‘শীতির জ্বালায় কাজ করতে পারি না, না খায়ে আছি’
শাহীন আনোয়ার || রাইজিংবিডি.কম

‘অহন তো করোনা তারপর আবার শীত। আমাগের আর যাওয়ার জাগা থাকলো না। শীতির জ্বালায় কাজও করতে পারি না, না খায়ে আছি।’
মাগুরা শহরের প্রধান সড়কের সামনে দাঁড়িয়ে এই কথাগুলো বলছিলেন ভ্যানচালক শুকুর মোল্যা (৪২)। তার বাড়ি মাগুরা শহরের ওয়াপদা গ্রামে। ভ্যান চালিয়ে ছয় সদস্যের সংসার চালাতে হয় তাকে। কিন্তু বর্তমানে শীতে করোনার সংক্রমণ বাড়ার কারণে রাস্তায় লোক সমাগম কম। তাই ভাড়া না পেয়ে পরিবার নিয়ে প্রায়ই না খেয়ে থাকতে হচ্ছে শুকুর মোল্যাকে। কুয়াশা আর হিমেল বাতাসে গরম কাপড়ের অভাবে ঠাণ্ডায় কাঁপছিলেন তিনি।
শুধু শুকুর মোল্যাই নন, শীতে জবুথবু হয়ে পড়েছে শহরবাসী। স্বল্প আয়ের মানুষ শীতবস্ত্রের অভাবে খড়কুটা জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। গত দুদিনে ঘন কুয়াশায় সূর্যের দেখা মেলেনি। তীব্র শীতের জন্য জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না। এতে সবচেয়ে বেকায়দায় পড়েছেন খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ। পেটের দায়ে কাজের আশায় ঘর থেকে বের হয়েও কাজ না পেয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরছেন অনেকে।
শুকুর মোল্যার পাশে বসা আবাল পুরের আজিজ (৪৫) ও বেলনগরের বরকত হোসেন (৪৪) বলেন, ‘করোনার সঙ্গে শীতের কারণে মাগুরা জেলার অনেক ভ্যানচালক, নির্মাণ শ্রমিক ও বিভিন্ন কাজের দিনমজুর বেকার হয়ে পড়েছেন। তারা এই সময় খুব মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অনেকেই পরিবার পরিজন নিয়ে না খেয়ে আছেন। শীতের প্রাদুর্ভাবে বিভিন্ন রোগবালাইয়ে ভুগছেন অনেকে। এসব দেখার কেউ নেই।’
রামনগরের ভ্যান চালক শুকুর মিয়া বলেন, ‘ভ্যান চালিয়ে দৈনিক ৩০০-৪০০ টাকা আয় করে সংসার চালাচ্ছি। কিন্তু শীতের কারণে আয়-রোজগার বন্ধ, সংসার চালাবো কী দিয়ে? তার ওপর আবার শইলডাও ভ্যালা না। ওষুদ যে কিনি খাবো সে পয়সাও নাই। আয় না করতে পারলে ছেলেমেয়েদের নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে, তাই ওষুদের চিন্তা বাদ দিসি।’
ভায়না মোড়ের আলতাফ মিয়া বলেন, ‘করোনায় কারণে ব্যবসা নাই। এখন শীতের কারণে ব্যবসায় আরও মন্দা চলে। তাই দোকান খুলব বিকেলে। যা দুই পয়সা বেঁচাবিক্রি হয়, তাই দিয়ে কোনো রকমে চলছি। কিন্তু এভাবে আর কতোদিন?’
জেলা শহরের নতুন বাজার এলাকার রাস্তার পাশের চা-দোকানি, চশমা বিক্রেতা, চর্মকার ও রিকশাচালকদের সঙ্গে কথা বলে প্রায় একই ধরনের অভিব্যক্তি পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে মাগুরা জেলা প্রশাসক ড. আশরাফুল আলম জানান, মাগুরার দরিদ্র শীতার্তদের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। সেইভাবে শীত এখনো পড়েনি। শীত পড়ার সঙ্গে সঙ্গে দরিদ্র শীতার্তদের সহায়তা করা হবে। শীতে কেউ কষ্ট পাবেন না। শীতবস্ত্রের পাশাপাশি পর্যাপ্ত নগদ অর্থ বরাদ্দ আছে। তাও পর্যায়ক্রমে দরিদ্রদের দেওয়া হবে।
মাগুরা/বুলাকী