ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ভালো ফলনেও বিপাকে মানিকগঞ্জের পেঁয়াজ চাষিরা

জাহিদুল হক চন্দন  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:২৪, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১০:৫০, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২১
ভালো ফলনেও বিপাকে মানিকগঞ্জের পেঁয়াজ চাষিরা

উত্তম পরিচর্যা আর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পেঁয়াজের ফলন ভালো হলেও বাজারদর মন্দা থাকায় বিপাকে পড়েছেন মানিকগঞ্জের পেঁয়াজ চাষিরা।

আগাম পেঁয়াজের বাজারদর মন্দা থাকায় খরচের টাকা তুলেতেই হিমশিম খাচ্ছেন কয়েক হাজার চাষি। বিগত মৌসুমে ভালো বাজারদর পেলেও চলতি মৌসুমে তেমন দাম না পাওয়ায় হতাশ তারা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, অনেক চাষি পেঁয়াজ লাগানোতে এখনো ব্যস্ত সময় পার করছেন। কিন্তু আগাম চাষ করা পেঁয়াজ এরই মধ্যে বাজারে আসতে শুরু করেছে। চাহিদানুযায়ী বাজারদর না থাকায় বিপাকে পড়েছেন আগাম পেঁয়াজ চাষ করা চাষিরা। অর্থাভাবে অধিকাংশ চাষী বাজারে নতুন পেঁয়াজ বিক্রি করলেও অনেকেই উন্নত বাজারদরের আশায় নিজ বাড়িতে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, গত মৌসুমে মানিকগঞ্জে ৫ হাজার ৬৪৩ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়। ভালো বাজারদর আর বাম্পার ফলনের ফলে চলতি মৌসুমে পেঁয়াজ চাষির সংখ্যা বাড়বে বলে ধারণা কর্তৃপক্ষের। চলতি মৌসুমে জেলায় পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ‌্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৯৫৪ হেক্টর জমি। যার অধিকাংশ জমিতেই সম্পন্ন হয়েছে পেঁয়াজের আবাদ।

পেঁয়াজ চাষিরা জানান, জমি তৈরি, বীজ বপন, সার, কীটনাশক, পানি ও শ্রমিকের খরচ মিলিয়ে প্রতি শতাংশ জমিতে পেঁয়াজ আবাদে খরচ হয় ১২ থেকে ১৩’শ টাকা। প্রতি শতাংশ জমি থেকে এক থেকে সোয়া মণ পেঁয়াজের ফলন পাওয়া যায়। যার হালনাগাদ বাজারদর ১২ থেকে ১৩’শ টাকা। যে কারণে মুনাফার আশা ছেড়ে দিয়ে খরচের টাকা তুলতেও হিমশিম অবস্থায় পড়তে হচ্ছে।

শিবালয় উপজেলার শিমুলিয়া এলাকার চাষি শুক্কুর আলী জানান, চলতি মৌসুমে পেঁয়াজের ফলন ভালো হলেও বাজারদর মন্দা থাকায় কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে।  এক মণ পেঁয়াজের ফলন পেতে ৯’শ থেকে এক হাজার টাকা খরচ হয়। এরপর বাজারজাতকরণের খরচও আছে। বাজারে এখন ৯’শ টাকা মণে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে। যে কারণে লোকসান গুনতে হচ্ছে আগাম পেঁয়াজ চাষিদের।

হরিরামপুর উপজেলার বাল্লা এলাকার  শাজাহান মিয়া জানান, চলতি মৌসুমে ৪০ শতাংশ জমিতে সাগা (গুটি) পেঁয়াজের আবাদ করতে খরচ হয়েছে ৫০ হাজার পাঁচশো টাকা।

চাষের জন্য ৮ মণ গুটি পেঁয়াজ কিনতে ৩৪ হাজার টাকা, ৬ হাজার টাকার সার, দেড় হাজার টাকার ভিটামিন, হাল চাষ, পানি ও শ্রমিক বাবদ ব্যয় হয়েছে আরও ৯ হাজার টাকা।  চলতি মৌসুমে পেঁয়াজের ফলনও হয়েছে ভালো। যে কারণে ওই জমি থেকে প্রায় ৬০ মণ পেঁয়াজ পাওয়া যাবে। তবে বাজারে এখন ৯০০ থেকে এক হাজার টাকা মণে পেঁয়াজ বিক্রি করলে নতুন করে শ্রমিকের খরচ ও বাজারজাত করণের ব্যয় বহন শেষে মুনাফার খাতা শূন‌্য থাকবে বলে জানান তিনি।

বাল্লা এলাকার নাসিমা বেগম বলেন, ‘পেঁয়াজের বাজার তেমন ভালো না। তাই শ্রমিকের খরচ বাঁচাতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাড়ির সবাই মাঠে কাজ করি। তাতেও যদি একটু খরচের টাকা কমে।’

বরংগাইল পাইকারি পেঁয়াজ বাজারের সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক জানান, পাইকারি বাজারে আটশো থেকে এক হাজার টাকা মণে পেঁয়াজ বেচাকেনা হচ্ছে। পেঁয়াজের আমদানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাজারদরও কমে আসছে বলেও জানান তিনি।

মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শাহজাহান আলী বিশ্বাস বলেন, চলতি মৌসুমে জেলায় ৫ হাজার ৯৫৪ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ‌্যমাত্রা ধরা হয়েছে। অনূকুল আবহাওয়ায় মানিকগঞ্জে পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছে। এছাড়া মাঠ পর্যায়ে কৃষি অফিসের লোকজন নিয়মিত পেঁয়াজ চাষিদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।

মানিকগঞ্জ/বুলাকী

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়