ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

রাজাকার স্বামীর বীরাঙ্গনা স্ত্রী

মেহেরপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:১৩, ৫ ডিসেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৭:২০, ৫ ডিসেম্বর ২০২০
রাজাকার স্বামীর বীরাঙ্গনা স্ত্রী

অনেক চেষ্টা করেও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মেলেনি মেহেরপুরের বীরাঙ্গনা জাহানারা খাতুন ওরফে ঈশা’র। সেই কষ্ট মনে চেপে রেখেই নীরবে চলে গেলেন না-ফেরার দেশে। এমনকি জীবদ্দশায় জীবনযাপনের জন্যও তাঁকে করতে হয়েছে কঠোর সংগ্রাম। কখনও ছিট কাপড়ের ফেরিওয়ালা, কখনও আবার শহরের অলিগলিতে ঘুরে শিলপাটা বিক্রি করেছেন। তারপরও পাননি সমাজ, রাষ্ট্র এমনকি কোনো রাজনৈতিক দলের সহানুভূতি। মৃত্যুর পর জানাজা বা দাফনের সময়ও পাননি রাষ্ট্রীয় মর্যাদা। কারণ রাষ্ট্র তাঁকে বীরাঙ্গনা স্বীকৃতি দেয়নি।

এই না-পাওয়ার বেদনা নিয়েই ঈশা শহরের কোর্টপাড়ায় নিজ বাড়িতে অসুস্থ অবস্থায় গত ২৪ নভেম্বর মারা যান। জানা যায়, পাক হানাদারদের পাশবিক নির্যাতনের শিকার হন ঈশা। ১৭ বছর বয়সে ১৯৭০ সালে পিরোজপুর গ্রামের আবুল খাঁর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। এরই মধ্যে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। আবুল খাঁ রাজাকারের খাতায় নাম লেখান। বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি ঈশা। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মে মাসে রাজাকার স্বামীর শারীরিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসেন তিনি। এ সময় পাকসেনারা ঈশাকে ধরে নিয়ে যায় মেহেরপুর কোর্ট চত্বর ক্যাম্পে। এখানেই পাকসেনা কর্তৃক সম্ভ্রম হারান ঈশা। এই লজ্জায় তিনি আর গ্রামে ফিরতে পারেননি। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে গ্রামে ফিরে এলেও একমাত্র ভাই ফরজ আলী আশ্রয় দেননি। আবুল খাঁ তাঁকে ছুঁড়ে ফেলে দেন পথে।

জীবন যুদ্ধে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন ঈশা। বিয়ে করেন মান্নান খাঁ নামে এক মোটর সাইকেল মেকানিককে। কিন্তু এখানেও কপালে সুখ সইলো না। মান্নান খাঁও তাঁকে ত্যাগ করেন। এরপর নিজেই নিজের দায়িত্ব নেন ঈশা। ততদিনে কোলে এসেছে একমাত্র ছেলে মামুন। এই ছেলেকে ঘিরেই বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখতেন তিনি। অনেকের পরামর্শে আরেকটু ভালোভাবে বাঁচার আশায় জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ড অফিসে যোগাযোগ করেন। কিন্তু পূরণ হয়নি মনের আশা। মামুন বলেন, ‘আমার মায়ের মৃত্যুতে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বা রাষ্ট্রের কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তি উপস্থিত হননি। আমি মনে করি, মুক্তিযুদ্ধে আমার মায়ের ভূমিকা নিয়ে রাষ্ট্র যথাযোগ্য মূল্যায়ন করেনি।

মহাসিন আলী/তারা

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়