হাসপাতালে নার্স-দালালের কমিশনবাণিজ্য, ভোগান্তিতে রোগীরা
অমরেশ দত্ত জয় || রাইজিংবিডি.কম
চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে রোগী ভর্তি হলেও সুচিকিৎসা না পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, এই হাসপাতালে কোনো রোগী এলেই নার্স-কর্মচারীর যোগসাজশে দালালরা প্রাইভেট ক্লিনিকে বাগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রে উল্লিখিত ওষুধ সংকটের কথা বলে বাইরের ফার্মেসি থেকে কেনার পরামর্শ দিচ্ছেন স্টোরের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা।
হাসপাতালের খাবারের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এছাড়া, দীর্ঘদিন ধরে সিনিয়র কনসালটেন্ট (চক্ষু), জুনিয়র কনসালটেন্ট (চক্ষু), জুনিয়র কনসালটেন্ট (প্যাথলজি), রেডিওলজিস্ট ও প্রশাসনিক কর্মকর্তার পদসহ গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু পদ শূন্য রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গেলো দেড় বছর ধরে বিকল হয়ে রয়েছে হাসপাতালের ডিজিটাল এক্সরে মেশিন। ১টি অ্যানালগ মেশিনে কোনোমতে চলছে কার্যক্রম। আর আল্ট্রাসনোগ্রাফি কার্যক্রমও বন্ধ। শুধু তাই নয়, অপারেশন থিয়েটার কার্যক্রমেও পর্যাপ্ত এনেস্থিসিয়া মেশিন নেই।
৩ জানুয়ারির একটি হিসাব থেকে জানা গেছে, ২২৮ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। এরমধ্যে পুরুষ ওয়ার্ডে ৪৮, মহিলা ওয়ার্ডে ৭৯, গাইনি ওয়ার্ডে ১৯, শিশু ওয়ার্ডে ৩৯, পেইং বেডে ২৮, আইসোলেশনে ১৫ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। এছাড়া সিট বেডের অভাবে অনেক রোগীকে মেঝেতে শুয়িয়ে রাখা হয়েছে।
এদিকে, হাসপাতালের শূন্য পদ, ডিজিটাল এক্সরে মেশিন না থাকা, আল্ট্রাসনোগ্রাফি বন্ধ ও পর্যাপ্ত এনেস্থিসিয়া মেশিন না থাকার সুযোগ কাজে লাগিয়ে আশেপাশের এলাকায় ৬৮টি ক্লিনিক ও ১৪৯টি প্যাথলজিক্যাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে—এসব ক্লিনিকে সদর হাসপাতাল থেকে রোগীদের বাগিয়ে নিয়ে যান দালালরা। ভর্তি ও বিভিন্ন রকমের পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে রোগীদের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন দালালরা।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. হাবিব-উল-করিম বলেন, ‘শূন্য পদে লোক নিয়োগ চেয়ে আবেদন করেছি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে। জনবল সংকটের কারণে দালালের দৌরাত্ম্য বন্ধ করা যাচ্ছে না। তবু সতর্কতামূলক মাইকিং ও পোস্টারিং করেছি। যেন কেউ দালালের খপ্পরে না পড়নে। কিছুদিন আগে এক দালালকে ধরে পুলিশে দিয়েছি। ’
ডা. মো. হাবিব-উল-করিম আরও বলেন, ‘পুরো হাসপাতালে ১৬টি সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। সন্দেহজনক কিছু দেখলেই ব্যবস্থা নিচ্ছি। এরসঙ্গে হাসপাতালে দালাল প্রতিরোধে পুলিশ ক্যাম্প বসানো হয়েছে। আমরা সেবার মান বাড়াতে পাশের ৩ তলা ভবননে আরও ২৪টি বেড বসানোর পরিকল্পনা করছি। তবে নার্সের অভাবে বাস্তবায়ন করতে দেরি হচ্ছে।’
এসব অভিযোগের বিষয়ে চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, ‘চাঁদপুর সদর হাসপাতাল আমাদের অধীনে নয়। তবে, দালালদের দৌরাত্ম্য প্রতিরোধে লাইসেন্সবিহীন বে-সরকারি হাসপাতাল ও প্যাথলজিক্যাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে অভিযান চলছে। ’ এই অভিযান পরিচালনা অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি জানান।
চাঁদপুর/এনই
আরো পড়ুন