ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

‘মেশিনি ঠাসা দিয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোট দিয়া হয়ে গিলো’

মাগুরা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫৬, ১৬ জানুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১৩:০৮, ১৬ জানুয়ারি ২০২১
‘মেশিনি ঠাসা দিয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোট দিয়া হয়ে গিলো’

‘সগলি কচ্ছে, ভোট আর মতো সিল মারে দিয়া যাবিনে।  কল বারোইছে, ঠাসা দিলি ভোট দিয়া হয়ে যাবি। জীবনেতো এরম কায়দায় ভোট দেই নেই। চিনতায় ছিলাম- কেম্মায় কী করবানি? ভোট দিতি যায়ে কায়দা দেহায় দিলো মার্কার পাশের বুতামে ঠাসা দিল ভোট দিয়া হয়ে গিলো। এহন আর ভয় নাই। ভোট দিয়া সারা সুজা’ কথাগুলো  বলছিলেন আব্দুর রহমান মিয়া।

মাগুরা পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড ভায়না এলাকার  বাসিন্দা সত্তুরোর্ধ্ব আব্দুর রহমান মিয়া ইভিএম কী, তা চেনেন না। ইভিএমে ভোট কীভাবে দেবেন, তা নিয়ে চিন্তায় ছিলেন। তবে এবার  ইভিএমে ভোট দিতে পেরে আনন্দিত তিনি। 

দ্বিতীয় ধাপে শনিবার (১৬ জানুয়ারি) মাগুরা পৌরসভায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সকাল ৮টায় শুরু হয়েছে ভোটগ্রহণ, চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। মেয়র হতে লড়ছেন ৩ জন, সাধারণ কাউন্সিলর ৩৭ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মোট ১০ জন প্রার্থী।

শহরের দুদ মল্লিক বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিয়ে বাড়ি যাচ্ছেন জামরুল তলার বাসিন্দা রেবেকা বেগম (৩৫)। তিনি বলেন, ‘প্রথম ইভিএমে ভোট দিলাম। ভয়ের সঙ্গে আগ্রহ ছিলো। মেশিনে আঙুলে ছাপ দেওয়ার পর আমার ছবি ভাসছে। এরপর একটা চিহ্নের সুইচে (প্রতীকে) টিপ  দিছি, ভোট হয়ে গেছে। এখন খুবই ভালো লাগছে। ইভিএমে  কেউ জালভোট দিতে পারবে না।’

রহমান মিয়া ও রেবেকা বেগমের মতো কেন্দ্রে আসা অনেক ভোটার বলেন, ‘ইভিএম পদ্ধতিতে জাল ভোটের সুযোগ নেই। তাই আমরা খুশি।’

পারনান্দুয়ালি এলাকার আরেক বাসিন্দা আলতাফ মোল্যা জালভোটের শিকার হওয়ার অভিজ্ঞতা বললেন। গত জাতীয় নির্বাচনে এসে দেখেন, তার ভোট দেওয়া হয়ে গেছে। তাই তিনি হতাশ হয়ে বাড়ি ফেরেন। এবার ইভিএমে ভোট হবে শুনে তিনি খুশি। আলতাফ বলেন, ‘তার ভোট আর কেউ দিতে পারবে না, তাই তিনি খুশি।’

জেলা নির্বাচন অফিস জানায়, প্রথমবারের মতো বলে মাগুরা পৌরসভায় ইভিএমে ভোটের সঙ্গে ভোটাররা অপরিচিত। এ জন্য পৌরসভার প্রতিটি কেন্দ্রে কেন্দ্রে স্থানীয় ভোটারদের অংশগ্রহণে ‘মক ভোটিং’ (নমুনা ভোট প্রদর্শনি) আয়োজন করা হয়।

এখানে ভোটারদের মধ্যে সাড়া পড়ে। অনেকেই এখানে উপস্থিত হয়ে ভোট দেওয়ার পদ্ধতি রপ্ত করেন।
মাগুরা আদর্শ কলেজের ছাত্র পশু হাসপাতাল পাড়ার বাসিন্দা আরমান হোসেন বলেন, ‘তিনি ইউটিউব থেকে ইভিএমে ভোট দেওয়া শিখেছেন। তার কাছে সহজ ও ঝামেলা মুক্ত হয়েছে।’

এবার মাগুরা পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে  ৩ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৭ জন ও নারী কাউন্সিলর পদে ৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রথমবারের মতো ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট প্রদানের আয়োজন করায় অনেক প্রার্থী নিজেদের পক্ষে প্রচারণার পাশাপাশি ভোট প্রদানের পদ্ধতি বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাচ্ছেন।

মাগুরা পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী উজ্জ্বল কুমার দত্ত বলেন, ‘ভোটাররা জানতে চান ইভিএম মেশিনে কীভাবে ভোট হবে। ভোটারদের ভোট প্রদানের পদ্ধতি শেখাতে হচ্ছে। তবে বৃহস্পতিবার ভোট প্রদান পদ্ধতির প্রদর্শনি আয়োজন করায় ভোটারদের মধ্যে ইভিএম বিষয়ে জ্ঞান তৈরি হয়েছে। তারা সুন্দরভাবে ভোট দিতে পারছেন।’

মাগুরা পৌরসভার বর্তমান মেয়র ও আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী  মো. খুরশিদ হায়দার টুটুল বলেন, ‘ইভিএম পদ্ধতির বিষয়ে ভোটারদের কোনো ধারণা নেই। এ বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়েছিল। কোনো সমস্যা নেই সবাই ভোট দিচ্ছে।’

বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থী ইকবাল আখতার খান কাফুর জানান, পৌর এলাকায় ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট প্রদানের আয়োজন ঠিক হয়নি। এ পদ্ধতিতে ভোটারদের কোনো জ্ঞান না থাকায় নির্বাচনে কারচুপির সুযোগ রয়েছে। অনেকেই ভোট দিতে সমস্যায় পড়ছেন বলে তিনি জানান।

মাগুরা জেলা রিটার্নিং অফিসার ও নির্বাচন অফিসার অলিউল ইসলাম বলেন, ‘প্রথমবারের মতো এ পৌরসভায় ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ইভিএম পদ্ধতিতে কীভাবে ভোট প্রদান করা হয়, তা প্রদর্শনি ভোটিংয়ের মাধ্যমে তারা ভোটারদের ধারণা দিয়েছেন। এর আগে মাইকিং করে প্রদর্শনিতে অংশ নিতে প্রচারণা চালানো হয়।’

উল্লেখ‌্য, পৌরসভায় মোট ভোটার ৭৬  হাজার ৮৯৩ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ৩৭ হাজার ৬১২ জন এবং নারী ৩৯ হাজার ২৮১ জন। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৩৫টি এবং ভোটকক্ষ ২০৮টি।

শাহীন/বুলাকী

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়