ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

মৃত বাঘ দিয়েই শুরু খুকৃবি’র গবেষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:৫১, ২৩ জানুয়ারি ২০২১  
মৃত বাঘ দিয়েই শুরু খুকৃবি’র গবেষণা

সুন্দরবনের পাহারাদার ও বাংলাদেশের জাতীয় প্রাণি রয়েল বেঙ্গল টাইগার দিয়েই গবেষণা কার্যক্রম শুরু করেছে খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। মৃত বাঘটি খুলনার জাহানাবাদ ক্যান্টনমেন্টস্থ বনবিলাস চিড়িয়াখানার। ভেটেরিনারি শিক্ষায় সহায়তার ইচ্ছা পোষণ করে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ বাঘটি খুকৃবিতে হস্তান্তর করে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খুলনার জাহানাবাদ ক্যান্টনমেন্টস্থ বনবিলাস চিড়িয়াখানায় ২০ জানুয়ারি বার্ধক্যজনিত কারণে একটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার মারা যায়। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ মৃত বাঘটিকে মাটি চাপা না দিয়ে ভেটেরিনারি শিক্ষায় সহায়তার ইচ্ছা পোষণ করেন।

এমন ইচ্ছার খবরটি খুলনা প্রাণিসম্পদ অফিসের মাধ্যমে জানতে পারে খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (খুকৃবি) কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি জেনেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষকদের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে খুকৃবি’র ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. শহীদুর রহমান খানকে জানানো হয়।

গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টি অবগত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মৃত বাঘটি পরিদর্শন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ভাইস চ্যান্সেলর নির্দেশ প্রদান করেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষকদের। তৎক্ষনাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি, এনিম্যাল অ্যান্ড বায়োমেডিকেল সায়েন্সেস অনুষদের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের একটি মেডিকেল টিম চিড়িয়াখানায় মৃত বাঘটিকে পরিদর্শন করেন। 

পরিদর্শনকৃত খুকৃবি’র মেডিকেল টিমে উপস্থিত ছিলেন খুকৃবি’র এনিম্যাল নিউট্রিশন বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ড. মো. তসলিম হোসেন, ফিজিওলজি বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ড. এম এ হান্নান এবং বিভিন্ন বিভাগের প্রভাষকবৃন্দের মধ্যে ডা. পাপিয়া খাতুন, ডা. জান্নাত হোসেন, ডা. স্বরূপ কুমার কুন্ডু, ডা. শাহাবুদ্দীন আহমেদ, ডা. মো. শহীদুল্লাহ্, ডা. শারমিন জামান, নাজমুল হক অপু সহ ছাত্র-ছাএীবৃন্দ। পরিদর্শন শেষে জাহানাবাদ ক্যান্টনমেন্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতিক্রমে বাঘটিকে খুকৃবি’র ভেটেরিনারি, এনিম্যাল অ্যান্ড বায়োমেডিকেল সায়েন্সেস অনুষদের নিকট হস্তান্তর করা হয়।

পরবর্তীতে বাঘটি দৌলতপুরে অবস্থিত খুকৃবি’র অস্থায়ী ক্যাম্পাসে আনা হয় এবং বাঘটির চামড়া, কংকাল, ও অভ্যন্তরীণ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ সমূহকে সংরক্ষণ করা হয়। যা ভবিষ্যতে ভেটেরিনারি, এনিম্যাল অ্যান্ড বায়োমেডিকেল সায়েন্সেস অনুষদের বিভিন্ন বিভাগের ব্যবহারিক পাঠদানে ও গবেষণার কাজে ব্যবহার করা হবে। 

খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি, এনিম্যাল অ্যান্ড বায়োমেডিকেল সায়েন্সেস অনুষদের শিক্ষার্থী মাহিরুল হক শিলং ও পিয়াল রায় বলেন, দেশের নবীনতম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হয়ে ব্যবহারিক শিক্ষা ও গবেষণার কাজে রয়েল বেঙ্গল টাইগার ব্যবহারের সুযোগ পাওয়া সত্যিই আনন্দদায়ক ও গর্বের। এই ধরণের অবিস্মরণীয় ও ঐতিহাসিক কাজের সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. শহীদুর রহমান খানকে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। 

খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. এম এ হান্নান বলেন, ভেটেরিনারি শিক্ষা ও গবেষণায় খুকৃবিতে নতুন একটি দ্বার উন্মোচন হলো। এই ধরনের বিভিন্ন শিক্ষামূলক কর্মকাণ্ডের  মাধ্যমে খুকৃবি উচ্চতর কৃষি শিক্ষার সকল স্তরে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। পাশাপাশি, ভবিষ্যতে শিক্ষা ও গবেষণায় এই ধরনের নতুন নতুন ইতিহাসের স্বাক্ষী হবে খুকৃবি বলেও বিশ্বাস করেন তিনি। এছাড়া খুকৃবির এনাটমি ও হিস্টোলজি বিভাগের প্রস্তাবিত ‘এনাটমি মিউজিয়াম’ বাস্তবায়িত হলে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের পুরো দেহের কঙ্কালটিকে সর্বসাধারণের জন্য উন্মোচন করা হবে। অধিকন্তু, মৃত বাঘটি হস্তান্তরের জন্য বন বিলাস চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. শহীদুর রহমান খান বলেন, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় দিন দিন শিক্ষা ও গবেষণায় নতুন নতুন ইতিহাসের স্বাক্ষী হবে। মৃত বাঘটির কংকাল ও অভ্যন্তরীণ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রতঙ্গ বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণের মাধ্যমে ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার কাজে ব্যবহার করা হবে। খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা শিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে কৃষি শিক্ষায় দক্ষিণ এশিয়ার একটি সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

নূরুজ্জামান/আমিনুল

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়