ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

এনজিও ম্যানেজারের বিরুদ্ধে গ্রাহককে আটকে রাখার অভিযোগ

লালমনিরহাট প্রতিনিধি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:০৪, ৩১ জানুয়ারি ২০২১   আপডেট: ০৮:১৭, ৩১ জানুয়ারি ২০২১
এনজিও ম্যানেজারের বিরুদ্ধে গ্রাহককে আটকে রাখার অভিযোগ

মায়ের মৃত্যু ও সড়ক দুর্ঘটনায় মেয়ে আহত হওয়ায় কিস্তি দিতে পারেননি দিনমজুর একরামুল হক এর স্ত্রী শিউলী বেগম। সে কারণে এনজিও’র ম্যানেজার একরামুলকে  ডেকে নিয়ে অফিসের রুমে তালাবদ্ধ করে রাখেন।

এমন অভিযোগ উঠেছে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার এনজিও পপি’র ম্যানেজার মন্তাজ হোসেনের বিরুদ্ধে।

ম্যানেজার মন্তাজ হোসেন বলেন, আটকিয়ে রাখার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে, সে কয়েকটি কিস্তি দিতে পারেনি। তাই তাকে প্রেসার ক্রিয়েট করা হয়েছে। এমন ঘটনা কোনো এনজিওতে ঘটে না।’

শনিবার (৩০ জানুয়ারি) উপজেলার মেডিকেল মোড়স্থ দইখাওয়া ‘রোডের পিপলস ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রাম ইমপ্লিমেন্টেশন (পপি)’ এ ঘটনা ঘটে। পরে স্থানীয় জন প্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগ নেতা এসে তাকে উদ্ধার করেন। 

জানা গেছে, উপজেলার পশ্চিম বেজ গ্রাম এলাকার মৃত্যু সোলেমান গনির ছেলে দিনমজুর মো. একরামুল হক ওরফে একরা (৪৮) আর্থিক অনাটনের কারণে গত ২৬ নভেম্বর স্থানীয় এনজিও ‘পিপলস ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রাম ইমপ্লিমেন্টেশন (পপি)’ অফিস থেকে স্ত্রী শিউলী বেগমের নামে ২০ হাজার টাকা ঋণ নেয়। সাপ্তাহিক দুটি কিস্তি দেয়ার পর একরামুলের মা গত ১২ ডিসেম্বর মারা যায় এবং হঠাৎ করে শফিপুরের গার্মেন্টস থেকে বাসা যাবার পথে ১৮ জানুয়ারি সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয় বড় মেয়ে শারমিন বেগম (২১)। মায়ের কুলখানি ও ঢাকায় গিয়ে মেয়ের চিকিৎসা করার ফলে ২-৩ সপ্তাহে পপি অফিসের সাপ্তাহিক কিস্তি দিতে পারেনি একরামুল দম্পতি।

কিন্তু ঐ এনজিও পপি অফিসের ম্যানেজার মন্তাজ হোসেনের কাছে একরামুল দম্পতির এ দুঃখের কথার কোন মূল্য নেই। তারা শুধু কিস্তির টাকা বোঝেন। কিস্তি দিতে না পারায় শনিবার সকাল ১০টার দিকে পপি অফিসের ম্যানেজার মন্তাজ হোসেন ফোন দিয়ে একরামুলকে তার অফিসে ডেকে ভাড় ধাক্কা দিয়ে রুমে তালাবদ্ধ করে রাখে এবং পরিবারের লোকজনকে কিস্তির টাকা নিয়ে আসার জন্য একরামুলকে ফোন দিতে বলে। কিস্তির টাকা দিতে না পারলে তাকে রুমে তালাবদ্ধ অবস্থা থাকতে হবে বলে জানায়।

একরামুল এদিক-ওদিকে বিভিন্ন স্থানে ফোন দিয়ে কোথাও টাকা ম্যানেজ করতে না পেরে ম্যানেজার মন্তাজ হোসেনকে ১০-১২ ফেব্রুয়ারি মেয়ের বেতন পেলে কিস্তির সব টাকা পরিশোধ করে দিবে বলে প্রতিশ্রুতি দিলেও কোন কাজ হয়নি।

পরে খবর পেয়ে একরামুলের পরিবার টংভাঙ্গা ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ড সদস্য আশরাফ আলী, ঐ ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম ও সাংবাদিককে ডেকে নিয়ে পপি অফিস থেকে একরামুলকে উদ্ধার করে।

দিনমজুর একরামুল হক বলেন, মায়ের মৃত্যু ও সড়ক দুর্ঘটনায় মেয়ে গুরুতর আহত হলে একটি মাস আমাকে অনেক ঝামেলার মধ্যে সময় পার করতে হয়। ফলে আমি ২-৩টা কিস্তি দিতে পারিনি। এজন্য পপি অফিসের ম্যানেজার মন্তাজ হোসেন আজ সকালে আমাকে অফিসে ডেকে এনে অনেক গালমন্দ করে এবং ঘাড় ধাক্কা দিয়ে রুমে তালাবদ্ধ করে রাখে। 

এ বিষয়ে কথা হলে টংভাঙ্গা ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ড সদস্য আশরাফ আলী বলেন, আমরা গিয়ে একরামুলকে অফিসে দেখতে পাই। তারপর তাকে আমরা সেখান থেকে নিয়ে আসি।

 ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, একরামুলের মায়ের মৃত্যু ও মেয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হওয়ায় কারণে ২-১টা কিস্তি দিতে পারেনি। আমাদের সামনে ম্যানেজার অস্বীকার করেছে। তবে, তাদের স্টাফ একজন ধাক্কাধাক্কির কথা স্বীকার করেছে। ইতোপূর্বে গ্রামের লোকজন একরামুলকে বিভিন্নভাবে অর্থ সহায়তা দিয়েছি। একরামুলের মেয়ের ঘটনার আমরা সবাই টাকা তুলে তার মেয়ের জন্য পাঠিয়েছি। এমন আটকিয়ে রাখা উচিত হয়নি। সে গরীব মানুষ।

তবে এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে ঐ এনজিও ‘পিপলস ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রাম ইমপ্লিমেন্টেশন (পপি)’ এর এরিয়া ম্যানেজার মফিজুল ইসলাম বলেন, আমি ছুটিতে ছিলাম। আজকের এ ঘটনার জন্য আমি দুঃখিত। তাদের সাথে কথা বলেছি। এ বিষয়ে বিকালে ওদেরকে নিয়ে বসার কথা ছিল। কিন্তু তারা আসেননি। আমরা জনসাধারণের জন্য কাজ করি। যদি আমার স্টাফের কোনো দোষ-ত্রুটি থাকে, সেটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো।’

ফারুক/আমিনুল

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়