ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

গরম পানিতে ঝলসে যাওয়া শিশুর আহাজারিও মন গলাতে পারেনি তাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৩০, ১৮ জানুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১৭:৫৭, ১৮ জানুয়ারি ২০২১

গরম পানিতে ঝলসে যাওয়া শিশুর আহাজারিও মন গলাতে পারেনি। স্থানীয় সংসদ সদস্য সেতু পার হবেন বলে দেড়ঘন্টা ধরে আটকে রাখা হয় হাসপাতালমুখী দগ্ধ হওয়া শিশুটির গাড়ি।

সংসদ সদস্যর জন্য সেতু যানজটমুক্ত রাখতে দেড় ঘন্টা আগে থেকেই সেতুতে অন্য সব যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় ইজারাদারের কর্মিরা। কিন্তু এই সময়ে সেতুর মুখে আটকে দেওয়া হয় বাসায় গরম পানি পরে সারা শরীর পুড়ে যাওয়া পাঁচ বছর বয়সী শিশুকে বহনকারী সিএনজিচালিত অটোরিক্সা। যন্ত্রণাকাতর অগ্নিদগ্ধ শিশুর আহাজারি, স্বজনদের আকুতি- কিছুতেই মন গলছিলনা পাষন্ড মানুষদের। আগে সাংসদ পার হবেন তারপর গাড়ি চলবে। এভাবেই দেড়ঘন্টা ধরে আটকে রাখা হয় হাসপাতালমুখী অগ্নিদগ্ধ শিশুটির গাড়ি। অমানবিক এই ঘটনাটি ঘটে রোববার দুপুরে চট্টগ্রামের বোয়ালখালী সেতুতে।

জানা যায়, বোয়ালখালী পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ড পূর্ব গোমদন্ডী মীরপাড়ার এনামুল হকের ৫ বছর বয়সী শিশু কন্যা তানজিনা হক অসাবধানতায় গরম পানির পাতিলে পড়ে যায়।  এতে এই শিশুর শরীরের বেশিরভাগ অংশ পুড়ে যায়। শিশুটিকে প্রথমে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা শিশুটিকে বাঁচাতে হলে দ্রুত চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।

দগ্ধ শিশুর পিতা এনামুল হক জানান, চিকিৎসকদের পরামর্শে তার কন্যাকে দ্রুত চট্টগ্রাম মেডিক্যালে নিতে একটি সিএনজি অটোরিক্সা নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। কিন্তু কালুরঘাট সেতুর প্রান্তে এলে তাদের সিএনজি অটোরিক্সাসহ সব ধরনের যানবাহন পারাপার বন্ধ করে দেয় সেতুর দায়িত্বপ্রাপ্ত ইজারাদারের কর্মিরা। এই সময় তারা জানান, চট্টগ্রাম থেকে সেতু পার হয়ে বোয়ালখালী যাবেন স্থানীয় সাংসদ মোছলেম উদ্দিন আহাম্মেদ। তাই সেতুতে অন্য সব যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ সময় অটোরিক্সায় দগ্ধ শিশুটি যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিল। সেতু পার হয়ে হাসপাতালে যেতে দিতে অনুনয় বিনয় করছিলো তার স্বজনরা। কিন্তু কিছুতেই মন গলেনি পাষণ্ড ব্যাক্তিদের। মৃত্যু পথযাত্রী শিশুটিকে এ অবস্থায় সেতুর প্রান্তে প্রায় দেড় ঘন্টা ধরে আটকে রাখা হয়। সাংসদ ও তার গাড়ি বহর সেতু পার হওয়ার পর শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়।

এ ব্যাপারে সাংসদ মোছলেম উদ্দিন জানান, তিনি এ ঘটনাটি অবগত নন। তার জন্য কেউ সেতু বন্ধ রেখে অগ্নিদগ্ধ শিশুকে হাসপাতালে নিয়ে দিবে না, এটা মানা যায় না। যা ঘটেছে তা অন্যায়। এ ব্যাপারে তিনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান।

সেতুর দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যবস্থাপক নুর উদ্দীন জানান, সেতু ক্লিয়ার রাখতে পুলিশের নির্দেশনা পেয়েই তারা সেতু বন্ধ রেখেছিলেন।

তবে সেতু বন্ধ রাখার কোন নির্দেশ দেওয়ার কথা অস্বীকার করেন বোয়ালখালী থানার ওসি আবদুল করিম।

তিনি জানান, যে ঘটনাটি ঘটেছে তা দুঃখজনক।  পুলিশ এব্যাপারে কোন নির্দেশ দেয়নি।  সেতুর টোল আদায়কারীরা স্বপ্রণোদিত হয়েই অগ্নিদগ্ধ শিশুকে পার হতে দেয়নি।  এ ব্যাপারে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।

এদিকে অগ্নিদগ্ধ শিশুটিকে চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।  শিশুটির অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে অভিভাবকরা জানিয়েছেন।

চট্টগ্রাম/রেজাউল/টিপু

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়