ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

কুষ্টিয়াজুড়ে অবৈধ যানের দৌরাত্ম্য: নিয়ন্ত্রণ পুলিশের হাতে 

কাঞ্চন কুমার, কুষ্টিয়া   || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৩২, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১৩:১৫, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১
কুষ্টিয়াজুড়ে অবৈধ যানের দৌরাত্ম্য: নিয়ন্ত্রণ পুলিশের হাতে 

কুষ্টিয়ার জেলা জুড়ে সড়ক এবং মহাসড়কে দৌরাত্ম বেড়েছে তিন চাকার যানবাহনের। এর মধ্যে বেশিরভাগই সিএনজি, ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা, শ্যালো ইঞ্জিন চালিত তিন ও চার চাকার অবৈধ যান। 

বেশিরভাগ গাড়িরই মহাসড়কে চলার কোনো অনুমতি নেই। নেই গাড়ির ফিটনেস এবং চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স। তার পরেও এসব যানবাহন মহাসড়কগুলোতে চলছে দিন-রাত। 

অভিযোগ রয়েছে কুষ্টিয়া জেলা পুলিশের কিছু অসাধু সস্যের পৃষ্ঠপোষকতায় এসব অবৈধ যানবাহনকে মহাসড়কে চলার ব্যাপারে বৈধতা দেওয়া হয়েছে। অভিনব কায়দার এসব অবৈধ যানবাহন থেকে মাসিক ভিত্তিতে টাকা নিয়ে থাকে পুলিশ। স্থানীয় কয়েকজন পুলিশের দালালের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করা হয়। একেক এলাকার জন্য একেক জন নির্ধারিত। তবে সব টাকা এক স্থানেই জড়ো হয়। এছাড়া সড়কের মোড়ে মোড়ে চাঁদাবাজি তো রয়েছেই।

এদিকে পুলিশকে টাকা দিয়ে অবৈধ যান চালানোর বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি কোনো চালকই। তবে জানা গেছে- প্রতি মাসে সিএনজি, অটোরিকশা, ফিটনেস বিহীন মাইক্রোবাস, মিনি ট্রাকগুলোর কাছ থেকে নেওয়া টাকার বিনিময়ে দেওয়া হয় মাসিক স্লিপ। যে স্লিপ থাকলে কুষ্টিয়া জেলার কোথাও পুলিশ গাড়ি ধরবে না। একে বলে মাসিক টোকেন। আবার স্পেশাল কায়দায় টোকেন ছাড়া যারা চলে, তাদের দেওয়া হয় বিশেষ কার্ড। তবে এসব কার্ডের তথ্য কিংবা টাকার কথাও বলা ভুক্তভোগীদের জন্য রীতিমতো অপরাধ।

অনুসন্ধানে জানা যায়- কুষ্টিয়া জেলা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, বিভিন্ন থানা পুলিশ প্রতিমাসে সিএনজি অটোরিকশা প্রতি ২৫০ টাকা, ফিটনেস বিহীন মাইক্রোবাস প্রতি ৬০০ টাকা, মিনি ট্রাক ৭০০ এবং স্যালো ইঞ্জিনচালিত গাড়ির ক্ষেত্রে মাসিকের পরিবর্তে প্রতিদিন একটি টোকেন মানি নিয়ে থাকে। এসব টাকার জন্য বিভিন্ন স্থানে দালাল নিযুক্ত করা রয়েছে। কুষ্টিয়া জেলা পুলিশের কিছু সদস্য সময় মতো এসব টাকা নিয়ে যান।

এছাড়াও পৌর এলাকার নাম করে এসব যানবাহনের কাছ থেকে প্রতিদিন টাকা নেওয়া হয়। বিনিময়ে দেওয়া হয় টোকেন।

কুষ্টিয়া জেলার মধ্যে চলাচলের জন্য অবৈধ যানবাহনের শুধুমাত্র টোকেনই যথেষ্ট। কিন্তু জেলার বাইরে চলাচলের জন্য প্রয়োজন হয় খোদ পুলিশের দেওয়া ভিজিটিং কার্ড। এছাড়া পর্যায়ক্রমে প্রতি রাতে থানার ডিউটি দেওয়া লাগে।

জেলা সিএনজি মালিক চালক সমিতি সূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়ার জেলার কুষ্টিয়া-বামুন্দী, কুষ্টিয়া-ভেড়ামারা, কুষ্টিয়া-পোড়াদহ, কুষ্টিয়া-কুমারখালী, কুষ্টিয়া-রূপপুর, ভেড়ামারা-দৌলতপুরসহ জেলার বিভিন্ন রুটে প্রতিদিন এক হাজার ৭০০ থেকে দুই হাজারের মতো সিএনজি চলাচল করে। একইসঙ্গে নসিমন, কমিরনসহ স্থানীয় অবৈধ যানের সংখ্যাও প্রায় ৩-৪ হাজারের মতো।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, কুষ্টিয়া জেলার সিএনজির চালক প্রতি ২৫০টাকা নিয়ে টোকেন দেন কুষ্টিয়া কাউন্টার মাস্টার মুক্তার হোসেন। তিনি নিজে স্বাক্ষর ও তারিখ দিয়ে পুলিশের অনুমতি হিসাবে দেন এসব টোকেন।

কুষ্টিয়া সদর, মিরপুর, ভেড়ামারা, কুমারখালী, খোকসা পৌর এলাকাগুলোয় পৌর রাস্তা ড্যামারেজ নামে নেওয়া হয় টাকা। দৌলতপুর উপজেলায় নেওয়া হয় উপজেলা পরিষদের নামে টাকা। এছাড়া বিভিন্ন মোড়ে রয়েছে শ্রমিক সংগঠন এবং পুলিশের প্রতিনিধিদের টাকা তোলার টোল বক্স।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন নসিমন চালক জানান, রাস্তায় চলতে গেলে পদে পদে টাকা দিতে হয়। না হলে পুলিশ পেটায়। গাড়ি কেড়ে নেয়। পেটের দায়ে রাস্তায় নামতেই হয়। সরকার হয় এসব গাড়ির অনুমোদন দিক, নাহয় গাড়ি তৈরি বন্ধ করে দিক বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিএনজি চালক বলেন, ‘বৈধ-অবৈধ বলে কিছু নেই। পুলিশকে টাকা দিলে সব বৈধ। পুলিশের দালাল হিসেবে কিছু লোক আছে ,তারাই এসব টোকেন দেয়। জেলার বাইরে যেতে হলে হাইওয়ে পুলিশের বিশেষ কার্ড নেওয়া লাগে। আর এসব টাকার কোনো হদিস নেই। কারণ, সবই তো অবৈধ। আমাদের কথা বললে কালকেই পুলিশ পেটে লাথি দিয়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেবে।’

কুষ্টিয়া সিএনজি সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুক্তার হোসেন বলেন, ‘আমি কুষ্টিয়া-খলিসাকুন্ডি, কুষ্টিয়া-ভেড়ামারা রুটে ১১০টি সিএনজি কন্ট্রোল করি। এগুলোর হিসেব আমি দিতে পারি। কোনো সিএনজি চালক বলতে পারবে না যে আমরা টাকা নেই।’ 

পুলিশ পাশ হিসেবে ব্যবহৃত এমন একটি পুলিশের ভিজিটিং কার্ড পাওয়া যায়। এসআই আবুল কালাম আজাদ নামে।

বিষয়টি নিয়ে এসআই আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমি টাকার বিনিময়ে কোনো কার্ড দিই না। আমার কার্ড নিয়ে যদি কেউ অবৈধ কাজ করে, তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কুষ্টিয়া হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ জুলহাস উদ্দিন বলেন, ‘মহাসড়কে অবৈধ যান চলাচল বন্ধের জন্য আমরা চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসন থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নেওয়া হয়েছে। খুব শিগগিরই এগুলো বন্ধের জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হবে।’

কুষ্টিয়া বিআরটিএ এর সহকারী পরিচালক এটিএম জালাল উদ্দিন বলেন, ‘অবৈধ যানবাহন সড়কে চলতে দেওয়া যাবে না। এগুলো জেলা প্রশাসন দেখেন।’

কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফরহাদ হোসেন খাঁন বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে ঐসব পুলিশ কর্মকর্তা কিংবা সে যেই হোক না কোনো, তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 
 

ঢাকা/সনি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়