ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ছাত্র আন্দোলনে সংহতি প্রকাশের দায়ে খুবির ৩ শিক্ষক অপসারিত

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:৫৮, ২০ জানুয়ারি ২০২১   আপডেট: ২১:৫৯, ২০ জানুয়ারি ২০২১
ছাত্র আন্দোলনে সংহতি প্রকাশের দায়ে খুবির ৩ শিক্ষক অপসারিত

অপসারণের চূড়ান্ত নোটিশ প্রাপ্ত তিন শিক্ষক (ওপরে), আমৃত্যু অনশনরত ২ শিক্ষার্থীর সঙ্গে সহপাঠীদের সংহতি

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানানো, শৃঙ্খলা পরিপন্থি ও গুরুতর অসদাচরণের দায়ে এবার তিনজন শিক্ষককে অপসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। 

ওই তিন শিক্ষক হলেন- বাংলা ডিসিপ্লিনের সহকারী অধ্যাপক আবুল ফজল, একই ডিসিপ্লিনের শাকিলা আলম এবং ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিনের প্রভাষক হৈমন্তী শুক্লা কাবেরী।

এদিকে, বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটামের পর আমরণ অনশন অব্যাহত রেখেছে খুবির দুই শিক্ষার্থী। 

এরা হলেন- বাংলা ডিসিপ্লিনের মোহাম্মদ মোবারক হোসেন নোমান (১৮ ব্যাচ) এবং ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিনের ইমামুল ইসলাম (১৭ ব্যাচ)। বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা তাদের অবস্থানে অনড় রয়েছেন।

অপসারণের কথা জানিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানানো তিন শিক্ষককে চূড়ান্ত নোটিশ দেওয়া হয়েছে। 

নোটিশে বলা হয়, গত ১৮ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন মোতাবেক তাদের অপসারণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। 

আলাদা আলাদা পত্রে বলা হয়েছে- শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য, কুৎসা রটানো এবং উস্কানিমূলক তথ্য প্রচার, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানাতে অন্যান্য শিক্ষকদের আহ্বান জানিয়েছিলেন তারা। এমনকি শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামো থাকার পরও তারা নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেছেন।

নোটিশে আরও বলা হয়, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় কেন অপসারণ করা হবে না, আগামী বৃহস্পতিবারের (২১ জানুয়ারি) মধ্যে তা জানাতে হবে।

এদিকে, দুই শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার ও তিন শিক্ষকের অপসারণ প্রক্রিয়ার প্রতিবাদে খুলনার সচেতন নাগরিক ও সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীর ব্যানারে আগামী কাল বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) বেলা ১১টায় নগরীর শিববাড়ি মোড়ে মানববন্ধন ও সমাবেশের আয়োজন করা করেছে।

এদিকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ ও প্রকাশনা বিভাগের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) এস এম আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে খুবির প্রকৃত ঘটনা না জেনে বিভ্রান্তিকর মন্তব্য বা বিবৃতি প্রদান থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। 

বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষকের সঙ্গে দুজন শিক্ষার্থীর অসদাচারণের অভিযোগ তদন্ত শেষে সম্প্রতি শৃঙ্খলা বোর্ড বিভিন্ন মেয়াদে তাদের শাস্তি প্রদান করে। এই শাস্তি প্রত্যাহারে ঐ দুই শিক্ষার্থী অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে। শাস্তি প্রত্যাহারে বা শাস্তি কমানোর বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মতান্ত্রিক পথ রয়েছে। কিন্তু তারা এ পথ অনুসরণ করে আবেদন করছে না। 

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, ছাত্রবিষয়ক পরিচালক কয়েক দফা ঐ শিক্ষার্থীদ্বয়ের কাছে গিয়ে পরামর্শ দেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদেরকে সঠিক পথ অবলম্বনের পরামর্শ দিলেও তারা তা গ্রহণ করেনি। 

অপরদিকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ছাত্র রাজনীতি মুক্ত। কিন্তু সে বিষয়টিকে আমলে না নিয়ে এবং প্রকৃত ঘটনা না জেনে কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের ব্যান্যারে বিবৃতি প্রদান করা হচ্ছে। 

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতোপূর্বে ঐ দুই শিক্ষার্থীকে শাস্তি প্রদানের কারণ উল্লেখ করে প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রদান করা হয়েছে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনো ঘটনার প্রকৃত তথ্য বা কারণ না জেনে বিবৃতি প্রদানের ফলে যেমন একপেশে তথ্য পাওয়া যায়, তেমনি তাতে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অবকাশ থাকে। এমতাবস্থায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উক্ত শিক্ষার্থীদ্বয়ের ঘটনাসহ সাম্প্রতিক বিষয়ে প্রকৃত তথ্য জ্ঞাত হয়েই বিবৃতি বা মন্তব্য প্রদান সমীচীন বলে কর্তৃপক্ষ মনে করে।

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান/সনি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়