ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

তাঁবুতেই মানবেতর জীবনযাপন

ফরহাদ হোসেন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:২৩, ১২ ডিসেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৪:১০, ১২ ডিসেম্বর ২০২০
তাঁবুতেই মানবেতর জীবনযাপন

মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে লক্ষ্মীপুর জেলার বেদে সম্প্রদায়। তারা তাবিজ-কবজ বিক্রি ও সাপের খেলা দেখায়। আর এটিই তাদের আয়ের একমাত্র অবলম্বন। একটু ভালো থাকার আশায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করে এসব বেদেরা।

সড়ক কিংবা পতিত জমিতে পলিথিনে মোড়ানো ছোট ছোট তাঁবুতে তাদের বসবাস। জীবিকার প্রয়োজনে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছুটতেই জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটে তাদের। দু-মুঠো খাবার জোগাড় করতে গিয়ে সন্তানদের শিক্ষিত করার কথা কল্পনাও করতে পারেন না তারা। এজন্য শিক্ষাহীন ও অসচ্ছলতার মধ্যদিয়েই কাটে তাদের জীবন।

আবার অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়া হয় এখানকার ছেলে-মেয়েদের। ফলে সন্তান জন্মদানে এখানকার মায়েদের মৃত্যুঝুঁকি বেশি। লক্ষ্মীপুর জেলার সদর, রায়পুর ও কমলনগর উপজেলার কয়েকটি বেদে তাবু ঘুরে এমনটি জানা গেছে।

বেদেরা জানান, মৌসুম অনুযায়ী খাল কিংবা নদীর পাড়ে তারা তাবু পেতে ক্ষণস্থায়ীভাবে বাস করেন।  তাদের জন্ম-মৃত্যু, বিয়েসহ নানা অনুষ্ঠান এ তাবুতেই। দিনভর তাবিজ কবজ, শিঙা দেওয়া, সাপের খেলা দেখানো ও বাসন-কোসনসহ হরেক রকমের জিনিস ফেরি করে বেড়ান। সন্ধ্যার আগেই তাঁবুতে ফেরেন। সারাদিনে পুরুষ ও নারী বেদেরা ২০০ থেকে আড়াইশ টাকা উপার্জন করেন। 

সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের ছটকির সাঁকো এলাকায় বেদে তাঁবুর জামাল মিয়া জানান, একসময় বাবা-মায়ের সঙ্গে কুমিল্লার দাউদকান্দি সড়কের পাশে বেদে তাঁবুতে ছিলেন। প্রায় দশ বছর আগে আমেনাকে বিয়ে করে লক্ষ্মীপুরে চলে আসেন।  বর্তমানে তার দুটি সন্তান রয়েছে।

একই তাঁবুর রেশমা খাতুন জানান, পলিথিনের তাঁবুতে স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।  আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে ইচ্ছা থাকলেও কোথাও স্থায়ী বাসের ব্যবস্থা করতে পারছেন না। এছাড়া জাতীয় পরিচয়পত্র ও স্থায়ী ঠিকানা না থাকায় সন্তানদের পড়ালেখা করানোও সম্ভব হচ্ছে না।

রেশমা জানান, বয়স্ক, বিধবা, মাতৃত্বকালীন ভাতাসহ সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত তারা। কেউ তাদের খবর রাখে না।

মনির মিয়া নামে অন্য এক বেদে জানান, যেসব কাজের মাধ্যমে তারা জীবিকা নির্বাহ করেন, এসবের চাহিদা দিন দিন কমে আসছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে তাদের জীবিকা। এখন অনেকেই খুঁজছেন বিকল্প পেশা। তবে সরকারের সদিচ্ছা থাকলে সেটি সহজ হতো। 

এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক অঞ্জন চন্দ্র পাল বলেন, ‘সমাজে পিছিয়ে পড়া বেদেদের প্রতি সবার সুদৃষ্টি দেওয়া উচিত।  এছাড়া সরকারিভাবে সম্প্রদায়টির প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। যেন তারা আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠতে পারে।’

লক্ষ্মীপুর/টিপু

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়