ক্রাচের অভাবে হাঁটতে পারছেন না টুকু মিয়া 

ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরি করতেন টুকু মিয়া (৪০)। ২০১৩ সালে ঢাকা থেকে বাড়ি আসার পথে চলন্ত বাস থেকে পড়ে গিয়ে উরু থেকে ডান পা হারান টুকু।

ঢাকার হাসপাতালে চিকিৎসার পর টুকুকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। এক পা হারিয়ে নানা প্রতিকূলতার মধ্যে পড়ে যান তিনি। সেই থেকে ক্রাচই টুকু মিয়ার (৪০) সঙ্গী হয়। বগলের নিচে ক্রাচ নিয়ে চলা ফেরা করতেন তিনি। সঙ্গে টুকটাক কাজও করতেন। কিন্তু সম্প্রতি ক্রাচটি ভেঙে গেছে। জোড়াতালি দিয়ে কিছুদিন চালালেও এখন আর পারছেন না। ফলে বন্ধ হয়ে গেছে টুকু মিয়ার কাজ, সেই সঙ্গে আয় রোজগারও। কাজ করতে না পারায় পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্টে আছেন তিনি।

অসহায় টুকু মিয়ার বাড়ি মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা সদরের রায়পুর গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের লতিফ শেখের ছেলে।

টুকু জানান, তার দুই ছেলেমেয়ে লেখাপড়া করছে। বড় ছেলে মনির অষ্টম শ্রেণিতে ও মেয়ে মিম প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। স্ত্রী রহিমা বেগম অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ চালাতে তিনি স্থানীয় একটি এনজিও থেকে ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন। দিনমজুরি ও স্ত্রীর আয় হিসেবে যে মজুরি পেতেন, ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে গিয়ে তার অর্ধেকের বেশি টাকা শেষ হয়ে যায়। বাকি টাকায় সংসার আর ছেলেমেয়ের লেখাপড়া চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাকে।

টুকুর স্ত্রী রহিমা বেগম জানান, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম স্বামী পঙ্গু হয়ে পড়ায় তারা খুব কষ্টে আছেন। খেয়ে না খেয়ে তাদের দিন কাটে। আগে টুকটাক কাজ করতে পারলেও এখন ক্রাচ ভেঙে যাওয়ায় কোনো কাজ করতে পারছেন না তার স্বামী। সংসারের খরচ মিটিয়ে দুই হাজার টাকা সঞ্চয়ও করতে পারছেন না- ক্রাচও কিনতে পারছেন না।

টুকু মিয়া জানান, তার ক্রাচটি ভেঙে গেছে। নতুন একটি ক্রাচ কিনতে ২ হাজার টাকার দরকার। টাকার অভাবে ক্রাচ কিনতে না পারায় চলাফেরায় খুবই সমস্যা হচ্ছে তার। 

মহম্মদপুরে উপজেলার ধোয়াইল আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম জানান, টুকু মিয়া আগে ঢাকায় চাকরি করতেন। দুর্ঘটনায় পড়ে পা হারানোর পর পরিবার নিয়ে খুবই কষ্টে আছেন।

মহম্মদপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাবেয়া বেগম জানান, দুর্ঘটনায় পা হারিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন টুকু মিয়া। তাকে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে খাদ্য সহায়তাসহ বিভিন্ন সহযোগিতা প্রদান করা হবে।