ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

আবর্জনায় ডুবছে শজিমেক, টাকা ছাড়া মিলছে না ট্রলি

এনাম আহমেদ, বগুড়া || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:১৭, ২৯ জানুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১৪:৩৪, ২৯ জানুয়ারি ২০২১
আবর্জনায় ডুবছে শজিমেক, টাকা ছাড়া মিলছে না ট্রলি

বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে সেপটিক ট্যাঙ্কির উপচেপড়া পানি ও আর্বজনা পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। হাসপাতালের অধিকাংশ বাথরুমও অপরিচ্ছন্ন, ব্যবহার উপযোগী নয়। আবার রোগী বহনের ট্রলিও থাকে ওয়ার্ডবয়দের নিয়ন্ত্রণে। তাদের বখশিশ না দিয়ে সেটি ব্যবহার করা যায় না। 


বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের সঙ্গে খালি জায়গা। যেখানে বেশ কয়েকটি সেপটিক ট্যাঙ্কি রয়েছে। ওই ট্যাঙ্কিগুলো ভরে গিয়ে তা থেকে মলমূত্রসহ পানি বের হচ্ছে। সেই হলুদরঙের পানি সেখানে জমে আছে দীর্ঘদিন। ভবনের ওপর তলা থেকে রোগীর স্বজনরাও সেখানে রুটি, কলার খোসা, প্লাস্টিকের বোতল, খাবারের প্যাকেট ফেলছেন। এতে সেখানে আবর্জনার স্তূপ জমে গেছে। উৎকট দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে সেখান থেকে।


হাসপাতালের বেশিরভাগ বাথরুমে ময়লা পানি জমে আছে, অথবা এতটাই নোংরা যা ব্যবহার উপযোগী নয়। বেসিনগুলোর অবস্থাও একই। অনেক রাথরুমে দরজা নেই। রোগী অথবা রোগীর স্বজনদের কারো যদি বাথরুমে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে, তাহলে একজনকে সামনে দাঁড় করিয়ে রাখতে হয়; যাতে অন্য কেউ সেখানে ঢুকে না পড়ে। 

বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার বুড়ইল গ্রামের আব্দুল মমিন তার বড় ভাইকে বিভিন্ন পরীক্ষা করানোর জন্য কয়েকবার প্যাথলজি বিভাগে নিয়ে আসেন। তিনি জানান, এই বিভাগের আশপাশে দুর্গন্ধে তার নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়ার অবস্থা হয়।  

বগুড়ার কাহালু উপজেলার দরগাহাটা গ্রামের আল আমিন তার বড় ভাইয়ের সঙ্গে পাঁচ দিন হাসপাতালে ছিলেন। তিনি জানান, তাদের ওয়ার্ডের বাথরুম ব্যবহার উপযোগী ছিলো না। এ জন্য তিনি ওই ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার বাথরুমে যান। সেখানেও তিনি একই অবস্থা দেখেছেন।  

হাসপাতালের তৃতীয় তলায় দেখা যায়, মাঝ বয়সী এক নারী ও ২৫/২৬ বছর বয়সী যুবকের কাঁধে ভর করে এক রোগী পাশের ওয়ার্ডে যাচ্ছেন। কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে জানা যায়, যুবকের নাম শহীদুল ইসলাম। দেড় মাস আগে তার বাবাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে আসেন। তার বাবার পায়ে সেলুলাইটিস হয়েছে।

শহীদুল ইসলাম জানান, এ দফায় দেড় মাস হলো বাবাকে নিয়ে হাসপাতালে আছেন। এর আগেও একমাস বাবাকে নিয়ে এখানে থাকতে হয়েছে। আক্রান্ত স্থানে চামড়া লাগানো হয়েছিল। সেখানে আবারও পচন ধরেছে। তিনি রোগী বহনের ট্রলি খুঁজে পাননি, তাই বাবাকে ধরে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাচ্ছেন। 

শহীদুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ওয়ার্ডে ট্রলি থাকলেও ওয়ার্ডবয়রা তা ঘরে আটকে রাখেন। টাকা দিলে তবে ট্রলি বের করেন। এর আগেও তিনি বেশ কয়েকবার ট্রলির জন্য ২০০ থেকে ৩০০ করে টাকা দিয়েছেন। এছাড়াও আগেরবার তার বাবার আক্রান্ত স্থানে ড্রেসিংয়ের জন্য ৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এই টাকা ওয়ার্ডবয়দের দিতে হয়েছে বলে জানান তিনি। 

শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ ওয়ার্ডবয়দের টাকা দাবির বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরাও বিব্রত। রোগীবহনে ট্রলির জন্য টাকা নেওয়ার সুযোগ নেই। তারপরও তারা নিচ্ছেন বলে জানতে পেরেছি।’ 

তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে থেকে রোগীকে ওয়ার্ডে পৌঁছানোর জন্য যাতে টাকা না দিতে হয়, সেজন্য গত সপ্তাহে ১৮ জন ওয়ার্ডবয়কে বাছাই করা হয়েছে। যারা রোগী ভর্তির পর ট্রলিতে করে ওয়ার্ডে বহনের কাজ করবে। এই ওয়ার্ডবয়দের জন্য আলাদা ড্রেস এবং নেমপ্লেট থাকছে।’

হাসপাতালের নোংরা পরিবেশ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সপ্তম তলায় নির্মাণকাজ চলছে। এতে ফলস ছাদে অবর্জনা পড়ে পথ বন্ধ হয়ে গেছে। যে কারণে ওই স্থানে এ রকম বাজে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।’ 

হাসপাতালের প্রতিটি বাথরুম ও টয়লেট খুব শিগগির উন্নত করা হবে; এগুলো মেরামতের জন্য টেন্ডারও হয়ে গেছে বলে জানান হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ।

ঢাকা/বকুল 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়