ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

মহিলা অধিদপ্তরের ২ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিয়োগবাণিজ‌্যের অভিযোগ

অমরেশ দত্ত জয়, চাঁদপুর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:২৯, ৩১ ডিসেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৭:৩০, ৩১ ডিসেম্বর ২০২০
মহিলা অধিদপ্তরের ২ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিয়োগবাণিজ‌্যের অভিযোগ

চাঁদপুর ‘মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর’-এর  ২ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিয়োগবাণিজ‌্যের অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্তরা হলেন, অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রাফিয়া ইকবাল ও প্রোগ্রাম অফিসার সাজিয়া আফরিন। এই ২ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা ‘জীবিকায়নের জন্য মহিলাদের দক্ষতা ভিত্তিক প্রশিক্ষণ’ প্রকল্পে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অর্থের বিনিময়ে গোপনে ৫ জনকে নিয়োগ দিয়েছেন। অথচ, চাকরিপ্রার্থী সবাইকে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেননি। এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন এই ২ কর্মকর্তা। আর জেলা প্রশাসন বলছে, চাইলে ভুক্তভোগীরা আইনি লড়াইয়ের পথে যেতে পারেন। 

প্রকল্পে প্রশিক্ষক পদে চাকরিপ্রার্থী ছিলেন কম্পিউটার প্রশিক্ষক সোহেল রানা ও ব্লক-বাটিক প্রশিক্ষক শামীমা নাসরিন। এছাড়া, দর্জি বিজ্ঞান প্রশিক্ষক সালমা আক্তার, বিউটিফিকেশন প্রশিক্ষক রুমা আক্তার নামে আরও দুই চাকরিপ্রার্থী ছিলেন।  

ব্লক-বাটিক প্রশিক্ষক শামীমা নাসরিন জানান, তিনি ২০১৭ সালের ৭ ডিসেম্বর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে মহিলা অধিদপ্তরে  আবেদন করেন। তবে, ওই নিয়োগপ্রক্রিয়া তখন স্থগিত করা হয়।  এরপর  ২০২০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর নতুন করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয় অধিদপ্তর। আগের আবেদনকারীদের নতুন করে আবেদন করার প্রয়োজন নেই বলেও উল্লেখ করা হয়েছিল বিজ্ঞপ্তিতে। এই কারণে শামীমা নাসরিন নতুন করে আর আবেদন করেননি।  কিন্তু  চলতি বছরের ২৯  ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়া হলেও তাকে কোনো ইন্টারভিউ কার্ড পাঠানো হয়নি। এই বিষয়ে তিনি রাফিয়া ইকবালকে জানালে তিনি শামীমা নাসরিনের সঙ্গে দুর্ব‌্যবহার করেন। এই বিষয়ে তিনি তদন্ত সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

কম্পিউটার প্রশিক্ষক সোহেল রানা, দর্জি বিজ্ঞান প্রশিক্ষক সালমা আক্তার, বিউটিফিকেশন প্রশিক্ষক রুমা আক্তারও একই অভিযোগ করেন। তাদের অভিযোগ, এই প্রকল্প ২০১১ সালের ৫ মে থেকে শুরু হয়। চলে ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত।  এরপর ২০১৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বরের নির্দেশিকা অনুযায়ী তাদের একই পদে পুনঃনিয়োগ দেওয়া হয়। তারা ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেন। ২০১৬ সালের ৩০ অক্টোবর জেলার উপ-পরিচালক পদে মো. মহিউদ্দিন আহমেদ যোগ দেন। ২০১৭ সালের জুনে তাদের বকেয়া বেতনসহ ৩ লাখ টাকা বিল আসে।

অভিযোগকারীরা বলেন,  ‘এই টাকা থেকে বেনিফিট দাবি করে মো. মহিউদ্দিন আহমেদ। আমরা না দেওয়ায় ২০১৭ সালের জুলাই-ডিসেম্বরের বেতন আটকে দেন। এই ঘটনায় তদন্ত করে ২০১৮ সালের ২৮ আমাদের পক্ষে তদন্ত প্রতিবেদন দেন জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান। এরপর অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রাফিয়া ইকবালও জেলা প্রশাসকের প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রতিবেদন জমা দেন। সেখানে উল্লেখ করা হয়,  নিয়োগ সংক্রান্ত কোনো প্রতিবন্ধকতা দৃশ্যমান হয়নি।’

এই ৪ অভিযোগকারী আরও বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিও আমাদের পক্ষে সুপারিশ করেন। আমরা আইনি নোটিশ দিলে তারও কোনো জবাব দেওয়া হয়নি। আমাদের ওই বেতনও দেওয়া হয়নি। উল্টো আমাদের চাকরিতে বহাল না করে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে নতুন লোকবল নিয়োগের চেষ্টা চলছে। এ কারণে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাজিয়া আফরিন বলেন, ‘আমি কারও কাছ থেকে কোনো টাকা-পয়সা নেইনি। আমার বিরুদ্ধে  ৫ লাখ টাকার যে নিয়োগবাণিজ‌্যের অভিযোগ উঠেছে, তার কোনো ভিত্তি নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার যোগ‌্যতা ও কর্মদক্ষতার কারণে একই পদে ১০/১২ বছর রয়েছি।’

জানতে চাইলে অভিযোগের বিষয় সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন উপ-পরিচালক রাফিয়া ইকবালও। তিনি বলেন, ‘সম্পূর্ণ বিধিমালা অনুযায়ী নিয়োগ-প্রক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে। এখানে আগে থেকে কাউকে সিলেক্ট করে রাখা হয়নি।’

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানালে চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান বলেন, ‘আমি এসবের কিছুই জানতাম না।  এখন তো অনেক দেরি হয়ে গেছে। শামীমা নাসরিনের বিষয়টি আমরা দেখি, কিছু করা যায় কি না।’ তবে কিছু করা না গেলে ভুক্তভোগী সবাইকে আইনি লড়াইয়ের পথে যাওয়ারও পরামর্শ দেন তিনি।

চাঁদপুর/এনই

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়