রুতিতে রয়েছে পৌরসভা দুর্নীতিমুক্ত, পরিচ্ছন্ন, জবাবদিহিমূলক পৌরসভা গড়ে তুলতে। সকাল-সন্ধ্যা পর্যন্ত পৌরসভার ১৫টি ওয়ার্ডে পৃথক পৃথকভাবে গণসংযোগ ও মতবিনিময়ের মধ্যদিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। ১৫টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত প্রথম শ্রেণির পৌরসভা। পৌর এলাকায় মোট ভোটার সংখ্যা ১,১৫,৬৩৭ জন। পুরুষ ৫৬,৯২৯ জন ও মহিলা ৫৮,৭০৮ জন।  

ক্ষমতাশীন দলের মেয়র প্রার্থীরা হলেন- জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কে. এম হোসেন আলী হাসান, সহ-সভাপতি ও বর্তমান মেয়র সৈয়দ আব্দুর রউফ মুক্তা, সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী ইসাহাক আলী, সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ফিরোজ তালুকদার, সাবেক ভারপ্রাপ্ত পৌর মেয়র ও জেলা আ. লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিম আহম্মেদ, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিরাজগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি হেলাল উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক দানিউল হক দানি মোল্লা।

বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা হলেন- জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নুর কায়েস সবুজ, রাশিদুল হাসান রঞ্জন, মুন্সি জাহিদ আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা মোস্তফা জামান, জেলা যুবদলের সভাপতি মির্জা আব্দুল জব্বার বাবু এর নাম জানা গেছে। জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এখন পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি।

তাড়াশ পৌরসভা

প্রথম পৌরসভা নির্বাচনে এই পৌরসভার চিত্রও একইরকম। সবজায়গায় ভোটের হাওয়া।  আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থীরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে গণসংযোগ করছেন। নির্বাচিত হলে এ পৌরসভাকে মডেল পৌরসভা হিসেবে গড়ে তোলার আশার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তারা। ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত পৌর এলাকায় মোট ভোটার সংখ্যা ১০.৮৫০ জন। পুরুষ ৫.৩০০ জন ও মহিলা ৫.৫৫০ জন। 

ক্ষমতাশীন দলের মেয়র প্রার্থীরা হলেন- উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হক, সাধারণ সম্পাদক, সনজিত কর্মকার, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রজত ঘোষ, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সদর ইউপি চেয়ারম্যান বাবলু শেখ, মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি আরিফুল ইসলাম, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ আলী বিদ্যুৎ ও তাড়াশ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পরিচালক মির্জা শামসুল ইসলাম। অরদিকে উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আব্দুল বারিক খন্দকার ও উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি মুনসুর রহমান বাচ্চু।

বেলকুচি পৌরসভা

বেলকুচি পৌরসভায় মেয়র প্রার্থীদের পদচারণায় উৎসবমুখর পরিবেশে গণসংযোগ করেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা। আর যোগ্য প্রার্থী নির্বাচনে চুলচেরা বিশ্লেষণে ব্যস্ত ভোটাররা। ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত পৌর এলাকায় মোট ভোটার সংখ্যা ৫৭,৫৯৭ জন। পুরুষ ২৯,৯৯২ জন ও মহিলা ২৭,৬০৫ জন।

ক্ষমতাশীন দলের মেয়র প্রার্থীরা হলেন- উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও বর্তমান মেয়র আশানুর বিশ্বাস, পৌর আওয়ামী লীগের সদস্য আব্দুল মজিদ খান ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক সাজ্জাদুল হক রেজা। এখন পর্যন্ত কোনো দলের প্রচারণা দেখা যায়নি।

রায়গঞ্জ পৌরসভা

পৌর নির্বাচনকে ঘিরে উৎসবমুখর পরিবেশ দেখা যাচ্ছে রায়গঞ্জ পৌরসভায়। একদিকে প্রার্থীরা চালাচ্ছেন প্রচারণা, অন্যদিকে চায়ের দোকান থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লায় চলছে প্রার্থী নির্বাচনে ভোটারদের আলোচনা। ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত পৌর এলাকায় মোট ভোটার সংখ্যা ১১.৮০০ জন। পুরুষ ৫,৭২৫ জন। মহিলা ৬,০৭৫ জন। 

ক্ষমতাশীন দলের মেয়র প্রার্থীরা হলেন- উপজেলা আ.লীগের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান মেয়র আব্দুল্লাহ আল-পাঠান, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক আখসারুল আলম খোকন, পৌর আ.লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জুয়েল মাহমুদ, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এম.এম হাসানুজ্জামান সুলতান। বিএনপির প্রার্থী হলেন- উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক জাহিদুল ইসলাম।  (স্বতন্ত্র প্রার্থী) সাবেক মেয়র মো. মোশারফ হোসেনের নাম পাওয়া গেছে। 

শাহজাদপুর পৌরসভা

৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত পৌর এলাকায় মোট ভোটার সংখ্যা ৫৪,৬০২ জন।  পুরুষ ২৭,৫২২ জন ও মহিলা ২৭,০৮০ জন।  ক্ষমতাশীন দলের মেয়র প্রার্থীরা হলেন- জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান মেয়র হালিমুল হক মিরু, সাবেক মেয়র নজরুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুস্তাক আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ আব্দুস সালাম বেপারী, তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক তরু লোদী, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম শাহু, পৌর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি মাহবুবে ওয়াহিদ শেখ কাজল, কেন্দ্রীয় যুবলীগের কার্যনির্বাহী সদস্য আব্দুর রহিম। 

বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা হলেন- শাহজাদপুর পৌর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক ইমদাদুল হক নওশাদ, যুগ্ম-আহ্বায়ক  মো. আইয়ুব আলী, উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল ইসলাম রাজা, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক  মাহমুদুল হাসান সজল। বাংলাদেশ ইসলামী যুব আন্দোলন শাহজাদপুর উপজেলা শাখার সভাপতি মুহাম্মদ ইমরান খন্দকার।

কাজিপুর পৌরসভা

৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত পৌর এলাকায় মোট ভোটার সংখ্যা ১২.৬৩৩ জন।  পুরুষ ৬,১০২ জন ও নারী ৬.৫৩১ জন।  ক্ষমতাশীন দলের মেয়র প্রার্থীরা হলেন- বর্তমান মেয়র হাজী নিজাম উদ্দিন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাজেদুল করিম, সাংগঠনিক সম্পাদক হান্নান তালুকদার, স্থানীয় স্কুলশিক্ষক ফরিদ মাস্টার ও আমিন সরকার। 

উল্লাপাড়া পৌরসভা 

উল্লাপাড়া পৌরসভা ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত পৌর এলাকায় মোট ভোটার সংখ্যা ৩৭,১০২ জন। পুরুষ ১৮,৬০১ জন ও নারী ১৮,৫০১ জন। ক্ষমতাশীন দলের মেয়র প্রার্থীরা হলেন- পৌর আ.লীগের সভাপতি ও বর্তমান মেয়র এস এম নজরুল ইসলাম, প্যানেল মেয়র ও সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আরজু, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক মাহবুব সারোয়ার বকুল, উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম উজ্জ্বল, উপজেলা আ.লীগের সদস্য জাহিদুজ্জামান কাকন, উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি আরিফুল ইসলাম, সাবেক কাউন্সিলর আহসান আলী সরকার। 

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু বলেন, পৌরসভায় বিএনপির সমর্থক বেশি রয়েছে। আশা করি দল যাকে মনোনয়ন দিবে বিএনপি ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবে এবং তিনি মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হবেন।

জেলা আওয়ামী লীগের (ভারপ্রাপ্ত) সভাপতি কে. এম হোসেন আলী হাসান বলেন, কেন্দ্রীয়ভাবে যাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে, তাকে জয়ী করার জন্য আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবে।

জেলা আওয়ামী লীগের (ভারপ্রাপ্ত) সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ তালুকদার বলেন, কেন্দ্র থেকে পৌরসভা নির্বাচনের ব্যাপারে এখনো কোনো নির্দেশনা আসেনি। তবে দলের অনেকেই মনোনয়নের আশায় মাঠে সরব হয়েছেন। দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার জন্যই কাজ করবে নেতাকর্মীরা। 

সিরাজগঞ্জ/সাইফ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়