ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

‘আর কখনো হৈ-হুল্লুড়ে বাড়ি মাতিয়ে রাখবে না রাধে’

মো. আবু কাওছার আহমেদ, টাঙ্গাইল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:০১, ৪ ডিসেম্বর ২০২০   আপডেট: ০৩:৫৩, ৫ ডিসেম্বর ২০২০
‘আর কখনো হৈ-হুল্লুড়ে বাড়ি মাতিয়ে রাখবে না রাধে’

মানিকগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ‌্য কমপ্লেক্সের সামনে ৭ জনের লাশ

আর কখনোই পুরো বাড়ি মাতিয়ে রাখবে না টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার চাষা ভাদ্রা গ্রামের শিশু রাধে বাদ‌্যকার। ডায়রিয়া হওয়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে নিয়ে যাচ্ছিলেন পরিবারের সদ‌স‌্যরা। কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি করার আগেই পথিমধ্যেই তার প্রাণ কেড়ে নিলো বাস। শুক্রবার (৪ ডিসেম্বর) মানিকগঞ্জ-দৌলতপুর সড়কের মুলাকান্দি এলাকায় এক সড়ক দুর্ঘটনায় তার সঙ্গে প্রাণ গেলো পরিবারের আরও ৫ সদস‌্যের। এখন তাদের ঠাঁই মিললো মানিকগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ‌্য কমপ্লেক্সে।   

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বাকিরা হলেন, রাধে বাদ‌্যকারের বাবা গোবিন্দ বাদ‌্যকার (২৮), মা ববিতা বাদ‌্যকার (২৫), দাদা  হরে কৃষ্ণ বাদ‌্যকার (৫৫), হরে  কৃষ্ণ বাদ‌্যকারের চাচি খুশি বাদ‌্যকার (৫২) ও হরে কৃষ্ণের চাচাতো ভাই রামপ্রসাদ বাদ‌্যকার (৩০)। এছাড়া, একই ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন তাদের বহনকারী সিএনজির চালক জামাল শেখ (৩০)।   

রাধে বাদ‌্যকারের দাদি ঝর্ণা বাদ্যকার বলেন, ‘আমার নাতনি রাধে দিনমান হৈ-হুল্লোড় করে সারা বাড়ি মাতিয়ে রাখতো।  আর কখনোই তার হৈ-হুল্লোড়-হাসিতে এই বাড়ি আর মাতবে না। চিরদিনের জন‌্য স্তব্ধ হয়ে গেলো।’ তিনি বলেন,  ‘বৃহস্পতিবার (৩ ডিসেম্বর) থেকে পাতলা পায়খানা শুরু হয় রাধের। শুক্রবার অবস্থার অবনতি হলে তাকে মানিকগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। এরপর আজ দুপুরে সিএনজি যোগে পরিবারের সদস‌্যরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিল। পথে  মুলাকান্দি এলাকায় তাদের সিএনজিকে ধাক্কা দেয় একটি বাস। এই সময় রাধেসহ পরিবারের ৬ জন প্রাণ হারায়।’

ঝর্ণা বাদ্যকার  বলেন, ‘আমার স্বামী হরেকৃষ্ণ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালাতেন। আমাদের দুই মেয়ে এক ছেলে। দুই মেয়ের অনেক আগে বিয়ে হয়েছে। তারা এখন স্বামীর বাড়িতে। আর একমাত্র ছেলে গোবিন্দ বাদ্যকার সেলুনে কাজ করতো।  সংসার চলতো আমার স্বামী ও ছেলের  আয়ে। গোবিন্দের একটি মাত্র সন্তান ছিল, রাধে বাদ্যকার। আজ এক দুর্ঘটনায় সব শেষে।’

‘পরিবারের আর কেউ রইলো না’ উল্লেখ করে বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে ঝর্ণা বাদ্যকার বলেন, ‘আমি এখন কাকে নিয়ে বাঁচবো? কেন এমন হলো। সৃষ্টিকর্তা কেন তাদের এভাবে কেড়ে নিয়ে গেলেন?’ তিনি আরও বলেন, ‘দুর্ঘনায় তাদের অনেক কষ্টে মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুতে তাদের যে পরিমাণ কষ্ট হয়েছে, ময়নাতদন্ত করে যেন তাদের আর কষ্ট না দেওয়া হয়। ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশগুলো ফেরত চাই।’
 
নাগরপুর ভাদ্রা ইউনিয়নের সংরক্ষিত আসনের সদস্য মোসা. গোলেনূর বেগম বলেন, ‘তাদের মৃত্যুর খবরে এলাকা শোকে স্তব্ধ। হরেকৃষ্ণের পরিবারকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।’ 

ইউপি সদস্য মো. বেল্লাল সর্দার বলেন, ‘জীবনে অনেক দুর্ঘনটার খবর শুনেছি। এ রকম মর্মান্তিক দুর্ঘটনার কথা শুনিনি। জীবনে প্রথম একই পরিবারের ৬ জনের মৃত্যুর সংবাদ পেলাম। আমার এলাকার মানুষ এই লাশগুলোর ভার সইতে পারবে না। এই মৃত্যুর খবরে বারবার সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলছেন ঝর্ণা বাদ‌্যকার। তাকে দেখার আর কেউ রইলো না।’

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. হাবিবুর রহমান খান বলেন, ‘অদক্ষ চালক ও গাড়ির বেপরোয়া গতির কারণে হাসপাতালের পরিবর্তে মর্গে যেতে হলো হরেকৃষ্ণের পরিবারের সদস্যদের।’ চালকরা সড়ক আইন না মানার কারণেই এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে বলেও তিনি মন্তব‌্য করেন। 

টাঙ্গাইল/এনই 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়