ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

কানাইঘাট পৌর নির্বাচন: সম্পদে এগিয়ে নিজাম, মামলায় শরিফুল

আব্দুল্লাহ আল নোমান, সিলেট || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:২৬, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১৯:৩৩, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১
কানাইঘাট পৌর নির্বাচন: সম্পদে এগিয়ে নিজাম, মামলায় শরিফুল

সিলেটের সীমান্তবর্তী পৌরসভা কানাইঘাট। এ পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি। এ কারণে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটছেন প্রার্থীরা। দিচ্ছেন নানান প্রতিশ্রুতি। এ পৌরসভায় মেয়র পদের জন্য লড়ছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ অন্যান্য দলের ৬ প্রার্থী।

প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সম্পদের মালিক স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র মো. নিজাম উদ্দিন। আর মামলার দিক থেকে এগিয়ে আছেন বিএনপির মনোনীত প্রার্থী বর্তমান কাউন্সিলর মো. শরিফুল হক। অবশ্য, শিক্ষায়ও তিনি আছেন এগিয়ে। প্রার্থীদের মধ্যে একমাত্র স্নাতক পাস তিনি।

আওয়ামী লীগ মনোনীত লুৎফুর রহমান শিক্ষাগত যোগ্যতায় এইচএসসি পাস বলে উল্লেখ করেছেন। আর স্বশিক্ষিত বলে উল্লেখ করা প্রার্থীও আছেন দুজন। তারা হলেন- স্বতন্ত্র প্রার্থী সোহেল আমিন এবং ইসলামী আন্দোলন মনোনীত প্রার্থী নজির আহমদ। এছাড়া অপর প্রার্থী কাওসার মাধ্যমিকের গণ্ডি পাড়ি দিয়েছেন। তিনি দাখিল পাস করেছেন।

নির্বাচন কমিশনে দায়ের করা মেয়র প্রার্থীদের হলফনামায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। 

সম্পদে এগিয়ে থাকা বর্তমান মেয়র নিজাম উদ্দিন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নারিকেল গাছ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে লড়ছেন। তিনি এইচএসসি পাস করেছেন। তার নামে কোনো মামলা নেই। নেই ব্যাংক কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কোনো ঋণও।

বাড়ি ভাড়া থেকে পাওয়া সাড়ে ৭ লাখ টাকা এবং মেয়রের সম্মানী থেকে পাওয়া ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকাই তার আয়ের উৎস। 
অস্থাবর সম্পত্তিতে নিজ নামে নগদ ১৪ লাখ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ৪৯ লাখ ৭৯ হাজার ১৮২ টাকা এবং ২ লাখ টাকা মূল্যমানের ইলেকট্রনিক সামগ্রী, আসবাবপত্র এবং অন্যান্য সামগ্রী রয়েছে।

একইসাথে স্থাবর সম্পত্তিতে নিজ নামে ২২ একর কৃষি জমি, স্ত্রীর নামে ৬ একর কৃষি জমি, কানাইঘাটে একটি ৪ তলা ভবন, সিলেটে একটি ৪ তলা ভবন এবং ঢাকায় একটি ৫ তলা ভবন রয়েছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন নিজাম উদ্দিন।

স্নাতক পাস বিএনপি মনোনীত শরিফুল হক লড়ছেন দলীয় প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে। তার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের একটিসহ মোট পাঁচটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি মামলা আদালতে বিচারাধীন। অন‌্য দুটি মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন তিনি।

পেশায় কৃষক শরিফুল কৃষিখাত থেকে ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা এবং বাড়ি ভাড়া থেকে ৬০ হাজার টাকা আয় করেন। অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে নগদ ১ লাখ টাকা, ব্যাংকে জমা ৫০ হাজার, সাড়ে ৬ লাখ টাকা মূল্যমানের ইলেকট্রনিক সামগ্রী, আসবাবপত্র এবং অন্যান্য সামগ্রী এবং স্ত্রীর ৪ ভরি সোনার অংলকারও রয়েছে।

স্থাবর সম্পত্তিতে নিজ নামে এক বিঘা কৃষি জমি, ৪ কক্ষের একটি টিনশেডের ঘর এবং ১০ শতকের একটি বাড়ি রয়েছে তার। ইসলামী ব্যাংকে নিজ নামে ১ লাখ টাকা এবং কৃষি ব্যাংকে ২ লাখ টাকার ঋণ রয়েছে।

‘নৌকা’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা আওয়ামী লীগের লুৎফুর রহমান এইচএসসি পাস। তার নামে নেই কোনো মামলা। তার কোনো পেশাও নেই। তার অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে নিজের নামে নগদ ১ লাখ টাকা, বিবাহ সূত্রে প্রাপ্ত ৬ ভরি সোনা, আড়াই লাখ টাকা মূল্যমানের ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও আসবাবপত্র রয়েছে। এছাড়া স্থাবর সম্পত্তিতে যৌথ মালিকানায় ৮ বিঘা জমি রয়েছে। ইসলামী ব্যাংকে নিজ নামে ১০ লাখ টাকা এবং কৃষি ব্যাংকে ২ লাখ টাকার ঋণ রয়েছে তার।

স্বশিক্ষিত সোহেল আমীন লড়ছেন জগ প্রতীক নিয়ে। একটি মামলার আসামি ছিলেন। তবে বিচার শেষে আদালত থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। পেশায় স্ট্যাম্প ভেন্ডার ব্যবসা। তিনি কৃষিখাত থেকে ৪০ হাজার টাকা, বাড়ি ভাড়া থেকে দেড় লাখ টাকা এবং ব্যবসা থেকে ৬০ হাজার টাকা আয় করেন।

অস্থাবর সম্পত্তিতে নিজ নামে নগদ ১ লাখ ২০ লাখ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ১০ হাজার টাকা, ২ লাখ টাকা মূল্যমানের ইলেকট্রনিক সামগ্রী, আসবাবপত্র এবং অন্যান্য সামগ্রী রয়েছে।

এছাড়া স্ত্রীর নামে ব্যাংকে জমা ৩০ হাজার টাকা এবং ২ লাখ টাকা মূল্যমানের ৫ তোলা সোনা রয়েছে। আর স্থাবর সম্পত্তিতে নিজ নামে ১৫০ শতক কৃষি জমি, স্ত্রীর নামে ৬৬ শতক কৃষি জমি, কানাইঘাটে ৪ টি টিনসেড দোকান এবং একটি বাড়ি রয়েছে। ব্যাংকে কোন ঋণ নেই তার।
দাখিল পাস কাওসার আহমেদ লড়ছেন মোবাইল ফোন প্রতীক নিয়ে। তার নামেও কোনো মামলা নেই। পেশা ব্যবসা। ব্যবসা থেকে প্রাপ্ত ২ লাখ টাকা আয় করেন। অস্থাবর সম্পত্তিতে নিজ নামে নগদ ১ লাখ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ৩ লাখ টাকা, সাড়ে ৩ লাখ টাকা মূল্যমানের ইলেকট্রনিক সামগ্রী, আসবাবপত্র এবং অন্যান্য সামগ্রী রয়েছে। স্থাবর সম্পত্তিতে নিজ নামে ২ বিঘা কৃষি জমি এবং যৌথ একটি বাড়ি রয়েছে। ব্যাংকে কোনো ঋণ নেই তারও।

স্বশিক্ষিত নজির আহমদ নির্বাচনে লড়ছেন ইসলামী আন্দোলনের হাতপাখা প্রতীক নিয়েছ। তার নামেও নেই কোনো মামলা। অস্থাবর সম্পত্তিতে নিজ নামে নগদ ৫০ হাজার টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা দেড় লাখ টাকা, ১ লাখ ২০ হাজার টাকা মূল্যমানের ইলেকট্রনিক সামগ্রী, আসবাবপত্র এবং অন্যান্য সামগ্রী রয়েছে। স্থাবর সম্পত্তিতে নিজ নামে ৪০ শতক কৃষি জমি, স্ত্রীর নামে ৩ শতক কৃষি জমি এবং যৌথ মালিকানায় ১৫ বিঘা জমি রয়েছে। ব্যাংকে কোনো ঋণ নেই।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, কানাইঘাট পৌরসভা ২০০৫ সালে গঠিত হয়। বর্তমানে এ পৌরসভা ‘খ’ শ্রেণিভুক্ত। এ নির্বাচন তৃতীয় নির্বাচন। এর আগে আরও দুটি নির্বাচন হয়েছিল পৌরসভায়। ৪৬৭৩ একর আয়তনের এ পৌরসভার ভোটার সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার।
সর্বশেষ গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী লুৎফুর রহমানকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন বিদ্রোহী প্রার্থী নিজাম উদ্দিন। এবারের নির্বাচনেও এ দুজন প্রার্থী মেয়র পদে লড়ছেন। এর বাইরে আরও ৪ জন মেয়র প্রার্থী রয়েছেন। 

এ ছাড়া ৯ ওয়ার্ডে ৩৯ জন কাউন্সিলর প্রার্থী এবং ৩টি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরের পদের জন্য ৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

সিলেট/সনি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়