ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

আর একটি অনুশীলনও বাদ পড়বে না প্রেমার

আবু কাওছার আহমেদ, টাঙ্গাইল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:২১, ৫ জানুয়ারি ২০২১   আপডেট: ২০:২৯, ৫ জানুয়ারি ২০২১
আর একটি অনুশীলনও বাদ পড়বে না প্রেমার

উপহার পাওয়া সাইকেল চালাচ্ছেন ফুটবলার প্রেমা (ছবি: রাইজিংবিডি)

নবনিতা সরকার প্রেমা। বয়স ১১ ছুঁইছুঁই। নেই কোনো ভাইবোন। পরিবারের অতি আদরের সে।  

বাবা নেপাল চন্দ্র সরকার (টাঙ্গাইল সদর উপজেলার গালা ইউনিয়নের সদুল্লাপুর গ্রামে) ছোট একটি ব্যবসা করেন। প্রেমা সদুল্লাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সবেমাত্র পিএসসি পাস করেছে। 

প্রেমার ছোটবেলা থেকেই খেলার প্রতি আগ্রহ ছিল।  কিন্তু বল ধরতে সাহস পেতো না। স্কুলে খেলায় অংশ নিতে শিক্ষকদের একাধিকবার অনুরোধ করেছেন। কিন্তু তাকে খেলায় নেওয়া হয়নি। অবশেষে গত বছরের শুরুতে তাদের স্কুলে মোনালিসা উইমেন স্পোর্টস একাডেমির পরিচালক কামরুন্নাহার মুন্নি খেলোয়াড়ের খোঁজে গেলে প্রেমা তার কাছে আসে। পরে সে মোনালিসা উইমেন স্পোর্টস একাডেমির হয়ে টাঙ্গাইল স্টেডিয়ামে অনুশলীন শুরু করে। 

কয়েকদিন যাওয়ার পর সামাজিক ও ধর্মীয় বিধি নিষেধের কারণে তাকে পরিবার থেকে খেলা বাদ দিতে চাপ প্রয়োগ করা হয়। কিন্তু প্রেমা থেমে যায়নি। পড়াশুনা, ধর্মীয় অনুশাসন ও সামাজিক বিধি মেনে সে খেলা শুরু করতে চায়। তবে পরিবার থেকে তাকে আসতে দেওয়া হয় না। পরে কামরুন্নাহার মুন্নি তার বাড়িতে গিয়ে সবাইকে বুঝিয়ে প্রেমাকে খেলার মাঠে নিয়ে আসেন।  

প্রেমা প্রায় পাঁচ কিলোমিটার হেঁটে অনুশীলন করতে আসতো। এতে প্রেমার নিয়মিত অনুশীলন করা কঠিন হয়ে পড়ে। সপ্তাহে দু-তিন দিন অনুশীলন করা ছাড়া সম্ভব হতো না। সে অনুশীলনে অনিয়মিত হয়ে পড়ে। গত ৩১ ডিসেম্বর টাঙ্গাইল স্টেডিয়ামে বঙ্গবন্ধু টি-২০ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলায় বিশেষ অতিথি হিসেবে  উপস্থিত ছিলেন ওয়ালটন গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক ও দেশের শীর্ষস্থানীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিংবিডি ডটকমের উপদেষ্টা সম্পাদক উদয় হাকিম।

ফাইনালের পুরস্কার বিতরণী শেষে উদয় হাকিম স্টেডিয়ামের এক পাশে মোনালিসা উইমেন স্পোটর্স একাডেমির অনুশীলন দেখতে যান। সেসময় নবনিতা সরকার প্রেমার কথা শুনে তাকে একটি বাইসাইকেল কিনে দেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি। 

গত সোমবার (৪ জানুয়ারি) নয় হাজার টাকা দিয়ে প্রেমাকে একটি বাইসাইকেল কিনে দেন তিনি। এখন থেকে আর একটি অনুশীলনও বাদ পড়বে না প্রেমার।

নবনিতা সরকার প্রেমা বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন ছিল পুলিশ অফিসার হব। কিন্তু একটু বড় হওয়ার পর খেলার প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায়। তাই খেলোয়াড় হতে অনুশীলন করে যাচ্ছি। অনুশীলন করতে বাসা থেকে গাড়ি ভাড়া দেওয়া হতো না। আমি পায়ে হেঁটে অনুশীলনে অংশ নিয়েছি। মাঝে মাঝে অনুশীলনে অংশ নিতে পারিনি। উদয় হাকিম স্যারকে বিষয়টি  জানানোর পর তিনি একটি বাইসাইকেল কিনে দিয়েছেন। এখন থেকে আর কোনও অনুশীলন মিস হবে না। উদয় হাকিম স্যারের দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য কামনা করছি।’

মোনালিসা উইমেন স্পোটর্স একাডেমির পরিচালক কামরুন্নাহার মুন্নি বলেন, ‘ওয়ালটনের নির্বাহী পরিচালক উদয় হাকিম সাইকেল দেওয়ায় তাকে ধন্যবাদ জানাই। এতে করে প্রেমার একটি সমস‌্যার সমাধান হলো। সেই সঙ্গে প্রেমা তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে অনেক উৎসাহ ও উদ্দীপনা পেলো। আমি প্রেমার সাফল্য কামনা করছি।’

কাওছার/সাইফ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়