ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

‘সাপের সঙ্গে হেসে-খেলে বড় হয়েছি’

এনাম আহমেদ, বগুড়া || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৩৯, ২২ ডিসেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৪:০৩, ২২ ডিসেম্বর ২০২০

‘আমাদের জীবন কখনো সুখের ছিলো না। আমরা এখানে যারা আছি, তাদের কারো মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু নেই। জন্মের পর থেকে ভেসে বেড়াচ্ছি আমরা। আজ এখানে, কাল সেখানে। ছোট থেকে সাপের সঙ্গে হেসে-খেলে বড় হয়েছি।’

এভাবে নিজেদের কথা বলছিলেন বেদেনী শ্রাবন্তী। শ্রাবন্তীসহ ৪০ জনের একদল বেদে আট দিন আগে বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার কালীতলা গ্রোয়েন বাঁধ সংলগ্ন যমুনার তীরে আবাস গেঁড়েছেন। তাদের সর্দার নতুন ঠিকানা ঠিক না করা পর্যন্ত আরও কিছু দিন তাদের এখানে থাকতে হবে। দলে ২০টি পরিবারে ৩০ জন নারী-পুরুষ, ১০টি শিশু, আটটি সাপ আর একটি ময়না পাখি রয়েছে। 

প্রত্যেক বেদে দলে একজন সর্দার থাকেন। এই সর্দার সবার অভিভাবক। তার নির্দেশনায় চলে সবকিছু। সবাই তাকে মেনে চলে, সম্মান করে। নিজেদের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ মীমাংসা থেকে শুরু করে বিয়ে-শাদীও করান এই সর্দার। সর্দারই নির্ধারণ করেন তাদের দল কখন কোন এলাকায় যাবে। বেদেরা নিজেদের প্রয়োজনে এক এলাকায় এক থেকে দেড় মাসের জন্য বসতি গড়ে। এরপর নতুন এলাকায় চলে যায়। 

বেদে সর্দার সানাউল্লাহ বলেন, তাদের পৈত্রিক বাড়ি ঢাকার সাভারে। সেখানে আরও অনেক বেদে আছে। তাদের মধ্যে যারা পৈত্রিকসূত্রে জমি পেয়েছেন, তারা সেখানে বাড়িঘর করে ব্যবসা অথবা অন্য পেশায় রয়েছেন। এই ৪০ জনের কারও বাড়িঘর নেই। 

বেদে সর্দার বলেন, শীতকালে তাদের আয় কমে যায়। ঠান্ডায় সাপের খেলা দেখানো যায় না। সাপ ধরাও অনেক কমে যায়। একটি সাপ ধরলে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকায় বিক্রি করেন। সারিয়াকান্দিতে আসার পর মাত্র একটি বড় গোখরা ধরতে পেরেছেন। এখন দু’বেলার খাবার যোগানোর জন্য তাদের মানুষের কাছে হাত পাততে হচ্ছে।

বেদেনী শ্রাবন্তী বলেন, সাপ খেলা, দাঁতের পোকা তোলা এবং শিঙ্গা লাগিয়ে অনাদর-অবহেলার মধ্যেও আগে তারা ভালো ছিলেন। তখন মানুষ দলবেঁধে খেলা দেখতেন। ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা আয় হতো প্রতিদিন। এখন ২০০ টাকা রোজগার করাও কঠিন হয়ে পড়েছে। যে কারণে মানুষের কাছে হাত পাততে হচ্ছে। 

শ্রাবন্তী বলেন, ‘আমাদেরও স্বপ্ন আছে। আমরাও চাই একটু সুখে-শান্তিতে থাকতে। এই যাযাবর জীবন ছেড়ে অন্য সম্মানজনক পেশায় যেতে। কিন্তু কাজ দেবে কে? আমরা শিক্ষাবঞ্চিত। শিক্ষা নেই বলে কোথাও গিয়ে কাজ করতে পারি না। বাসাবাড়িতে ঝিঁয়ের কাজেও কেউ দিতে চায় না।’  

বেদেনী শ্রাবন্তী বলেন, ‘আমাদেরও ইচ্ছে করে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করাতে। কিন্তু আজ এখানে, কাল সেখানে যাওয়ার কারণে সেটা করতে পারি না।’ 

বগুড়া সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু সাঈদ মোহাম্মদ কাওসার রহমান বলছেন, সরকারের বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের জন্য কর্মসূচি রয়েছে। কোন কোন জেলায় বেদেরা স্থায়ীভাবে বসবাস করছে এর জরিপও আছে। এই জরিপের অন্তর্ভুক্ত বেদেরা বয়স্ক ভাতা পাওয়া ছাড়াও তাদের আয়বর্ধক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয় সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে।  

উপ-পরিচালক বলেন, যে সব বেদে যাযাবর জীবনযাপন করে,  তাদের জন্য কিছু করা সম্ভব হয় না। তবে তারা যে এলাকার ভোটার, সেই এলাকা থেকে এই সুবিধাগুলো পেতে পারে। 
 

ঢাকা/বকুল 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়