ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

কমেছে করোনা সংক্রমণের হার, বাড়ছে শীতকালীন ফ্লু

আরিফুল ইসলাম সাব্বির || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:২৩, ২৯ জানুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১০:২৯, ২৯ জানুয়ারি ২০২১
কমেছে করোনা সংক্রমণের হার, বাড়ছে শীতকালীন ফ্লু

পরীক্ষার তুলনায় করোনা সংক্রমণের হার কমেছে ঢাকার সাভার ও আশুলিয়া অঞ্চলে। তবে হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে শীতকালীন বিভিন্ন ফ্লু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।

সাভার ও আশুলিয়া উপজেলার দুই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সরেজমিনে ঘুরে এমন তথ‌্যই জানিয়েছেন সেখানকার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নূর রিফফাত আরা ও ডা.সায়েমুল হুদা।

ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ জানায়, এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জ্বর, ঠাণ্ডাজনিত ও শীতকালীন ফ্লুতে আক্রান্ত হয়ে গেলো একমাসে চিকিৎসা নিয়েছেন ৩৮৯ জন রোগী। ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে আন্তঃ ও বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন ১৫১ জন রোগী। একই সময়ে ১৫০ জনের করোনা নমুনা নেওয়া হলে ১ জনের পজিটিভ ফলাফল আসে।

এই হাসপাতালটিতে উপজেলার সানোড়া ইউনিয়নের মধুডাঙ্গা এলাকা থেকে চিকিৎসা নিতে এসেছেন আনোয়ার হোসেন (৩৫) নামে এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, গত কয়েকদিন ধরেই মাথা ব্যথা আর জ্বর ছিলো। পরে বহির্বিভাগ থেকে ডাক্তার দেখিয়েছি। তিনি চিকিৎসা দিলেন। তবে এজন‌্য তাকে খুব বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি বলেও জানান তিনি।

এদিকে, ডায়রিয়া নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ধামরাই সদর ইউনিয়নের সাগর হোসেন (১৭)। জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত কয়েকদিন ধরেই তার অসুস্থতা ছিলো। পরে হাসপাতালে এসে ডাক্তার দেখানোর পর এখন চিকিৎসা নিচ্ছি। চিকিৎসা নিয়েও সন্তুষ্টি জানান তিনি।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নূর রিফফাত আরা জানান, পৌষের হিমেল হাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র শীতে কাবু হয়ে পড়ে শিশুরা। শীতকালে কনকনে ঠাণ্ডা বাতাসের কারণে বড়দের মতো শিশুরাও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এর মধ্যে তাদের সর্দি-কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়ার প্রকোপ রয়েছে। তবে বেশিরভাগ রোগীই বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েই সুস্থ হয়ে যান। এজন্য এইসময়ে বহির্বিভাগে রোগীর চাপ থাকে।

এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা মা-বাবাদের এই সময়ে শিশুদের বিশেষ যত্ন নেওয়ার কথা বলি যেন তাদের ঠাণ্ডা-সর্দি না লাগে। কারণ একবার ঠাণ্ডা লাগলে কমপেক্ষ ১৪ দিনের আগে সুস্থ হয় না। আর এতদিন হাসপাতালে রাখাও যায় না। কারণ এখানে অনেক রোগীর জন্য অনেক ঝুঁকি থাকে। রোগীর সুস্থতার জন্যই তখন ছুটি দিয়ে দিতে হয়।’

করোনাভাইরাসের কারণে অন্যান্য চিকিৎসা ব‌্যাহত হচ্ছে কি না জানতে চাইলে এই চিকিৎসক বলেন, ‘ধামরাইয়ে করোনা সংক্রমণের হার কমে এসেছে। যে কয়জন এখনো আক্রান্ত রয়েছেন তাদেরকে বাড়িতে থেকেই নিয়মিত চিকিৎসার আওতায় রাখা হচ্ছে। ফলে ওই চাপ হাসপাতালে পড়ছে না। আমরা নিয়মিত রোগীদের সেবা দিচ্ছি।’

অপরদিকে, একই সময়ে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে গেল এক মাসে বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন ৩৩১৩ জন। অন্তঃবিভাগে ভর্তি ছিলেন ৩১২ জন।

হাসপাতালটিতে ঘুরে দেখা গেছে, বহির্বিভাগে রোগীর চাপ থাকলেও অন্তঃবিভাগে রোগীর সংখ্যা কম। রোগীদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, করোনা সংক্রমণের পর থেকেই হাসপাতালে থাকার চেয়ে বাড়ি থেকে চিকিৎসা নেয়াই নিরাপদ মনে করছেন তারা।

কথা হলো পৌর এলাকার শিমুলতলা থেকে চিকিৎসা নিতে আসা পারভীন আক্তারের (২২) সঙ্গে। তার ৮ মাস বয়সি শিশুর ঠাণ্ডা জ্বরের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে এসেছেন তিনি। পারভীন বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরেই তীব্র শীত। সবসময় ঢেকেঢুকে রেখেও বাচ্চা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাই ডাক্তার দেখাতে এসেছি।’

চিকিৎসা নিতে কোন বিড়ম্বনা পোহাতে হলো কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গত কিছুদিনে তো নিয়মিতই হাসপাতালে আসতে হয়। করোনা শুরুর পর থেকে হাসপাতালে ভিড় এমনিতেই কম।’

কথা হলো অন্তঃবিভাগে চিকিৎসা নেয়া সাইফুল ইসলামের (২৮) সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই পাতলা পায়খানা আর জ্বর শুরু হয়েছিলো। পরে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। এখন কিছুটা সুস্থ।’

এখানকার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সায়েমুল হুদা বলেন, ‘হাসপাতালগুলোতে এখন কিছু ডায়রিয়ার রোগী আসছে। এই শীতে শিশুদের মধ্যে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেশি থাকে। কারও মলমূত্রের সঙ্গে রক্তও দেখা যায়। অনেক শিশু বমি করে। যেসব শিশুর ডায়রিয়া হালকা তাদের স্যালাইন দিচ্ছি আমরা। আবার জরুরি চিকিৎসার দরকার হলে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করানো হচ্ছে।’

করোনা সংক্রমণের হারের কারণে অন্যান্য চিকিৎসা ব‌্যাহত হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এরকম রোগী সেভাবে হাসপাতালে ভর্তি নেই। ফলে অন্যান্যদের চিকিৎসা স্বাভাবিকভাবেই চলছে।’

সাভার/বুলাকী

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়