ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

আমৃত্যু অনশনে খুবি’র সেই ২ শিক্ষার্থী

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৫৮, ২০ জানুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১২:১২, ২০ জানুয়ারি ২০২১
আমৃত্যু অনশনে খুবি’র সেই ২ শিক্ষার্থী

মোমবাতি হাতে খুবি ক্যাম্পাসে অনশনরত ২ শিক্ষার্থী

বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না হওয়ায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) সেই দুই শিক্ষার্থী আমৃত্যু অনশন শুরু করেছেন।

মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যার পর থেকে তারা খুবি ক্যাম্পাসের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ অনশন শুরু করেন। এর আগে রোববার সন্ধ্যা থেকে তারা একই স্থানে আমরণ অনশন শুরু করেন।

দুই শিক্ষার্থী হলেন— খুবির বাংলা ডিসিপ্লিনের মোহাম্মদ মোবারক হোসেন নোমান (১৮ ব্যাচ) এবং ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিনের ইমামুল ইসলাম।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ক্যাম্পাসে দুজন অধ্যাপকের পথ আটকানো ও গুরুতর অসদাচরনের অভিযোগে তাদেরকে কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করে।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, শিক্ষার্থীদের পাঁচ দফা আন্দোলনে যুক্ত থাকার কারণে তাদেরকে অন্যায়ভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। পাঁচ দফা দাবির মধ্যে ছিল বেতন কমানো, আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত করা, অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে অবকাঠামো নির্মাণ ও ছাত্রবিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।

এর আগে ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর শিক্ষার্থীরা পাঁচ দফা দাবি সংক্রান্ত স্মারকলিপি উপাচার্যের কাছে পেশ করা হয়। তাতেও কোনো সমাধান না পেয়ে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে শিক্ষার্থীরা। এরপর ১৬ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে আন্দোলন চলাকালে ওই দুই অধ্যাপকের পথ আটকানোর ঘটনা ঘটে।

অনশনে থাকা শিক্ষার্থীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থী-শিক্ষক ও দেশবাসীকে সাক্ষী রেখে আমৃত্যু অনশন কর্মসূচি শুরু করেছি। আমাদের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এ কর্মসূচির সমাপ্তি ঘটবে।

এদিকে, কর্মসূচির বিষয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী মোহাম্মদ নোমান তার ফেসবুকে একটি আবেগঘন স্টাটাস দিয়েছেন। যা হুবহু তুলে ধরা হলো— ‘মোমবাতি প্রজ্বলনের মাধ্যমে আমরণ অনশন শুরু করলাম! আপনারা যখন খুব ক্ষুধা পেটে আত্মতৃপ্তি নিয়ে খাবার খাবেন, তখন এ অন্যায় বহিষ্কার মেনে না নিয়ে আমরা একটু একটু করে মৃত্যুর দিকে ঝুঁকে যাবো! অন্যায় বহিষ্কার মেনে নেওয়ার থেকে মৃত্যু শ্রেয়! আমার বিশ্ববিদ্যালয় অভিভাবক কি চাই?  আমাদের লাশ অথবা প্রত্যাহার। অন্যায়, অযৌক্তিক বহিষ্কার প্রত্যাহার করার জন্য ১৬/০১/২১ তারিখ সকাল ১১টা সময় হতে তাদের ২৪ ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়েছিল কিন্তু তারা তা আমলে নেন নাই।  তাই আমরা বাধ্য হয়ে এ আমরণ অনশন কর্মসূচি হাতে নিয়েছি! আমাদের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এ কর্মসূচির সমাপ্তি ঘটবে! ৪৮ ঘণ্টা সময় দিয়ে আমরা অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছিলাম এ অন্যায় বহিষ্কার প্রত্যাহার করার জন্য, প্রত্যাহার না করলে আমরা আমরণ অনশন করব কিন্তু তারা আমাদের দাবি আবারও আমলে নেন নাই!  তাই ৪৮ ঘণ্টা সময় পার হওয়ার পরে আজ ১৯ /০১/২১ (মঙ্গলবার) সন্ধ্যা ৭ টা থেকে আমরা আমরণ অনশন শুরু করেছি....!  আমাদের কোনো প্রকারের কোনো সমস্যা হলে এর জন্য সম্পূর্ণ দায়ী থাকবে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অর্থাৎ আমাদের সম্মানিত অভিভাবকরা! আমাদের অভিভাবকদের শুভবুদ্ধি উদয় হোক!  মহান আল্লাহ আমি তোমার সাহায্য  প্রার্থনা করছি।

উপাচার্যের মতবিনিময় সভা : 
এদিকে,এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন, ডিসিপ্লিন প্রধান, বিভাগীয় প্রধানদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান সভায় সভাপতিত্ব করেন। এ সময় উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোসাম্মাৎ হোসনে আরা, বিভিন্ন স্কুলের ডিন, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত), ডিসিপ্লিন প্রধান, ছাত্রবিষয়ক পরিচালক, প্রভোস্টবৃন্দসহ উপস্থিত ছিলেন। সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হয়। সভায় ডিন, ডিসিপ্লিন প্রধান, ছাত্রবিষয়ক পরিচালক, প্রভোস্টবৃন্দ মত ব্যক্ত করেন যে, দুইজন শিক্ষার্থী যেভাবে শাস্তি মওকুফ করাতে চায় সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী সঠিক প্রক্রিয়া নয়। তাদের জন্য আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী তারা সেই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ গ্রহণ করতে পারে।

খুলনা/নূরুজ্জামান/বুলাকী

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়