কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজ: বসবাস উপযোগী হোস্টেলের কত দেরি
কাঞ্চন কুমার, কুষ্টিয়া || রাইজিংবিডি.কম
কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য দীর্ঘ দশ বছরেও তৈরি হয়নি বসবাস উপযোগী কোনো হোস্টেল। ২০১১ সাল থেকে বিভিন্ন অস্থায়ী হোস্টেলে থেকেই তারা দিন পার করে আসছেন। ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট কুষ্টিয়া সদর হাসপাতাল ভবনের পেছনে একটি পরিত্যক্ত ভবনে মেডিক্যালের পঞ্চম বর্ষের ৩২জন শিক্ষার্থী বাধ্য হয়েই ব্যবহার করছেন। এছাড়া, গণপূর্ত বিভাগের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের পরিত্যক্ত ভবনে ‘রহিমা আফসার ছাত্রী হোস্টেল’ সাইনবোর্ড লাগিয়ে নারী শিক্ষার্থীদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মেডিক্যাল কলেজ-সূত্রে জানা গেছে, গণপূর্ত বিভাগের আপত্তির পরও বসবাসের অযোগ্য এসব ভবনে অস্থায়ী ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু নির্মাণাধীন মেডিক্যাল কলেজ ৩ বছরের প্রকল্প ৯ বছরেও শেষ না হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাদের।
হাসপাতালের পেছনের ভবনে বসবাস করা ছাত্রদের একজন ৫ম বর্ষের শাহিদ আলম। তিনি বলেন, ‘আর মাত্র কয়েক দিন, পরীক্ষা দিয়ে বের হয়ে যাবো। এতদিন যখন মরিনি, যত ঝুঁকিপূর্ণ হোক, বাকি দিনগুলোও কেটে যাবে।’
একই অবস্থা ‘রহিমা-আফসার ছাত্রী হোস্টেলেরও। এই হোস্টেলের ছাত্রী অনিতা বিশ্বাস বলেন, ‘এখানে চরম ভোগান্তির মধ্যদিয়ে ৫টি বছর শেষ করলাম। এখানে নেই পানের উপযোগী জল, সৌচাগার, স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের ব্যবস্থা। দেয়াল খসে খসে পড়ছে। ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে আহত হচ্ছেন সহপাঠীরা। দুর্ভোগ আমাদের নিত্যসঙ্গী।’
হোস্টেল নির্মাণ প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, শুরুতে ৬ তলাবিশিষ্ট ছাত্রাবাসের জন্য মোট বরাদ্দ ছিল ৮ কোটি ৭ লাখ টাকা। এরমধ্যে শুধু ভবন নির্মাণব্যয় ছিল ৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। কিন্তু ৬ তলা ভিত্তির ওপর চার তলা ভবন নির্মাণেই চুক্তি হয় ৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকার। এছাড়া, আরও ১ কোটি ১১ লাখ টাকার বর্ধিত অননুমোদিত ব্যয় দেখানো হয়। এ ভবনের ভিত্তি ১০ হাজার ৫৪৫ বর্গফুট করার কথা।
একইভাবে ৬ তলাবিশিষ্ট ছাত্রী হলের জন্য বরাদ্দ ছিল ৮ কোটি ৭ লাখ টাকা। যার অনুমোদিত ব্যয় ছিল সাত কোটি ৫৫ লাখ টাকা। কিন্তু ৪ তলার ভবন নির্মাণেই চুক্তি হয় ৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকার। এই ভবনটি ১০ হাজার ৫৪৫ বর্গফুট করার কথা।
২০১৪ সালের ডিসেম্বরেই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় ২ দফায় ২ বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়। তবে, তাতেও কাজ শেষ না হওয়ায় আর সময় বাড়ানো হয়নি। ২০১৬ সালে সেপ্টেম্বরে এই সংক্রান্ত আইএমইডির এই প্রতিবেদন জমার পর পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভায় প্রকল্পটির মেয়াদ নতুন করে আর না বাড়ার শঙ্কা তৈরি হয়।
কুষ্টিয়া গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘মেডিক্যালের শিক্ষার্থীরা যেসব ভবনে বসবাস করেন, ওইসব ভবন অনেক আগেই বসবাসের অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে শিক্ষার্থীরা কিভাবে থাকেন, তা কর্তৃপক্ষ ভালো বলতে পারবে।’
মেডিক্যাল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. সরোয়ার জাহান বলেন, ‘নিরুপায় হয়ে শিক্ষার্থীদের এসব জরাজীর্ণ ভবনে রেখেছি। ’
বিষয়টি নিয়ে প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) ডা. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা তাদের মূল ক্যাম্পাসে চলে গেলে সব দুর্ভোগ লাঘব হয়ে যাবে। ইতোমধ্যে ছাত্রদের আবাসনের জন্য নির্ধারিত ১টি এবং ছাত্রীদের জন্য ১টি হোস্টেল তৈরির কাজ ৯৫ শতাংশ শেষ হয়েছে।’ শিগগিরই সমস্যার সমাধান হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
এনই
আরো পড়ুন