ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

চাঁদপুরে বাড়ির উঠানেই সবজি বাগান

অমরেশ দত্ত জয় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:১২, ২৪ জানুয়ারি ২০২১   আপডেট: ০৮:২১, ২৪ জানুয়ারি ২০২১
চাঁদপুরে বাড়ির উঠানেই সবজি বাগান

চাঁদপুরের অধিকাংশ বাড়ির উঠানে এখন সবুজের রাজত্ব। দিনে দিনে এসব সবুজ হয়ে উঠে পুষ্টির আধার। স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় পতিত জমি ও বাড়ির উঠানেই গড়ে উঠেছে এসব পুষ্টি বাগান।

জেলা কৃষি অধিদপ্তরের তথ‌্য অনুযায়ী, চাঁদপুরে ২ হাজার ৭২০টি সবজি ও পুষ্টি বাগান গড়ে উঠেছে। করোনা মহামারিতে দেশে যাতে সবজি সংকট না হয়, সে বিষয়ে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর তা বাস্তবায়নে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে চাঁদপুরে এখন অনেকেই গড়ে তুলছেন এ বাগান।

এসব পুষ্টি বাগানে ১৪ জাতের সবজি উৎপাদন করা হচ্ছে। বাগানে লাউ, শিম, ঢেঁড়স, ডাটা, ধনিয়া, চিচিংগা, পুঁই শাক, কলমি শাক, লাল শাক, পালং শাক, পেঁপে, মূলা, করলার মতো সবজি রয়েছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতেই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় এই কর্মসূচি শুরু হয়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নরেশ চন্দ্র দাস জানান, সরকারি প্রণোদনা হিসেবে প্রত‌্যেক কৃষককে ১৪ জাতের সবজির বীজ, বাগান তৈরির আনুষঙ্গিক ব্যয় বাবদ নগদ ১ হাজার ৯৩৫ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে চাঁদপুর সদরে ৪১৬টি, ফরিদগঞ্জ ৪৮০টি, হাজিগঞ্জে ২৮৮টি, মতলব(দক্ষিণ) ১৯২টি, মতলব(উত্তর) ৪৪৮টি, কচুয়া ৩৮৪টি, শাহারাস্তি ৩২০টি এবং হাইমচরে ১৯২টি পুষ্টি বাগান রয়েছে।

বাগান প্রস্তুত প্রণালী সম্পর্কে রাইজিংবিডিকে জানান চাঁদপুর সদরের কল্যাণপুর ইউনিয়নের দাসাদী ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মজিদ তালুকদার। তিনি বলেন, যেসব কৃষক-কৃষাণি পুষ্টি বাগান করতে আগ্রহী, তাদের নির্বাচন করি। বাড়ির আঙ্গিনায় ১২ ইঞ্চি দূরে দূরে বীজতলা তৈরি করা হয়। প্রতিটা বেডের চারদিক দিয়ে ১০ থেকে ১২ ইঞ্চি নালা রাখতে হয়। এভাবে পাঁচটি বীজতলা তৈরি করা হয়। যাতে পাঁচ জাতের শাকসবজি বপন বা রোপন করা যায়। এর জন্য বার্মি সার বা কেঁচোসার কৃষকদের দেওয়া হয়। এর সাথে পোকামাকড় দমন করতে কীটনাশকের পরিবর্তে আইপিএম পদ্ধতি ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হয়; যাতে পোকামাকড় দমনে পরিবেশের ক্ষতি না হয়।

পুষ্টিবাগানের গুরুত্ব সম্পর্কে চাঁদপুর সদর উপজেলার উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. সালাহ্ উদ্দিন রাইজিংবিডিকে জানান, বাজারের শাকসবজি অনেক সময়ই বিষযুক্ত থাকে। পুষ্টি বাগানের কৃষকেরা বিষমুক্ত শাকসবজি উৎপাদন করেন।
তিনি রাইজিংবিডিকে আরো বলেন, ‘বাড়ির পাশে বাগ-বাগিচা, শাক-সবজির চাষ, ফুল দেবে-ফল দেবে, পুষ্টি বারো মাস’ এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এসব পুষ্টি বাগান করা হয়েছে। পুষ্টি বাগান শুধু পারিবারিক চাহিদাই মিটাচ্ছে না, বরং বিক্রি করে সাবলম্বীও হচ্ছেন অনেকেই।

চাঁদপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আয়শা আক্তার জানান, পারিবারিক সবজি ও পুষ্টি নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় এসব পুষ্টি বাগান করা হয়েছে। চাঁদপুর সদর থানার প্রতিটি ইউনিয়নে ৩২টা করে মোট ৪১৬টি বসতবাড়িতে পুষ্টি বাগান গড়ে তোলা হয়েছে। এসব পুষ্টি বাগান গড়ে তুলতে প্রদর্শনিভূক্ত কৃষককে ১৪ ধরনের সবজি বীজ সরবরাহ করা হয়েছে। তারা এসব বীজ এক শতক জমিতে পাঁচটি বীজতলায় বপন করেছেন। এসব বীজতলা তৈরি করতে আন্তঃপরিচর্যা, সার কেনা, কীটনাশক কেনা এবং চারপাশে ঘের বেড়া তৈরির খরচ বাবদ অ্যাকাউন্ট পে-চেকের মাধ্যমে ১ হাজার ৯৩৫ টাকা করে দেওয়া হয়েছে।

চাঁদপুর জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জালাল উদ্দিন রাইজিংবিডিকে জানান, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অণুযায়ী প্রতি ইঞ্চি কৃষি জমি কাজে লাগাতে হবে। সারা বছর সবজি চাষ করতে জুন থেকে এই প্রকল্পে কৃষি প্রণোদনা ভর্তুকি খাতে কৃষকদের বিনামূল্যে বীজ ও নগদ অর্থ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে জেলায় ২ হাজার ৭২০ জন কৃষককে শাক-সবজি উৎপাদনের জন্য সবজি বীজ ও আনুষঙ্গিক খরচ হিসেবে নগদ টাকা দেওয়া হয়।

চাঁদপুর/অমরেশ/এসএন

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়