ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

মহসড়কে ব‌্যাটারিচালিত রিকশা-নসিমন, বাড়ছে প্রাণহানি

এনাম আহমেদ, বগুড়া || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:১৫, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১৫:২১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১
মহসড়কে ব‌্যাটারিচালিত রিকশা-নসিমন, বাড়ছে প্রাণহানি

বগুড়ায় সড়ক-মহাসড়কে অবাধেই চলছে ৩ চাকার বাহন নসিমন, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও ইজিবাইক। এতে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হয়ে সারাজীবনের জন‌্য কেউ কেউ পঙ্গু হয়ে পড়ছেন। কেউ কেউ হারাচ্ছেন প্রাণ। সচেতন মহলের অভিযোগ—ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশের দায়িত্বে অবহেলার কারণে এসব যানবাহন সড়ক-মহাসড়কে চলছে। তারা বলছেন, সড়ক-মহাসড়ককে তিন চাকার বাহন মুক্ত রাখতে হলে কঠোর নজরদারির দরকার। এদিকে হাইওয়ে ও ট্রাফিক পুলিশ বলছে, দায়িত্বে কোনো অবহেলা নেই। বেশিরভাগ সময় চালকরা পুলিশের চোখে ফাঁকি দিয়ে মহাসড়কে গাড়ি চালান।
   
তবে, ঢাকা-বগুড়া, বগুড়া-রংপুর, নাটোর-বগুড়া ও সান্তাহার মহাসড়কে সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রচুর তিন চাকার বাহন। অবাধে চলছে সবুজ রঙের তিন চাকার সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা-ইজিবাইক, অটোভ্যান ও নসিমন। মুহূর্তের জন্যও তিন চাকার যান শূন‌্য ছিল না এসব মহাসড়ক।

বগুড়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের তথ‌্য বলছে, এসব যানবাহনের কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বাড়ছে। বগুড়া জেলায় ২০২০ সালে মোট ৪৫৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় নারী-শিশু-পুরুষ মিলে প্রাণ গেছে ৫৬ জনের। আহত হয়েছেন ৬১০ জন। এর মধ্যে তিন চাকার যানবাহনে দুর্ঘটনার পরিমাণ ৯৩টি। এই সংখ্যক দুর্ঘটনায় প্রাণ ৮ হারিয়েছেন ৮ জন। আর আহত হয়েছেন ১৩১ জন। আহতদের অনেকেই হাত-পা হারিয়ে পঙ্গু জীবনযাপন করছেন।

বগুড়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক আব্দুল হামিদ বলেন, ‘৩ চাকার নসিমন, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা-ইজিবাইক, ভ্যানের চালকরা প্রশিক্ষণ ছাড়াই মহাসড়কে নামেন।  তারা অনেক সময় সিগন‌্যাল বুঝতে পারেন না। এছাড়া এসব যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করার মতো স্টিয়ারিং ব্যবস্থা ও মানসম্মত ব্রেক নেই। যে কারণে দুর্ঘটনা ঘটে।’ তিনি বলেন, ‘মহাসড়কগুলোতে ৩ চাকার এসব যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশের।’

বগুড়ার সড়কে চলছে ব‌্যাটারিচালিত রিকশা

মহাসড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ ৩ চাকার যানবাহন চলাচলের বিষয়টি স্বীকার করেন বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথোরিটি বগুড়া কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘এগুলো দেখার দায়িত্ব পৌরসভার ভেতরে ট্রাফিক পুলিশের। আর বাইরে হাইওয়ে পুলিশের। মহাসড়কে এই যানগুলোর চলাচল কেন নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না, এটা তারাই ভালো বলতে পারবে। তবে আমাদের পক্ষ থেকে মাঝেমধ্যে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। তখন দুই-একটা পেলে জরিমানা করা হয়।’ 

বগুড়া-নাটোর মহাসড়কে ৩ চাকার বাহন চলার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন বগুড়ার কুন্দারহাট হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘যারা মহাসড়কে ৩ চাকার গাড়ি চালাচ্ছেন, তারা পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়েই চালাচ্ছেন।  নাটোর-বগুড়া মহাসড়ক এরিয়ায় আমাদের মধ্যে ৩২ কিলোমিটার রাস্তা পড়েছে। এর মধ্যে ২২টি সংযোগ সড়ক। আমাদের একটি মাত্র টহল গাড়ি।  এত বিশাল রাস্তায় একটি মাত্র টহল গাড়ি দিয়ে কী করে এসব ৩ চাকার যান চলাচল রোধ করা যায়?’

ওসি বলেন, ‘প্রত‌্যেক মোড়ে তো আর পুলিশ দেওয়া যাচ্ছে না। এই যানগুলো যেন মহাসড়কে চলাচল না করে, সে জন্য আমরা আটক করছি, মামলা দিচ্ছি। তারা মামলার জরিমানা পরিশোধ করে আবার ছাড়িয়েও নিয়ে যাচ্ছেন। গত মাসে ২৭২টা যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গাড়ি আটক করে মামলা দেওয়া একটি স্ট্রং পদ্ধতি। এর আগে যানবাহন ধরার পর ২ মাস করে আটক আদেশ ছিল। সেই আইন পরিবর্তন করে ইনস্ট্যান্ট ডিজিটাল পদ্ধতিতে মামলা ও জরিমানার বিধান করা  হয়েছে।  এরফলে তারা মামলার পর জরিমানা দিয়ে গাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন।’

তবে টাকার বিনিময়ে নিয়ে গাড়ি ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে ওসি বলেন, ‘এটা একটা ডাহা মিথ্যা কথা। এ ধরনের কাজ করার কোনো সুযোগই নেই।’

বগুড়া শেরপুর হাইওয়ে থানার ওসি একেএম বানিউল আলম বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন ১০-১৫টি করে ৩ চাকার যানবাহন আটক করছি। মামলা দিচ্ছি। এরপরও আমাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে চলছে।  আমাদের যে জনবল, তা দিয়ে লিচুতলা বাইপাস থেকে চান্দাইকোনা বগুড়া বাজার পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার পথে নজরদারি সম্ভব নয়।’ 

শেরপুর হাইওয়ে থানার ওসি আরও বলেন, ‘আমি গত ৫ জানুয়ারি থেকে থানায় জয়েন করেছি। এই এক মাসে ৩৫০ গাড়ি আটক করে মামলা দেওয়া হয়েছে। এরপর মালিকরা ইউক্যাশে টাকা জমা দিয়ে গাড়ি ছাড়িয়ে নিয়ে গেছেন। এরপর তারা আবারও চুরি করে মহাসড়কে গাড়ি চালাচ্ছেন। এই পর্যন্ত অনেকে ৩ বার ৪ বারও ধরা পড়েছেন। নিদের্শনা অনুযায়ী আমরা গাড়ি ধরছি, মামলা দিচ্ছি, জরিমানা দিলে গাড়ি ছাড়া হচ্ছে। এই পর্যন্তই আমাদের আইন প্রয়োগ করার অনুমতি আছে। আমরা সে অনুযায়ী আইনের প্রয়োগ করছি। আমাদের তো আর অনুমতি নেই যে গাড়ির চাকা কেটে ফেলে দেওয়ার!’

বগুড়া হাইওয়ে পুলিশ সুপার সামছুল আলম সরকার বলেন, ‘আমাদের আসলে জনবলের সংকট রয়েছে। তারপরও নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছি। আজকে বগুড়া রিজিওন থেকে শতাধিক সিএনজিচালিত অটোরিকশা আটক করে মামলা দেওয়া হয়েছে।’ পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে বলেও তিনি জানান।

বগুড়া/এনই

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়