ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

মানিকগঞ্জ জেলা হাসপাতালে বাড়ছে দালালের দৌরাত্ন্য

জাহিদুল হক চন্দন  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:২৩, ৮ জানুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১৪:২০, ৮ জানুয়ারি ২০২১
মানিকগঞ্জ জেলা হাসপাতালে বাড়ছে দালালের দৌরাত্ন্য

সোমবার (৪ জানুয়ারি) ঘড়ির কাঁটায় সকাল ৯টা ২৫ মিনিট। জেলা হাসপাতালের মহিলা কাউন্টারে রোগীদের ভিড় বাড়তে শুরু করেছে। কিছু দূরেই কয়েক নারীর জটলা। এরা সবাই দালাল হিসেবে পরিচিত।

টিকেট কাউন্টারে অপেক্ষামান রোগীদের নানা তাল-বাহানাই প্রাইভেট হাসপাতালে ভাল চিকিৎসার কথা বলে নিয়ে যাচ্ছে দালালরা। অনেকেই রোগীদের লাইনে ঢুকে দিচ্ছেন চিকিৎসা সেবার নানা প্রতিশ্রুতি।

এ চিত্র মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালের।

সরেজমিনে গত সোম ও মঙ্গলবার (৫ জানুয়ারি) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেছে, হাসপাতালের পুরুষ ও মহিলা কাউন্টারের সামনে একাধিক দালালের আগাগোনা। টিকেট কাউন্টারের লম্বা লাইন আর চিকিৎসকের রাউন্ডে থাকার সুযোগে রোগীদের দ্রুত সেবা দেওয়ার নিশ্চয়তার রোগীদের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন তারা। জরুরি সেবা পেতে আসা রোগীরাও দালালের আশ্বাসে বেসরকারি হাসপাতালেগুলোতে চলে যাচ্ছেন। নরেশ ও দয়াল নামের দুই দালালকে পুরুষ কাউন্টারের সামনে থেকে রোগীদের বাইরে নিয়ে যেতে দেখা গেছে। সিদ্দিকীয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক আবু রায়হান দালালদের সঙ্গে রোগী নিয়ে দর কষাকষি করছেন।এছাড়া পাপ্পু, রবিন, সেলিনা বেগম, মনোয়ারা, শিল্পীসহ ৩০ জনের মতো দালালের আনাগোনা রয়েছে জেলা হাসপাতালে।

জেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, মানিকগঞ্জ জেলা হাসপাতালের চিকিৎসক প্রয়োজন ১৮৬ জন। যেখানে হাসপাতালে চিকিৎসক রয়েছেন  ২৬ জন। একইভাবে ২৭৩ জন নার্সের স্থলে কর্মরত রয়েছে ১৯০ জন। আর তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী প্রয়োজন ১৩৫ জন। সেখানে আছে ১৬ জন। চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী প্রয়োজন ২৫১ জন। যেখানে রয়েছে ১৬ জন। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দালাল জানান,লেখাপড়া কম জানার কারণে অন্য কোনো পেশায় আয় করার তেমন সুযোগ না থাকায় এ পেশায় কাজ করছেন। যেসব রোগী সহজে সেবা নিতে চান শুধু তাদের বাইরে নিয়ে গিয়ে কমিশনে কিছু টাকা আয় করেন। তবে ডাক্তার নাই,যন্ত্রপাতি নষ্ট,কম টাকায় টেস্ট করানোর কথা বলে অনেক দালালরা রোগীদের ভুল বুঝিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায়। বেশি কমিশনের আশায় এরা প্রায়ই সব প্রাইভেট ক্লিনিকে রোগী সরবরাহ করেন। শহরের রোগীদের চেয়ে এরা গ্রামগঞ্জে থেকে আসা রোগীদের টার্গেট করেন বেশি। মাঝে মাঝে রোগী নিয়ে দালালদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ইকবাল মাহমুদ নামের এক রোগী বলেন, ‘আমার কাছেও দালালরা এসেছিল। কম খরচে কম সময়ে নানা সেবার কথা তারা আমাকে বলেছে।  তবে আমি তাদের কথাই কোনো কর্ণপাত করিনি। এখন তো জেলা হাসপাতালে পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা আছে। তাহলে আমার বাইরে চিকিৎসা নেওয়ার কি দরকার। তবে রোগীদের বাড়তি চাপ থাকায় একটু বেশি সময় লাগছে। এছাড়া, অনেক সময় সব বিভাগের চিকিৎসকও থাকেন না। কাছে থাকায় শহরের রোগীরা খোঁজ খবর নিয়ে চিকিৎসা নিতে পারেন। কিন্তু দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা  দালালের খপ্পরে পড়েন।’

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) মানিকগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন কচি জানান, জেলা হাসপাতালে দালারের দৌরাত্ন্যের পেছনে কর্মকর্তা কর্মচারীরাই দায়ী। পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা থাকার পরও তাদের জবাবদিহিতার অভাবে সাধারণ মানুষ সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।  ফলে দালালরা এ সুযোগে রোগীদের সঙ্গে সুযোগ নিচ্ছে।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আরশ্বাদ উল্লাহ জানান,বেশ কয়েকবার এসব দালালদের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী আটক করে। তবে পুনরায় ফিরে এসে তারা একই কাজ করে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মানিকগঞ্জ/বুলাকী

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়