ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

আখ চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা

মামুন চৌধুরী  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৫২, ১৩ ডিসেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৩:৩৭, ১৩ ডিসেম্বর ২০২০

হবিগঞ্জ জেলার বাহুবলের চিলানী গ্রামের চাষি আব্দুল্লাহ মিয়া। এই মৌসুমে তিনি আমন চাষ করতেন। তাতে খরচ উঠলেও লাভের মুখ দেখছিলেন না।

তাই ২ বছর ধরে আমন ছেড়ে নিজের ৬০ শতক জমিতে আখ চাষ করছেন তিনি। চাষাবাদ বাবদ ৩০ হাজার টাকা খরচ বাদ দিয়ে গত মৌসুমে প্রায় দেড় লাখ টাকা লাভ হয়েছে। এ মৌসুমেও দেড় লাখ টাকা লাভ হবে বলে জানান তিনি।

সরেজমিন পরিদর্শনের পর আলাপকালে এ চাষি বলেন, ‘আমি ইশ্বরদী-৪২ জাতের আখ চারা রোপণ করে ব্যাপক ফলন পেয়েছি। আমার মতো এলাকার অন্যান্য চাষিরাও আখ চাষে উৎসাহিত হয়েছেন। তারাও এ জাতের আখ চাষ করে বেশ লাভবান হয়েছেন। এছাড়া, আখ চাষে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীমুল হক শামীম আমাকে নিয়মিত উৎসাহ দেন। তার নির্দেশনা মতো চাষ করে আমার খুব উপকার হয়েছে।’

চাষি আব্দুল্লাহ মিয়া বলেন, ‘ইশ্বরদী-৪২ জাতের আখ খেতে সুস্বাদু ও রসে ভরপুর থাকে। রোদ ও বৃষ্টিতে এ ফসলের তেমন কোনো ক্ষতি হয় না। মাড়াই করে রস থেকে লালি গুড় ও গুড় বিক্রি করা যায়। এছাড়া, পাইকাররা বাড়ি এসে এ আখ ক্রয় করে। ব্যবসায়ীরা এ আখ ক্রয় করে মেশিনে মাড়াই করে রস বিক্রি করতে করে। তাই এর চাহিদা রয়েছে।’

লাভ ভালো হওয়ায় আব্দুল্লাহ মিয়ার মতো উপজেলার তগলী গ্রামের চাষি পলাশ মিয়া ৬০ শতক, একই গ্রামের ইয়াসিন মিয়া ১২০ শতক, আবদাশতানন্দ গ্রামের চাষি আব্দুল কদ্দুছ মিয়া ৩০ শতক জমিতে আখের চাষ করেছেন। এছাড়া, আরও অনেক চাষি এখন আখ চাষে ঝুঁকছেন।

বাহুবল উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের হিসেবে, পুরো উপজেলায় এখন প্রায় ১০ হেক্টর জমির আখ চাষের জন‌্য ৩০ জনের বেশি চাষি রয়েছেন। পাঁচ বছর আগেও এই সংখ্যা ছিল ১০ থেকে ১৫ জন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে জেলার প্রায় ৪০০ হেক্টর জমিতে আখের চাষ করা হয়েছে। এক সময় জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, চুনারুঘাট ও মাধবপুর উপজেলাজুড়ে আখের ব্যাপক ফলন হচ্ছিল। প্রায়  ৮ থেকে ১০ আগে হঠাৎ করে আখ কমতে শুরু করে।  কৃষি বিভাগের উৎসাহ পাওয়ায় আবার দুই থেকে তিন বছর হলো চাষিরা আখ চাষে ঝুঁকছেন। বছর বছর লাভ হতে থাকায় কৃষকরা খুশি।

উপজেলার তগলী গ্রামের চাষি পলাশ মিয়াসহ আরও কয়েকজন  চাষি জানান, প্রতিবছর আমনের চাষ করতেন তারা। কয়েক বছর ধরে ধানের দাম না পাওয়াতে বিকল্প ফসল আবাদের চিন্তা করতে থাকেন তারা। এরপর মধ্যে কয়েক মৌসুম থেকে আখের চারা লাগাতে চাষ শুরু করেন। এখন আখ থেকে তাদের ভালোই আয় হচ্ছে।

সরেজমিনে চিলানী গ্রামে দেখা গেছে, আব্দুল্লাহ মিয়ার জমিতে লাগানো আখের বেশ ভালো ফলন হয়েছে। আখ মাড়াইয়ের সময় হয়েছে। গত বছরের ন্যায় এ বছরও আখ মাড়াই করার প্রস্তুতি নিয়েছেন চাষি আব্দুল্লাহ মিয়া।

কথা হয় তগলী গ্রামের চাষি পলাশ মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন,  ‘আশপাশের সব জমিতে আখের চাষ হয়েছে। অনেকেই খেত থেকেই আখ বিক্রি করছেন। আমিও ৬০ শতকে চাষ করেছি। ফলন ভালো হওয়ায় চড়া দাম পাওয়া যাচ্ছে।’

চাষি ইয়াসিন মিয়া বলেন, ‘এবার আখের ফলন ভালো হয়েছে। আমি ১২০ শতকে চাষ করেছি। আমনে খরচ হতো ৫০ হাজার, আখেও একই খরচ। ৪০ হাজার টাকার আখ বর্তমানে বিক্রি করেছি। খেতের সব আখ বিক্রি করে আরও অন্তত দুই লাখ টাকা পাওয়া যাবে। গত বছরও এ রকম লাভ হয়েছে।’

ইয়াসিন মিয়া আরও বলেন, ‘প্রতি বিঘা (৩০ শতক) খরচ গড়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। প্রতি বিঘাতে আখের সংখ্যা হয় গড়ে প্রায় দুই হাজার। প্রতিটি আখের বর্তমান দাম ৩০ থেকে ৪০ টাকা। চাষিরা পরিপক্ব আখ তুলে খেতের পাশে জড়ো করছেন। ব্যবসায়ীরা খেত থেকেই আকার অনুযায়ী কিনে নিচ্ছেন।’

আখ কিনতে আসা ব্যবসায়ী মো. সিরাজ মিয়া বলেন, ‘খেত থেকে তোলা প্রতিটি আখ অনুমান করে দরদাম করা হয়। এরপর সেই আকারের আখ আলাদা করে গাড়িতে করে বাজারে নেওয়া হয়। বড় আকারের প্রতিটি আখ ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়।’

উপজেলার দ্বিমুড়া কৃষি ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীমুল হক শামীম জানান, উপজেলায় গত কয়েক বছর ধরে আখ চাষ বাড়ছে। দক্ষতা, পরিচর্যা, সঠিকভাবে সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করলে আখের ফলন ভালো হয়। এতে ভালো দামও পাওয়া যায়।

বাহুবল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবদুল আউয়াল জানান, উপজেলায় চাষিরা আখ চাষে আবারও ঝুঁকছেন। এক সময় আখ ছেড়ে চাষিরা অন্যান্য ফসল চাষ করছিলেন। লাভজনক হওয়ায় আবারও আখ চায়ে তারা ফিরে এসেছেন। সাধ্য অনুযায়ী তাদেরকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. তমিজ উদ্দিন খান জানান, আখ ও এর গুঁড়ে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন। তাই জেলায় আখের চাহিদা রয়েছে। চাহিদা মেটাতে আখ চাষে চাষিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া, আখ চাষে ঝুঁকি নেই বলে আখ চাষ করে ভালো লাভবান হবেন কৃষক।

হবিগঞ্জ/বুলাকী

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়