ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

নির্বাচনী প্রচারে সরগরম চৌমুহনী পৌরসভা

নোয়াখালী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:৪২, ২৬ জানুয়ারি ২০২১   আপডেট: ২১:৪৮, ২৬ জানুয়ারি ২০২১
নির্বাচনী প্রচারে সরগরম চৌমুহনী পৌরসভা

আকতার হোসেন ফয়সল, জহির উদ্দিন হারুন ও খালেদ সাইফুল্লা

আগামী ৩০ জানুয়ারি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনী পৌরসভায় নির্বাচন হবে। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে নির্বাচনী প্রচারে জমজমাট হয়ে উঠেছে পুরো পৌর এলাকা। ভোটের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই প্রার্থীদের তৎপরতা বাড়ছে।

পোস্টার-ব্যানারে ছেয়ে গেছে পৌরসভার অলিগলি ও রাস্তার দুই পাশ। কনকনে শীত উপেক্ষা করে প্রার্থীরা কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পাড়া-মহল্লায় গিয়ে ভোট চাচ্ছেন।

জেলার প্রধান বাণিজ্যিক শহর নিয়ে চৌমুহনী পৌরসভা গঠিত। এ পৌরসভায় মোট ভোটার ৫৪ হাজার ২৫৪ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ২৮ হাজার ৫১৩ জন ও নারী ২৫ হাজার ৭৪১ জন। নয়টি ওয়ার্ডের ২০টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হবে।

চৌমুহনী পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে চারজন, ৯টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৩৬ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মেয়র পদে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা আছে। জেলার গুরুত্বপূর্ণ চৌমুহনী পৌরসভার নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান মেয়র আকতার হোসেন ফয়সল (নৌকা), বিএনপির মনোনীত প্রার্থী পৌর বিএনপির সভাপতি জহির উদ্দিন হারুন (ধানের শীষ), স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বর্তমান সংসদ সদস্য ও বেগমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদ কিরণের বড় ভাই খালেদ সাইফুল্লা (মোবাইল ফোন) ও ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন মনোনীত প্রার্থী মো. জাকের হোসেন (হাত পাখা)।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত একাধিক বিতর্কিত কাউন্সিলর প্রার্থী আছেন প্রতিটি ওয়ার্ডে। নতুন-পুরাতন প্রার্থীর যোগ্যতা, আচার-আচরণ ও কর্মকাণ্ড নিয়ে হিসেব-নিকেশ করছেন সচেতন ভোটাররা।

চৌমুহনীসহ বেগমগঞ্জে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দীর্ঘ দিন ধরে কোন্দলে জর্জরিত। বর্তমানে আওয়ামী লীগ তিনটি গ্রুপে বিভক্ত। এ বিভক্তিকে কৌশলে কাজে লাগাতে চাচ্ছে বিএনপি ও জামায়াত।

পৌর এলাকার সন্ত্রাসী বাহিনীগুলো বিভিন্ন কারণে কিছুদিন নীরব থাকলেও আসন্ন পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পুনরায় তারা চাঙ্গা হয়ে উঠছে বলে জানা গেছে। এতে এলাকাবাসী ও সাধারণ ভোটাররা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। কারণ, গত ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর চৌমুহনী পৌর নির্বাচনের দিন গোলযোগ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে ২০টি কেন্দ্রের মধ্যে ১০টিতে ভোট গ্রহণ স্থগিত করতে বাধ্য হয় স্থানীয় প্রশাসন। স্থগিত হওয়া কয়েকটি কেন্দ্রে পুনরায় গোলযোগের কারণে তিন বার ভোট গ্রহণ স্থগিত হয়। পরে কঠোর নিরাপত্তার মধ‌্যে কেন্দ্রগুলোতে ভোট গ্রহণ করা হয়। এবারের নির্বাচনেও আগের মতো গোলযোগের আশঙ্কা করছেন প্রার্থী এবং ভোটাররা।

আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আক্তার হোসেন ফয়সল বলেন, ‘আমি গত দুই মেয়াদে মেয়র থাকাকালীন চৌমুহনীতে আধুনিক বাস টার্মিনাল, নান্দনিক পৌর পার্ক ও অত্যাধুনিক মার্কেট নির্মাণ, রাস্তাঘাট পাকাকরণ, বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং চৌমুহনী শহরকে সিসি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসাসহ প্রায় ৩০০ কোটি টাকার উন্নয়নকাজ করেছি। পৌরসভার প্রায় ১৭০ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে ১৫০ কিলোমিটার রাস্তাই পাকা করা হয়েছে। যা পৌরসভার নিজস্ব তহবিল ও বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থে বিশেষ বরাদ্দে বাস্তবায়িত হয়েছে। অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করার জন্য পৌরবাসী আমাকে সুযোগ দেবে, এটা আশা করি।’

বিএনপির মনোনীত প্রার্থী জহির উদ্দিন হারুন বলেন, ‘চৌমুহনী পৌরসভাসহ বেগমগঞ্জ উপজেলা বিএনপি তথা ধানের শীষের দুর্গ। ৩০ জানুয়ারি ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারলে আমি বিপুল ভোটে জয়লাভ করব।’ তিনি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ তৈরির জন‌্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।

স্বতন্ত্র প্রার্থী খালেদ সাইফুল্লাহ বলেন, ‘ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারলে আমি নির্বাচিত হবো।’

বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বিমলেন্দু কিশোর পাল জানান, নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করার জন্য নির্বাচন কমিশন প্রস্তুত। কেন্দ্রে কেন্দ্রে ম্যাজিস্ট্রেট থাকবে। পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব ও আনসার সদস‌্যদের নিয়ে বিশেষ ফোর্স গঠন করা হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভ্রাম‌্যমাণ দল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স প্রস্তুত থাকবে।

বেগমগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান শিকদার জানান, নির্বাচনের সময় যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না হয়, সে বিষয়ে সজাগ আছে পুলিশ প্রশাসন।

সুজন/রফিক

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়