ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

৩ বছরের জারার ১৬৬০ ফুট উঁচু পাহাড় জয়

পাবনা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:০১, ১৮ জানুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১৩:২৪, ১৯ জানুয়ারি ২০২১

পায়ে হেঁটে বান্দরবানের ১৬৬০ ফুট উচ্চতার মারায়ন তং পাহাড়ে উঠে সবাইকে অবাক করে দিয়েছে পাবনার চাটমোহরের তিন বছরের শিশু সাবিলা মোস্তাফিজ জারা। 

সম্প্রতি বাবা-মায়ের সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে কারও কোলে না উঠে নিজেই হেঁটে খাড়া পাহাড়টিতে ওঠানামা করেছে সে।

এদিকে জারা’র পায়ে হেঁটে পাহাড়ে ওঠানামার বিষয়টিতে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বান্দরবানের পর্যটক গাইডরাও। তারা জানিয়েছেন, এর আগে এত কম বয়সী শিশু পায়ে হেঁটে কখনও পাহাড়ে ওঠেনি। জারা’র এমন কৃতিত্বে খুশি ও গর্বিত বাবা-মা, স্বজন-প্রতিবেশিরা।

পাবনার চাটমোহর পৌর সদরের চৌধুরীপাড়া মহল্লার ফ্রিল্যান্স ওয়েব সাইট ডেভেলপার মো. মুস্তাফিজুর রহমান ও সাদিয়া ইসলাম ইলা দম্পতির একমাত্র সন্তান জারা। ভ্রমণ পিপাসু বাবা-মায়ের মুখে বিভিন্ন সময়ে পাহাড় আর সমুদ্রে ঘোরাঘুরির গল্প শুনে তিন বছরের জারা আধো আধো কথায় বাবা-মায়ের কাছে আবদার করতো পাহাড়-সমুদ্র দেখার।

মেয়ের আবদার রাখতে গত ৫ জানুয়ারি চাটমোহর থেকে বান্দরবানের উদ্দেশ্যে রওনা হন বাবা-মা। ৬ জানুয়ারি দুপুরে আলীকদম উপজেলার আবাসিক এলাকার মিরিঞ্জা রেঞ্জে পৌঁছায়। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ১৬৬০ ফুট উচ্চতার মারায়ন তং পাহাড়ে ওঠা শুরু করেন তারা। 

তাদের সঙ্গী তিন বছরের মেয়ে জারাকে কোলে নিয়ে পাহাড়ে ওঠার জন‌্য পর্যটক গাইড ভাড়া করা হয়। কিন্তু জারা কারও কোলে না উঠে নিজের পায়ে হেঁটে মারায়ন তং পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছায়। খাড়া এই পাহাড়ে উঠতে তাদের সময় লাগে ১ ঘণ্টা ৪৩ মিনিট। এতটা পথ ও সময় যেখানে উঠতে বড়রাই যেখানে হাঁপিয়ে ওঠেন, সেখানে ৩ বছরের মেয়ের হেঁটে পাহাড়ে ওঠায় হতবাক বাবা-মা।

জারার বাবা মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘প্রথমে ভাবিনি জারা হেঁটে উঠবে। তাকে কোলে নিয়ে উঠতে হবে ভেবে গাইডও ভাড়া করেছিলাম। কিন্তু কোলে নিলেই কান্নাকাটি শুরু করছিল সে। পরে আমাদের সাথে হেঁটেই পাহাড়ে ওঠে সে। শুধু হেঁটে পাহাড়ের চূড়ায় ওঠাই নয়, নামার সময়েও নিজেই হেঁটে নিচে নেমেছে জারা।’

মা সাদিয়া ইসলাম ইলা বলেন, ‘আমাদের জানা মতে বাংলাদেশের মধ্যে সর্বোচ্চ খাড়া পাহাড় হলো- ১৬৬০ ফুট উচ্চতার মারায়ন তং পাহাড়। ওঠা খুবই কষ্টকর। আমরা উঠতে গিয়েই হাঁপিয়ে উঠছিলাম। কিন্তু আমাদের মেয়ের মধ্যে কষ্টের কোনো চিহ্ন দেখিনি। বরং আমরা মাঝপথে দাঁড়ালে জারা আমাদের তাড়া দিতো। ‘বলতো, তোমরা থামছো কেন? আসো, উঠো।’ আমি শুরুতে ভেবেছিলাম বড় জোর সাত-আট মিনিট হাঁটতে পারবে। যখন সে পুরো পথ হেঁটে ওপরে উঠলো, আমি রীতিমত হতবাক হয়ে গেঠি! সে কীভাবে পারলো!’

জারার বাবা-মা দাবি জানিয়ে বলেন, ‘পাহাড় থেকে নামার পর তারা গাইড ও স্থানীয় বিভিন্ন মানুষের সাথে কথা বলে জানতে পারেন- এর আগে এত কম বয়সে কোনো শিশু পাহাড়ে হেঁটে উঠতে পারেনি। তবে এর বাইরে যদি কারও কোনো তথ্য জানা থাকে, তাহলে সেটা দেখতে পারেন। আর যদি না থাকে, তাহলে আমাদের মেয়ের কৃতিত্বটুকু রেকর্ড রাখাসহ স্বীকৃতি দিতে দাবি জানাচ্ছি।’

বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার পর্যটক গাইড ইয়াসিন আলী, জামাল হোসেন ও মুন্না হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেন এ প্রতিনিধি। 

তারা জানান, তিন বছরের শিশু জারা হেঁটে মারায়ন তং পাহাড়ে উঠেছে এটা সত্য। তারা সবসময় শিশুটির সঙ্গে ছিলেন। শিশু জারার এমন মনোবল দেখে তারাও বিস্মিত। এর আগে তিন বা চার বছর বয়সী কোনো শিশুকে তারা পায়ে হেঁটে পাহাড়ে উঠতে দেখেননি বা শোনেননি। 
এর আগে সাত বছর বয়সী এক শিশু পাহাড়ে উঠেছিল। তবে মাঝপথে তাকে কোলে নিয়ে উঠতে হয়েছিল বলে জানান পর্যটক গাইডরা।

শাহীন রহমান/সনি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়