দালালের কাছে জিম্মি রোগী
নজরুল মৃধা, রংপুর || রাইজিংবিডি.কম
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দালালচক্রকে কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে এসব দালালের হাতে জিম্মি রোগী ও তাদের স্বজনেরা। গতমাসে রংপুর মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানে ২৫ দালাল গ্রেপ্তার হলেও থেমে নেই তাদের দৌরাত্ম্য।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, দালাল চক্রের সদস্যরা চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখিয়ে হাসপাতাল থেকে ক্লিনিকে নিয়ে যায়। বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার কথা বলে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়।
ভুক্তভোগী ঠাকুরগাও জেলার এক রোগীর স্বজন স্বর্ণা বেগম বলেন, ‘গ্যাস্টোলজির বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখাতে রংপুর মেডিক্যাল মোড়ে নামলে কয়েকজন ব্যক্তি ডাক্তারের কথা বলেন। তারা বলেন অমুক চেম্বারে ওই ডাক্তার বসেন। চলেন সেখানে নিয়ে যাই। ওদরে কথা মতো ওই ডাক্তারের কাছে গেলে বিভিন্ন পরীক্ষা দেন। খরচ হয় প্রায় ৮ হাজার টাকা। পরীক্ষার রিপোর্ট নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেলে কিছু ওষুধ লিখে দেন। ’
পরে ওই রোগী ঠাকুরগাও গিয়ে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারেন, তিনি যার কাছে গিয়েছেন, সে তার পছন্দের ডাক্তার নয়। তিনি প্রতারিত হয়েছেন।
সম্প্রতি লালমনিরহাট থেকে নাইম নামে এক যুবক তার মাকে রমেক হাসপাতালে ভর্তি করান। তার মা ডায়াবেটিসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। দালালচক্র বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ছাড়পত্র ছাড়াই রোগীকে অন্যত্র নিয়ে যায়। পরে প্রতারিত হয়েছে বুঝতে পেরে আবার রোগীকে রমেক হাসপাতালে ভর্তি করান।
জনবল ও যন্ত্রপাতি সংকট
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক, জনবল ও যন্ত্রপাতি সংকটে চিকিৎসা সেবা মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে হৃদরোগ বিভাগের অবস্থা খুব খারাপ। এখানে এনজিও গ্রাম মেশিন দেড় বছর ধরে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে।
জানা গেছে, হাসপাতালে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর সংকট প্রকোট। এ পদে ২০০টি পদ খালি রয়েছে। তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর পদ খালি রয়েছে ৮৫টি। বেশকটি বিভাগের প্রফেসর পদের কোনো ডাক্তার নেই। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বার্ণ ইউনিট, নিউরো মেডিসিন বিভাগ। শিশু ওয়ার্ডে প্রফেসর পদে ডাক্তার থাকলেও অসুস্থতা জনিত কারণে তিনি দীর্ঘদিন থেকে অনুপস্থিত। এছাড়া প্রতিটি ওয়ার্ডে একাধিক চিকিৎসক সংকট রয়েছে।
সূত্র জানায়, এক হাজার শয্যার এই হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ২ হাজার থেকে ২২০০ রোগী চিকিৎসা সেবা পেত। করোনার কারণে রোগীর সংখ্যা কিছুটা কমলেও এখন প্রতিদিন গড়ে দেড় হাজার রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় জনবল ও যন্ত্রপাতি সংকটের কারণে রোগীরা সঠিক সেবা পাচ্ছে না।
জানা গেছে, হৃদরোগ বিভাগের এনজিও গ্রাম মেশিনটি দেড় বছরের বেশি সময় ধরে অচল অবস্থায় পড়ে আছে। ওই বিভাগের ৩টি ইকো মেশিনের সবগুলোই নষ্ট। হৃদরোগীদের চিকিৎসা হচ্ছে শুধু ইসিজি নির্ভর। হাসপাতালের সিটিস্ক্যান মেশিন দীর্ঘদিন থেকে নষ্ট। রোগীদের সিটিস্ক্যান বাইরে থেকে করতে হচ্ছে। এমআরআই মেশিনটি নষ্ট। রোগীদের এমআরআই পরীক্ষা বাইরের ডায়াগনেস্টিক সেন্টার থেকে করাতে হচ্ছে। এতে রোগীদের ব্যয় ও ভোগান্তি দুটোই বাড়ছে। দীর্ঘদিন থেকে হাসপাতালে জনবল ও যন্ত্রপাতির সংকটে ব্যাহত হচ্ছে সেবা।
রমেক হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. রোস্তম আলী বলেন, জনবল সংকটের বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এমআরআই মেশিন দ্রুত চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের সমস্যা দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করা হবে। হাসপাতালে দালাল মুক্ত করতে অভিযান চলছে।
রংপুর মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিবি) উত্তম প্রসাদ পাঠক বলেন, চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা দালালদের মাধ্যমে প্রতারিত হচ্ছেন। গত এক মাসে ২৫ জনের বেশি দালালকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
নজরুল/সাইফ
আরো পড়ুন