ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

ব‌্যর্থ সিআইডি, কুলছুম হত্যা মামলার পুনঃতদন্ত পিবিআইতে

ফরহাদ হোসেন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:১০, ২১ ডিসেম্বর ২০২০   আপডেট: ২০:২১, ২১ ডিসেম্বর ২০২০
ব‌্যর্থ সিআইডি, কুলছুম হত্যা মামলার পুনঃতদন্ত পিবিআইতে

কুলছুম (ফাইল ছবি)

লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে চাঞ্চল্যকর শিশু কুলছুম (১০) হত্যা মামলার ঘটনার পুনঃতদন্তের জন্য পিবিআইকে আদেশ দিয়েছেন আদালত।

গতকাল রোববার (২০ ডিসেম্বর) দুপুরে মামলাটির রহস্য উদঘাটন ও আসামি সনাক্ত না করেই চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করে সিআইডি।

এ প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে বাদী পক্ষের না রাজি আবেদন মঞ্জুর ক্রমে মামলাটি পুনঃতদন্তের আদেশ দেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত রামগতির বিচারক নুসরাত জামান। 

সোমবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে এ মামলায় লিগ্যাল এইড কর্তৃক নিযুক্ত বাদীপক্ষের আইনজীবী হাছান আল মাহমুদ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
নিহত শিশু কুলছুম উপজেলার চর আলগী ইউনিয়নের চর হাসান-হোসেন গ্রামের আবদুল কাদের ও বিবি জাবেদার মেয়ে। সে একই ইউনিয়নের গোলাপ রহমানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী ছিলো।

মামলা ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১৪ মে বিকেলে প্রতিদিনের মতো খেলাধূলার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয় শিশু কুলছুম আক্তার। পাঁচ দিন পর অর্থাৎ ২০ মে ২০১৭ দুপুরে কুলছুমদের বাড়ি থেকে প্রায় ৫০০ গজ দূরে পার্শ্ববর্তী মুরাদ মিয়ার ছাড়াবাড়ী থেকে কুলছুমের টুকরা করা অর্ধ গলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। 

তবে অজ্ঞাত কারণে ময়নাতদন্ত না করে লাশ ফেলে চলে যান রামগতি থানার তৎকালীন অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ইকবাল হোসেন ও এস আই মো. সাইদুর রহমান। এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে কুলছুমের পরিবার ও এলাকাবাসী পুলিশের উদ্ধারকারী ব্যাগসহ কুলসুমের টুকরা করা অর্ধগলিত লাশ দাফন করেন। 

পরবর্তীতে বিষয়টি বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় প্রচার ও প্রকাশিত হয়। একই সময় কুলছুমের মায়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে পুলিশের লাশ উদ্ধার ও লাশ ফেলে যাওয়ার ঘটনা বাদ দিয়ে ওই বছরের ২৪ মে রামগতি থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু হয়। তৎকালীন ওসি ইকবাল হোসেন লাশ ফেলে আসা সেই এসআই মো. সাইদুর রহমানকেই মামলাটির তদন্তভার প্রদান করেন। 

পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশে ও ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে কবর থেকে কুলছুমের লাশ তুলে ময়নাতদন্তের জন্য লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়। একই সঙ্গে ভিকটিম সনাক্তের জন্য ডিএনএ পরীক্ষাও করা হয়।

ইতোমধ্যে তৎকালীন পুলিশের গাফিলতি ও কালক্ষেপণে মামলার অনেক আলামত নষ্ট হয়েছে। এরইমধ্যে বেশ কয়েক মাস পেরিয়ে গেলেও মামলার তদন্তে তেমন অগ্রগতি হয়নি। 

২০১৭ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর মামলাটির তদন্তভার সিআইডিতে অর্পণ করে পুলিশ হেড কোয়ার্টার। সিআইডিতে স্থান্তারের পর কয়েকজন তদন্তকারী কর্মকর্তা বদল হলেও বদল হয়নি মামলার তদন্তের অবস্থা। ইতোমধ্যে সিআইডি এ মামলায় রিয়াজ ও গিয়াস উদ্দিন নামের ভিকটিমের দুই প্রতিবেশীকে সন্দেহজনক আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেয়। তবে তাতে কোন ফল হয়নি। শেষ পর্যন্ত রহস্য উদঘাটন ও আসামি সনাক্তে ব্যর্থ হয়ে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে সিআইডি।

এদিকে বাবি দরিদ্র ও মামলার খরচ জোগাড়ে অক্ষম হওয়ায় আইনগত সহায়তা পাওয়ার জন্য চলতি বছরের ২ ডিসেম্বর জাতীয় আইন সহায়তা প্রদান সংস্থা, লক্ষ্মীপুর জেলা কমিটি বরাবরে আবেদন করেন। বাদীর আবেদনের প্রেক্ষিতে কমিটির সদস্য সচিব সিনিয়র সহকারী জজ ফাহাদ বিন আমিন চৌধুরী ওই মামলাটিতে বাদিকে আইনগত সহায়তা দেওয়ার জন্য প্যানেল আইনজীবী হাছান আল মাহমুদকে নিয়োগ প্রদান করেন।

নিয়োগ প্রাপ্তির পর আইনজীবী বাদি পক্ষের আরজী, ১৬১ ধারার জবানবন্দীসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পর্যালোচনাক্রমে সিআইডির দাখিলকৃত চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি আবেদন দাখিল করেন। 

আদালত সরকার পক্ষ, লিগ্যাল এইড কর্তৃক নিযুক্ত বাদীর আইনজীবী ও সন্দেহভাজন আসামিপক্ষের আইনজীবীদের শুনানি শেষে সিআইডির দাখিলকৃত চূড়ান্ত প্রতিবেদন না মঞ্জুর করেন এবং বাদির নারাজি আবেদন মঞ্জুর করে পিবিআই নোয়াখালীকে মামলাটি পুনরায় তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার আদেশ প্রদান করেন।

লক্ষ্মীপুর/সনি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়