ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

জমে উঠেছে চসিক নির্বাচনের শেষ মুহূর্তের প্রচারণা

রেজাউল করিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৫৫, ২০ জানুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১৫:৩৭, ২০ জানুয়ারি ২০২১
জমে উঠেছে চসিক নির্বাচনের শেষ মুহূর্তের প্রচারণা

আগামী ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঢাকার পর দ্বিতীয় বৃহত্তম সিটি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচন। 

এই নির্বাচনকে ঘিরে জমে উঠেছে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা। প্রার্থীরা যাচ্ছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। বিভিন্ন স্থানে সংঘাতের ঘটনাও ঘটছে। নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে জমছে অভিযোগের পাহাড়ও। তবে এসবের মধ্যে থেমে নেই প্রার্থীরা।

এই নির্বাচনে মেয়র পদে কাগজে কলমে ৭ জন প্রার্থী থাকলেও মাঠে রয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মনোনীত দুই প্রার্থী। মুলতঃ আওয়ামী লীগের নৌকা এবং বিএনপি’র ধানের শীষের মধ্যেই নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্ধিতা হবে। আগামী ২৫ জানুয়ারি রাত ১২টায় শেষ হবে প্রচার-প্রচারণা।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র, কাউন্সিল এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে মোট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ২২৬ জন। এর মধ্যে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বী ৭ জন, কাউন্সিলর (পুরুষ) পদে প্রতিদ্বন্দ্বী ১৭২ জন এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর পদে প্রার্থী সংখ্যা ৫৩ জন। মেয়র পদে মুল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরী (নৌকা প্রতীক) এবং বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন (ধানের শীষ প্রতীক)। এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যেই নগরবাসী আগামী পাঁচ বছরের জন্য নগর পিতা নির্বাচন করবেন।

চট্টগ্রামবাসী ভাসছে প্রতিশ্রুতির বন্যায়

সিটি করপোরেশন নির্বাচন ঘিরে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণায় ভোটারদের মন জয় করতে দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত অব্দি গণসংযোগের পাশাপাশি নানা কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন প্রার্থীরা। এর মধ্যে সবার নজরে রয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মনোনীত দুই প্রার্থী যথাক্রমে রেজাউল করিম চৌধুরী এবং ডা. শাহাদাত হোসেন।

আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে চট্টগ্রামবাসী অতীতের মতো এবারও নৌকা প্রতীককেই বেছে নিবেন। নৌকা মানেই উন্নয়ন, নৌকা মানেই জনগণের কল্যাণ।

নির্বাচিত হলে চট্টগ্রাম নগরীকে একটি আধুনিক স্মার্ট এবং জলাবদ্ধতামুক্ত সিটি হিসেবে গড়ে তোলার কথা উল্লেখ করে রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রামের প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিশেষ সুদৃষ্টি রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্ঠায় নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে যে মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে তা শেষ হলে নগরীতে আর কোনো জলাবদ্ধতা থাকবে না। মেয়র নির্বাচিত হলে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পসমূহ দ্রুত সম্পন্ন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে এবং চট্টগ্রাম নগরীতে যানজটমুক্ত পরিচ্ছন্ন নগর হিসেবে গড়ে তোলা হবে বলে জানান আওয়ামী লীগ মনোনীত এই প্রার্থী।

পক্ষান্তরে, বিএনপি মনোনীত প্রার্থী চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি’র সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন জানান, আওয়ামী লীগের মেয়রদের মাধ্যমে বিগত দিনে প্রকৃত অর্থে চট্টগ্রামের কোনো উন্নয়ন হয়নি। নগরবাসী জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পায়নি। বছরের পর বছর ভাঙা সড়কে ধুলো-ধুষর নগরীতে মহা-দুর্ভোগে দিনযাপন করছেন নগরবাসী।

ডা. শাহাদাত বলেন, সুষ্ট নির্বাচন হলে, জনগণ ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে চসিক নির্বাচনে বিএনপিই জয়ী হবে। 
প্রচার ও জনসংযোগে যেখানেই যাচ্ছেন সেখানেই জনগণের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন উল্লেখ করে ডা. শাহাদাত জানান, আওয়ামী লীগ জনবিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে ভোট ডাকাতির পাঁয়তারা চালাচ্ছে। চট্টগ্রামবাসী ঐক্যবদ্ধ আছে। সন্ত্রাসীদের মোকাবেলার জন্য তারা উন্মুখ হয়ে আছে।

এদিকে, আওয়ামী লীগ, বিএনপি ছাড়াও কাগজে কলমে আরও ৫ জন প্রার্থী রয়েছে চসিক নির্বাচনে। এই প্রার্থীরা হলেন— বাংলাদেশ ইসলামি ফ্রন্টের এম এ মতিন (মোমবাতি), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আবুল মনজুর (আম), ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের ওয়াহেদ মুরাদ (চেয়ার), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জান্নাতুল ইসলাম (হাতপাখা) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী খোকন চৌধুরী (হাতি)। এই প্রার্থীদের কোনো প্রচার-প্রচারণা নির্বাচনের মাঠে চোখে পড়ছে না।

প্রচার-প্রচারণা ঘিরে অভিযোগের স্তুপ

এদিকে, চসিক নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা ঘিরে প্রার্থীদের নানা অভিযোগের স্তুপ জমেছে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ে। সবগুলো অভিযোগ ও আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি প্রার্থীদের নিয়ে।

চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান জানান, ৭ জানুয়ারি থেকে চট্টগ্রামে নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা শুরু হওয়ার পর থেকে ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত ৪৪টি অভিযোগ জমা পড়েছে। এর মধ্যে বিএনপি মনোনীত ডা. শাহাদাত হোসেনের পক্ষ অভিযোগ জমা হয়েছে ৯টি এবং আওয়ামী লীগ প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর পক্ষে ২টি। বাকি সব অভিযোগ কাউন্সিল প্রার্থীদের পক্ষে। জমা হওয়া ৪৪টি অভিযোগের মধ্যে ১৮টি অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়েছে।

সাড়ে ১৯ লাখ ভোটার ৭৩৫ ভোট কেন্দ্র

চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান জানান, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নিবাচনে হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী মোট ভোটার সংখ্যা ১৯ লাখ ৫১ হাজার ৫২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৯ লাখ ৯৮ হাজার ৭২৩ জন এবং নারী ভোটার ৯ লাখ ৫২ হাজার ৩২৯ জন। নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে মোট ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৭৩৫টি। মোট বুথের সংখ্যা ৪৮৮৬টি। সবগুলো ভোট কেন্দ্রেই এবার ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ হবে। এর মধ্যে নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমও সম্পন্ন হয়েছে।

নির্বাচনে সহিংসতায় কোন ছাড় নয়: পুলিশ কমিশনার

চসিক নির্বাচনকে ঘিরে সহিংসতায় এর মধ্যে একজন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। এসব ঘটনায় আওয়ামী লীগের একজন বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীসহ ২৬ জন গ্রেপ্তার হয়েছে। এর মধ্যে বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্নস্থানে সংঘর্ষ ও প্রচার-প্রচারণায় বাধা দেওয়ার নানা ঘটনা ঘটছে। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচনি প্রচার প্রচারণায় কোনো ধরনের সহিংসতা করার চেষ্ঠা করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর। নির্বাচনে আইন-শৃংখলা রক্ষায় প্রায় ৯ হাজার পুলিশ সদস্য, গোয়েন্দা পুলিশ, কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট, বিশেষায়িত সোয়াত টিম দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়া সার্বক্ষণিক মাঠে থাকবে র‌্যাব। অপরদিকে, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ৮জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে দায়িত্ব পালন করছেন।

রেজাউল/বুলাকী

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়