শীতে দুর্ভোগ: অসহায়দের পাশে বিভিন্ন সংগঠন
রুমন চক্রবর্তী, কিশোরগঞ্জ || রাইজিংবিডি.কম

শীতের আগমনী বার্তা আসার সঙ্গে ব্যস্ত হয়ে পড়েন স্বচ্ছল পরিবারের মানুষজন। শীতের পোষাক কেনাকাটায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ছুটেন বিভিন্ন মার্কেট ও শপিং সেন্টারগুলোতে। চলতি মাসে শীতের শুরু থেকেই ভিড় বাড়ছে কাপড়ের দোকানে। সঙ্গে তাল মিলিয়ে অল্প আয়ের মানুষজনও ফুটপাত থেকে শীতের কেনাকাটা করেছেন।
কিন্তু সমাজের এক শ্রেণির ছিন্নমূল শিশু ও মানুষ আছেন, যারা শীতের এই সময়টাতে বেশ কষ্টে জীবনযাপন অতিবাহিত করেন। শহরের অলিগলির বিভিন্ন দোকানপাটের সামনে, বাসষ্ট্যান্ডে বা রেলস্টেশনের আশেপাশেই তাদের রাতযাপনের একমাত্র ভরসা। আবার হাওর পাড়ের এমন সব মানুষের কষ্ট আরও বেশি। ভাসমান জীবনে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে তাদের একমাত্র ভরসা নদীর কূল-কিনারা।
জেলা শহর ও গ্রামে সর্বত্রই শীতের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। অগ্রহায়ণের মাঝামাঝি সময়ে বাড়ছে কুয়াশা। যতই সময় গড়াচ্ছে রাতে বাড়ছে শীতের তীব্রতা, আর সঙ্গে বাড়ছে ছিন্নমূল হাজারো মানুষের কষ্টের কাহিনি।
মো. বাক্কার মিয়া প্রতিদিনই পর্যন্ত সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ট্রেনে ফেরি করে বিভিন্ন জিনিসপত্র বিক্রি করেন। রাতে স্টেশনের পাশে হোটেলে কিছু খেয়ে আবার প্লাটফর্মের খোলা জায়গায় রাতযাপন করেন। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, আমার কোনো পরিবার নেই। দিনের পর দিন এভাবেই চলছে আমার জীবন। তবে এখন শীতের শুরু তাই রাতে ঘুমাতে কিছুটা কষ্ট হয়। সামনে শীত বাড়লে কি হবে, তাই ভাবছি। এমন অসংখ্য বাক্কার মিয়ার জীবন এভাবেই চলে যাচ্ছে।
এদিকে, জেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী প্রতি বছর জেলায় শীতে প্রায় কয়েক হাজার ছিন্নমূল মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা। এবারও বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এদিকে, শীত মৌসুমে কোভিড-১৯ সংক্রমণে সম্ভাব্য দ্বিতীয় ঢেউ মোকাাবিলায় মাস্ক পরিধান ও স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন নিশ্চিতকরণ সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন করে যাচ্ছে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন। শীতজনিত কারণে নানা রোগ প্রতিরোধে স্বাস্থ্য বিভাগও মাঠ পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছে। অন্যদিকে জেলার বিভিন্ন সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও ব্যক্তি উদ্যোগে করোনা সচেতনতায় মাস্ক ও লিফলেট বিতরণ করছে।
কিশোরগঞ্জ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, প্রতি বছরই তাদের বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে সবার মাঝে বেশ প্রশংসা কুঁড়িয়েছে। সংগঠনটির পক্ষে রেজাউল করিম শিপন রাইজিংবিডিকে বলেন, গত বছরও প্রচণ্ড শীতে কষ্ট করেছেন এমন অনেক ছিন্নমূল মানুষদের খুঁজে আমরা তাদের হাতে শীতবস্ত্র পৌঁছে দিয়েছি। এ বছরও পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। আমরা আশা করি, শুধু শীতবস্ত্র বিতরণ নয়, শীতকালীন স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন এবং করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতেও কাজ করব।
জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. কামরুজ্জামান খান রাইজিংবিডিকে বলেন, প্রতি বছর জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচতে ছিন্নমূল মানুষ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য শীতবস্ত্রের ব্যবস্থা করে থাকে। তবে এবার এখন পর্যন্ত পরিষদ থেকে তেমন কোনো দিক-নির্দেশনা আসেনি। যদি আসে তবে ছিন্নমূল মানুষ ও প্রতিবন্ধীদের তালিকা প্রস্তুত করে শীতবস্ত্র বিতরণের পরিকল্পনা রয়েছে।
এদিকে, জেলা প্রশাসন সূত্র থেকে জানা গেছে, এ বছরও প্রশাসনিকভাবে ছিন্নমূল মানুষের খুঁজে তাদের হাতে হাতে শীতবস্ত্র পৌঁছে দেওয়া পরিকল্পনা রয়েছে। তাছাড়া কোভিড-১৯ থেকে রক্ষায় মাস্ক পরিধান, স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন ও জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন পরিকল্পনাও হাতে নেওয়া হয়েছে।
ঢাকা/সাইফ