ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

হাকিমপুর থানা পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা গেল কই?

মোসলেম উদ্দিন, হিলি (দিনাজপুর) || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২৩:২৬, ৩০ নভেম্বর ২০২০   আপডেট: ০৭:০১, ১ ডিসেম্বর ২০২০
হাকিমপুর থানা পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা গেল কই?

দিনাজপুরের হাকিমপুরে মাদকবিরোধী অভিযানে ফেন্সিডিল ও ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকাসহ তিনজনকে আটক করা হলেও এজাহারে টাকার কথা উল্লেখ করা হয়নি। শুধু ফেন্সিডিল উদ্ধার দেখিয়ে আসামীদের বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করা হয়েছে। ফলে এজাহারে বাদী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নিহার রঞ্জন রায়ের বিরুদ্ধে আসামীদের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। যদিও বিষয়টি অস্বীকার করেছেন এসআই নিহার রঞ্জন ও অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফেরদৌস ওয়াহিদ। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন হাকিমপুর সার্কেলের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার মিথুন সরকার।

আটককৃতরা হলেন— হাকিমপুর উপজেলার দক্ষিণ বাসুদেবপুর (চুড়িপট্টি) গ্রামের রানা হোসেনের স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন (২৬), জেলার বিরামপুর উপজেলার দেবীপুর-বনখুনজা গ্রামের মৃত ইসমাইল হোসেনের ছেলে টগর হোসেন (৩২) এবং জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার তাঁতীপাড়া গ্রামের রিপন হোসেনের স্ত্রী মুক্তা বেগম (২৯)।

এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ নভেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফেরদৌস ওয়াহিদের নেতৃত্বে এসআই নিহার রঞ্জন রায়সহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য উপজেলার দক্ষিণ বাসুদেবপুরের চুড়িপট্টি এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় গোপন সংবাদ পেয়ে পুলিশ সদস্যরা চুড়িপট্টি এলাকার মুক্তার হোসেনের বাড়িতে তল্লাশি চালান। সেখান থেকে চারটি লোহার পাইপের ভেতরে ৫৪ বোতল ফেন্সিডিল লুকিয়ে বহন করার সময় পুলিশ সদস্যরা সাবিনা ইয়াসমিন, মুক্তা বেগম ও টগর হোসেনকে হাতেনাতে আটক করেন। পরে বাদী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নিহার রঞ্জন রায় ৫৪ বোতল ফেন্সিডিল উদ্ধার দেখিয়ে এ ঘটনায় জড়িত আটককৃত তিনজনের বিরুদ্ধে থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে এজাহার দায়ের করেন। এছাড়া সোহানা আক্তার চাঁদনীসহ আরও ৩/৪ জনকে পলাতক দেখিয়ে আসামী করা হয়েছে। যার নং ১৯, তাং ২৬/১১/২০ইং। পরের দিন আসামীদের দিনাজপুর আদালতে পাঠনো হয়।

সোমবার (৩০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় আসামী সাবিনা ইয়াসমিনের স্বামী রানা হোসেন অভিযোগ করে রাইজিংবিডিকে বলেন, পুলিশ ওইদিন কোথা থেকে একজন অটোচালককে ফেন্সিডিলসহ আটক করে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসে। এ সময় ওই অটোচালককে পুলিশ বলে এই বাড়ির কে কে জড়িত তাদের নাম বল। তখন অটোচালক বলে আমি অপরাধী, এরা কেউ না। এরপরে এসআই আমাদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে ছোট বোন চাঁদনী বেগমের শোবার ঘরে ঢুকে জিনিসপত্র তছনছ করে ড্রয়ার থেকে ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা বের করে নিয়ে গেছে। সঙ্গে ১টি স্বর্ণের আংটি ও ১টি চেইনও নিয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, আপনাদের কাছে এই অভিযোগ করার পর হয়তো পুলিশ আমাকেও ধরে নিয়ে যেতে পারে। রানার বাবা মুক্তার হোসেনও একই অভিযোগ করেন।

পুলিশি অভিযানের সময় ওই বাসায় কর্মরত রাজমিস্ত্রি জনি হোসেন রাইজিংবিডিকে বলেন, সিভিলে দুইজন লোক এসে বাড়ির সকলের নাম জিজ্ঞেস করে বলে চাঁদনী কে? এরপর ঘরে ঢুকে ড্রয়ার খুলে কি যেন খুঁজতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা আমাকে বলে আমরা কিছু নিয়েছি নাকি? আমাদের তোমরা চেক করতে পারো এই কথা বলে চলে যায়। তবে টাকা নিয়েছে কিনা আমি বলতে পারবো না।

অভিযোগ প্রসঙ্গে থানার এসআই নিহার রঞ্জন রায় রাইজিংবিডিকে জানান, অভিযোগ করে কোন লাভ হবে না। কারণ, অভিযানের সময় সেখানে অনেক লোক ছিল। এ ধরনের ঘটনা অসম্ভব। তাদের পরিবারের সবার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বলেই আমাদের প্রতি তাদের একটা আক্রোশ আছে। কেউ ক্ষতিগ্রস্থ হলে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে এটি আমার চাকরির বয়স থেকেই দেখে আসছি বলে মন্তব্য করেন।

থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফেরদৌস ওয়াহিদ রাইজিংবিডিকে জানান, টাকা বা অন্য কিছু নেওয়ার বিষয়টি সত্য হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আর যদি টাকা জব্দের বিষয় থাকতো, তাহলে তো মামলা আরো শক্তিশালী হতো। মানি লন্ডারিং মামলা করতাম। ফেন্সিডিল তাদের বাসায় পেয়েছি। এতে তারা মিথ্যা অভিযোগ করছে।

হাকিমপুর সার্কেলের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার মিথুন সরকার রাইজিংবিডিকে জানান, এ বিষয়ে তারা যদি আমার কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন, সেক্ষেত্রে বিষয়টি তদন্ত করা হবে। ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেলে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।

মোসলেম/আমিনুল

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়