ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

এই মৌসুমে তামাক চাষ বন্ধে পদক্ষেপ নেয়ার এখনই সময়

ফারুক আলম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:০১, ১৮ ডিসেম্বর ২০২০   আপডেট: ০৪:০৯, ১৮ ডিসেম্বর ২০২০
এই মৌসুমে তামাক চাষ বন্ধে পদক্ষেপ নেয়ার এখনই সময়

ধান কাটা শেষ। এখন জোড় প্রস্ততি চলছে অন্য ফসল চাষের। ভুট্টা, তামাক, আলুসহ অন্যান্য ফসল। এরকম চাষাবাদেই অভ্যস্ত উত্তরজনপদের কৃষক সমাজ।

তবে, হরেক ফসলের ভীড়ে মাঠসহ কৃষকের আঙিনা পর্যন্ত কিছুদিনের মধ্যে ম ম   করবে তামাক পাতার বিষাক্ত ঘ্রাণ। হলদে-সবুজ বিষাক্ত এই তৃণগাছ দখল করবে লালমনিরহাটের কৃষিজমির সিংহভাগ অঞ্চল।

উত্তর জনপদগুলোর মধ্যে লালমনিরহাট জেলায় সব থেকে বেশি তামাক চাষ হয়। এই মৌসুমে বিকল্প অন্য অনেক ফসল চাষের সম্ভাবনা থাকলেও, ফের বছর তামককেই বেছে নিচ্ছে লালমনিরহাটের কৃষকরা।

অথচ তামাক চাষে যে শ্রম ব্যায় হয় তা অবর্ণনীয়। বীজতলা তৈরি থেকে শুরু করে তামাক পাতার বাজারজাত করা পর্যন্ত কয়েকটি ধাপে পুরো পরিবারকেই অনেক কষ্ট-ভোগান্তি পোয়াতে হয়।

বীজতলা তৈরির পর তামাকের চারা তুলে জমিতে রোপন করতে হয়। কুয়াশা, আগাছা, পাতাপঁচা রোগসহ বেশ কয়েকটি বালাই দমন করতে সকাল-সন্ধ্যা ক্ষেতে শ্রম দিতে হয়। তামাক চারা বড় হওয়ার পরে তামাকে ডেমু (ছোট পাতা), বিষপাতা (ছোটপাতা) ভাঙাসহ অনেক রকম পরিচর্যা করতে হয় পরিবারসুদ্ধ।

আর যে শ্রম ব্যায় হয় তামাক চাষে, তা অন্য অনেক কাজের তুলনায় বেশি এবং এই শ্রম ব্যায়ের তুলনায় তামাক চাষে প্রকৃত লাভ অনেক কম বলে মনে করেন বিশিষ্ট মহল।

কিন্তু তামাক কম্পানিগুলোর ফ্রিতে বীজ, ধারে সার, টাকা দেয়াসহ তামাক ক্রয়ের মতো নিশ্চয়তা প্রদান করে। যার ফলেই মূলত তামাক চাষে ঝুকে পড়ে কৃষক।

কিন্তু তামাক বাজারজাত করার এই নিয়মের মধ্যেই কম্পানিগুলোর নব্য নীলকর প্রথা চক্রের আকটে যায় কৃষকরা। আদি বা গ্রাম্য নিয়মে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় তামাক পাতা শুকাতে হয়। তাপমাত্রার কম-বেশিতে পাতা নষ্ট বা রং পরিবর্তন হতে পারে। এতো কিছুর পরেও তামাকের বাজারের টাকা হাতে পেতে বেগ পেতে হয়।

শ্রম, বালাই, স্বাস্থ্য ঝুঁকি, কম্পানির চক্রসহ সব কিছু উপেক্ষা করেই নব্য এই নীলকর প্রথায় ঢুকে যায় কৃষক। শুধু ফসলের টাকাটি এক সাথে পাবার আশায়! সেখানেও তারা সহসাই হাতে টাকা পায় না। তামাক কম্পানিগুলো ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করে। কম্পানির নির্দিষ্ট রং, আকার অনুযায়ী তামাক দিয়ে টাকা হাতে পেতে সময় লাগে ৫-১০ দিন পর্যন্ত।

রায়হান শরীফ নামের একজন কৃষক তার বর্গা চাষীকে বলেন, তামাক চাষ করা যাবে না। তামাক চাষে জমির অনেক ক্ষতি হয়। তামাক ক্ষেতে পরিবার-বাচ্চা নিয়ে কাজ করতে হয়। এতে অনেক স্বাস্থ্য ঝুঁকি আছে। তামাকের পাতা গরু-ছাগলও খায় না, তাতেই বোঝা যায় কতোটা বিষাক্ত এই পাতা।

রায়হান নামের ঐ কৃষক এবং শিক্ষকে সাথে কথা বললে তিনি জানান, এই অঞ্চলে ভুট্টার অনেক সম্ভাবনা। ভুট্টা চাষে কম শ্রমে লাভও বেশি পাচ্ছি। কিন্তু ভুট্টার সঠিক নির্দিষ্ট এবং তামাক কম্পানিগুলোর মতো ক্রয় কেন্দ্র না থাকাতে তামাক চাষ অনেকটা বাধ্য হয়েই করতে হচ্ছে। তামাক কোম্পানিগুলোর মধ্যে যদি সরকার ভুট্টা ক্রয় কেন্দ্র করে, তাহলে ভুট্টার চাষ আরও বাড়বে। তামাক চাষ তখন ছেড়েই দিবে।

জেলা কৃষি দপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা হামিদুর রহমান জানান, তামাক চাষ নিরুৎসাহিত করতে আমরা কাজ করছি। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়েও আলোচনা হয়েছে। আমরা কৃষকদের অন্যান্য সব বিকল্প ফসল চাষ করতে বলছি। বিশেষ করে ভুট্টা। ভুট্টাতে তারা লাভবান হতে পারবে। তামাক চাষ নিরুৎসাহিত করতে কাজ করলেও এই মুহুর্তে কতোটা চাষ কমেছে তা বলা সম্ভব হচ্ছে না। চাষ শুরু হওয়ার পরে হয়তো বলা যাবে।

তবে, খোঁজ করতে গিয়ে জানা যায়, তামাক চাষ অনেকটাই কম হবার সম্ভাবনা রয়েছে। আফাজ উদ্দিন, কুদ্দুস মিয়া, মজিবরসহ অনেক কৃষকের সাথে কথা হয়।

আফাজ উদ্দিন গত বছর ৯০ শতাংশ জমিতে চাষ করেছিলেন। এবার মাত্র ২০ শতাংশ জমিতে তামাক চাষ করার প্রস্ততি নিয়েছেন।

কুদ্দুস মিয়া জানান, কোম্পানিগুলো বেশ কিছু তামাক ক্রয় বা ধারে সার, টাকা দেয়ার কার্ড কমিয়ে দিয়েছে। যার ফলে এবার অনেক চাষীই তামাক চাষ করছেন না।

তবে খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, তামাকা কোম্পানিগুলো এখন লালমনিরহাটের জমি উর্বরতার শেষ রসটুকু চুষে পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে নজর দিচ্ছে। লালমনিরহাট জেলা লাগোয়া কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি উপজেলা এবং রংপুর জেলার গঙ্গাচরা উপজেলা নতুন করে বেছে নিয়েছে।

ফারুক/আমিনুল

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়