ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

১১ বছর পর নিজের ঘর ফিরে পেলেন ভারসাম্যহীন নারী

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:২৭, ১৪ জানুয়ারি ২০২১  
১১ বছর পর নিজের ঘর ফিরে পেলেন ভারসাম্যহীন নারী

২০১০ সালে টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার ধুবড়িয়া ইউনিয়নের ডিজিটাল বলরামপুর বাজার, পুরাতন বাজার, ধুবড়িয়া তেরাস্তা বাজারে উদ্দেশ্যহীন ঘুরতে দেখা যায় এক নারী। নাম পরিচয় জিজ্ঞেস করলে কিছুই বলতে পারতেন না। 

মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারীর আশ্রয় হয় ধুবড়িয়া তেরাস্তা বাজারে। এরপর থেকে তার লালন-পালনের দায়িত্ব নেন ‘স’ মিল মালিক রনি। নাম পরিচয়হীন ওই নারীর নাম রাখেন লাইলী। 

এরপর তার পরিচয় জানতে ও নিজ পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে খোঁজ খবর চলতে থাকে। অবশেষে দীর্ঘ ১১ বছর পর ওই নারীর পরিবারের সন্ধান পান রনি। জানতে পারেন লাইলীর আসল নাম দূর্গা রানী। তার স্বামী রমেশের বাড়ি দিনাজপুরের সস্তীতলা শহীদুল কলোনীতে। বাবার বাড়ি বগুড়া জেলার সান্তাহারের সুইপার কলোনীতে। দূর্গা রানী ওই কলোনীর রতন হরিজনের মেয়ে।

দীর্ঘ ১১ বছর মানসিক ভারসাম্যহীন একটি নারীকে আদর যত্নে লালন পালন করে পরিবারের কাছে পৌঁছে দিয়ে মানবতার এক নির্দশন গড়েছেন রনি। ঘটনাটি ঘটেছে টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার ধুবরিয়া গ্রামে। 

আশ্রয়দাতা আসাদুজ্জামান রনি (৩৭) ওই গ্রামের মৃত. আব্দুল খালেকের ছেলে। তিনি তেরাস্তা বাজার কমিটির সভাপতি।

বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) দুপুরে ওই নারীকে তার নিজ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সেসময় উপজেলা আওয়ামী লীগের ধুবড়িয়া তেরাস্তার মো. জাকিরুল ইসলাম উইলিয়ামের অফিসে পরিবারের সবাইকে পেয়ে আনন্দে আপ্লুত হয়ে পড়েন দূর্গা।

স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে আসা রমেশ জানান, হারিয়ে যাওয়ার আগে কিছু মানসিক সমস্যা দেখা দেয় দূর্গার। চিকিৎসা চলাকালে একদিন হারিয়ে যান। এরপর ১১ বছর পেরিয়ে গেছে। এতদিন বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুজি করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

হারিয়ে যাওয়া বোন দূর্গাকে ফিরিয়ে নিতে এসেছিলেন ভাই নাদিম হরিজন, আরমান হরিজন, শাকিল হরিজন, প্রদীপ হরিজন ও রিপন হরিজন বলেন।

তারা বলেন, ‘প্রায় ১১ বছর ধরে রনি ভাই আমাদের বোনকে স্বযত্নে লালন-পালন করেছেন। আজ আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিচ্ছেন। এটা মানবতার এক অনন্য উদাহরণ। আমাদের বোনকে ফিরে পেয়ে আমরা খুবই আনন্দিত। রনি ভাইকে ধন্যবাদ দেওয়ার ভাষা আমাদের জানা নেই।’

সেসময় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন রনি। অশ্রুসিক্ত নয়নে তিনি বলেন, ‘১১ বছর ধরে মেয়েটির পরিচয় ও পরিবারের সন্ধান পেতে বিভিন্ন মাধ্যমে চেষ্টা চালিয়েছি। কোনো উপায় না পেয়ে ফেসবুকে মেয়েটির সন্ধান পেতে ছবি সম্বলীত একটি পোস্ট দিই। ফেসবুকের কল‌্যাণে মেয়েটির পরিবারের সন্ধান পাওয়া গেল।’

তিনি বলেন, ‘মেয়েটিকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। মেয়েটি যেন বাকি জীবন তার পরিবারের সাথে সুখে-শান্তিতে কাটাতে পারে। সৃষ্টিকর্তার কাছে সেই প্রার্থনা করি। তার সুচিকিৎসার জন্য প্রয়োজনে সব ধরনের সাহায্য সহায়তা করব।’

নাগরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা মো. আওলাদ হোসেন লিটন বলেন, ‘আমরা যে কাজটি করতে পারিনি রনি তা করে দেখিয়েছে। মানবতা আজও বেঁচে আছে, এটা তারই সাক্ষ্য বহন করে। দিনাজপুরে বসবাসকারী আমার ভাই দীলিপের সাথে দূর্গা (লাইলী) এর বিষয়ে আলাপ করি। দীলিপ তার ফেসবুকে দূর্গার ছবি পোস্ট করে। পরে সেটি অনেকেই শেয়ার করে। সেটি চোখে পড়ে দূর্গার (লাইলী) স্বজনদের। এরপর দিনাজপুরের হরিজন সম্প্রদায়ের নেতারা দীলিপের সঙ্গে যোগাযোগ করে।’

ধুবড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. শাকিল হোসেন ও বর্তমান চেয়ারম্যান মো. মতিয়ার রহমান বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন করেছেন। তাই আজ দূর্গা হরিজনকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের সহায়তায় খুঁজে পেয়েছে তার পরিবার।’

নাগরপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আমিনুল বলেন, ‘মানবতার কাছে পৃথিবীর সব আইন তুচ্ছ। রনি ভাইয়ের মানবতায় ভারসাম্যহীন মেয়েটিকে তার পরিবার ফিরে পেয়েছে। সত্যিই এটা মানবতার এক অনন্য উদাহরণ।’

কাওছার/সনি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়