ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

মুন্সীগঞ্জ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও মিশুকের দখলে 

শেখ মোহাম্মদ রতন, মুন্সীগঞ্জ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০২, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১০:০৬, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১
মুন্সীগঞ্জ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও মিশুকের দখলে 

মুন্সীগঞ্জ জেলার সব সড়ক এখন ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা ও মিশুকের দখলে। অনুমোদন ও লাইসেন্স ছাড়াই শহরের প্রধান সড়ক ছাপিয়ে অলিগলিতে চলছে এসব যানবাহন। দিনের পর দিন এসব যাবাহনের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এতে নিত্য যানজটের কবলে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। 

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, শুধুমাত্র মুন্সীগঞ্জ ও মীরকাদিম পৌরসভায় রয়েছে এসব অবৈধ যানবাহন তৈরির প্রায় পাঁচশতাধিক কারখানা। সদর উপজেলাসহ ছয় উপজেলায় দুই সহস্রাধিক অবৈধ ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা ও মিশুক চলছে। এসব পরিবহনের বেপরোয়া গতির কারণে প্রতিদিন দুর্ঘটনা ঘটছে। এসব যানবাহনের মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় সাধারণ মানুষ এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেও কোনো সুফল পাচ্ছেন না। 

জেলা শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে রয়েছে অর্ধশত অটোরিকশা তৈরির কারখানা। সদর উপজেলার মীরকাদিম পৌরসভার সিপাহিপাড়া, গোয়ালঘুন্নিসহ গোটা জেলার বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে প্রায় দুই হাজার অটোরিকশা, ব্যাটারি চালিত মিশুক তৈরির ওয়ার্কসপসহ ছোট-বড় বেশ কয়েকটি অবৈধ স্যালো ইঞ্জিন চালিত যানবাহন তৈরির কারখানা। কিন্তু এসব কারখানায় যানবাহন তৈরির সরকারি কোনো অনুমতি নেই। নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র।

ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও মিশুক তৈরি কারখানার একজন শ্রমিক বলেন, আমরা প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৩৫টি ইঞ্জিনভ্যান, ব্যাটারিচালিত অটোভ্যান, মিশুক, নসিমন, করিমন তৈরি করি। একটি ইঞ্জিনভ্যান তৈরি করলে খরচ বাদে মালিকের লাভ হয় প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। 

এদিকে, ব্যাটারি চালিত এসব যানবাহনের ব্যাটারি চার্জ দেওয়ার জন্য গ্যারেজ তৈরি করে অবৈধভাবে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ পল্লী বিদ্যুতের সদর জোনাল অফিসের ডিজিএম শফিউল আলম বলেন, বিদ্যুৎ বিতরণের ক্ষেত্রে এসব অবৈধ সংযোগের অভিযোগ পেয়েছি। আমরা একটি সার্চ কমিটির মাধ্যমে এর তদারকি করছি। আশা করছি খুব দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মুন্সীগঞ্জ পল্লী বিদ্যুতের সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার এ.এইচ.এম মোবারক উল্লাহ বলেন, সদর উপজেলাসহ ছয় উপজেলার মধ্যে প্রায় এক হাজার ব্যাটারি চালিত অটোগাড়ির গ্যারেজ রয়েছে। এসব গ্যারেজে বৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে ব্যাটারি চার্জ করছে। আমি বিষয়টি জেনেছি। তাই আমরা গত ছয় মাস ধরে প্রতিদিন বিভিন্ন উপজেলায় একাধিক টিম করে দিয়েছি। এ্ই টিম প্রতিদিন অভিযান চালিয়ে গজারিয়া ছাড়া বাকি পাঁচ উপজেলার শতাধিক অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্নসহ জরিমানা আদায় করেছে।

মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ফয়সাল বিপ্লব বলেন, ব্যটারি চালিত এসব অটো ও মিশুকের কারণে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ এখন রাস্তায় চলাচল করতে ভয় পায়। প্রতিদিনই মানুষ দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। আমি পৌর মেয়র হয়ে জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারসহ সুশিল সমাজকে এ বিষয়ে দ্রুত ঐক্যবদ্ধ হয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করছি।

সহকারী কমিশনার ভূমি শেখ মেজবাউল সাবেরিন বলেন, অটোরিকশা, ইঞ্জিন চালিত থ্রি-হুইলার বা এ ধরনের যানবাহন মহাসড়কে চলার অনুমতি নেই। এগুলো এভাবে তৈরি করারও কোনো নিয়ম নেই। এটা সম্পূর্ণ অবৈধ। এর বিরুদ্ধে অবশ্যই মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

মুন্সীগঞ্জ জেলা ট্রাফিক পুলিশের ইনচার্জ ফজলুর রহমান বলেন, স্থানীয়ভাবে এসব যানবাহন তৈরি বন্ধ করা যায় তাহলে অবৈধ ব্যাটারি চালিত মিশুক ও অটোগাড়িসহ নসিমন করিমন বন্ধ হবে।

সহকারী পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মোহাম্মদ নাজমুল রায়হান বলেন, মুন্সীগঞ্জ সদরে প্রায় আড়াই হাজার ব্যাটারি চালিত অবৈধ মিশুক, অটোরিকশা রয়েছে। যা দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। এসব অবৈধ যানবাহন যদি এখনই গতিরোধ করা না যায়, তাহলে সমস্যা বাড়বেই। এছাড়া, মুন্সীগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের কোনো সদস্য যদি এসব যানবাহন চলাচলের সহযোগিতা করে- অভিযোগ পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান তালুকদার বলেন, জেলায় এসব যানবাহন চলাচলের সরকারি অনুমোদন নেই। আমি জেলার মুন্সীগঞ্জ পৌরসভা ও মীরকাদিম পৌরসভার মেয়রসহ ইউনিয়ন পষিদের চেয়ারম্যান মেম্বার ও সদর উপজেলাসহ ছয়টি উপজেলার জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে জরুরি সভা করে আইনগত ব্যবস্থা নেবো। এসব বাহনদের বিরুদ্ধে সবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে পদক্ষেপ নিলে এর সঠিক সমাধান করা সম্ভব বলে আমি মনে করি।
 

ঢাকা/সাইফ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়